কলকাতা: প্রথমে তিনি তাঁর ছবি দেখতেন ভালবেসে, মুগ্ধতায়। কিন্তু কখনও ভাবেননি, সেই পরিচালকের চরিত্রকে তাঁকে ফুটিয়ে তুলতে হবে পর্দায়। অভিনয়ের মাধ্যমে। যাঁকে তিনি শ্রদ্ধা করতেন তাঁর পরিচালকসত্ত্বার জন্য, সেই মানুষের ব্যক্তিসত্ত্বাকে, দর্শনকে চেনার সেই তো শুরু। জীবনের প্রথম বায়োপিক... ভয় পেয়েছেন, প্রস্তুতি নিয়েছেন, চিনেছেন, অনুধাবন করেছেন বাংলা চলচ্চিত্র জগতের এক কিংবদন্তিকে। মৃণাল সেনের (Mrinal Sen) জন্মদিন উপলক্ষ্যে নিজের উপলদ্ধি দিয়ে পরিচালকের ছবি আঁকলেন পর্দার মৃণাল.. চঞ্চল চৌধুরী (Chanchal Chowdhury)। সাক্ষী থাকল এবিপি লাইভ (ABP Live)।


মৃণালরূপী চঞ্চলকে দেখে মুগ্ধ দুই বাংলা। কিন্তু এ তো শুধু লুক। জীবনের প্রথম বায়োপিকে মৃণাল সেনকে ফুটিয়ে তোলা কতটা গুরুদায়িত্ব ছিল তাঁর কাছে? চঞ্চল বলছেন, 'আমার খুব একটা বায়োপিকে কাজ করার ইচ্ছা ছিল না। কারণ কোনও মানুষের জীবনকে পর্দায় ফুটিয়ে তোলা যেমন কঠিন.. ছবিটা দেখে হয়তো অনেকেই বলতে পারেন, সঠিক হয়নি। তাই প্রথমে একটু ভয়ও পেয়েছিলাম। তবে, সৃজিত মুখোপাধ্যায় এই চরিত্রতে আমি ছাড়া আর কাউকে ভাবতে নারাজ। শেষমেষ রাজি হই। যদি মানুষের ভাল লাগে.. সেটার কৃতিত্ব পরিচালকের।'


মৃণাল সেনের ছবি দেখেননি, মুগ্ধ হননি, এমন বাঙালি মেলা ভার। এই তালিকার বাইরে নন চঞ্চলও। বলছেন, 'আমি বাঙালি, সিনেমাপ্রেমী। সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন... আমি বিশ্বাস করি ওঁরাই বাংলা ছবির পথপ্রদর্শক। ওঁরা বাংলা ছবিকে যে উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন, তার ফলই আমরা এখন পাচ্ছি। ছবি দেখার সময় দর্শক হিসেবে লক্ষ্য করতাম মৃণাল সেনের ছবি তৈরি ধারা, কাস্টিং। কিন্তু যখন পর্দায় ওঁর চরিত্রকে ফুটিয়ে তুলতে হবে.. তখন শুরু হল ওঁকে নতুন করে চেনা।'


সেটা কেমন ছিল? চঞ্চল বলছেন, 'মৃণাল সেনের জন্ম ফরিদপুরে। তারপর কলকাতায় আসা, ছবি তৈরির জন্য লড়াই.. এ সবই আমায় জানতে হয়েছে গভীরে গিয়ে। একসময় মেডিক্যাল রিপ্রেজেনটেটিভ হিসেবে কাজ করতেন মৃণাল সেন। ওঁর সিনেমা খুব মন দিয়ে লক্ষ্য করলে বোঝা যায়, ওঁর ছবি তৈরির একটা ধরণ আছে। মৃণাল সেনের ছবিতে উঠে এসেছে সেকালের কলকাতা, খেটে খাওয়া মানুষদের জীবনের খুঁটিনাটি। ওই সময়ে দাঁড়িয়ে কলকাতার সাধারণ মানুষের জনজীবনকে অতটা জীবন্ত করে ফ্রেমবন্দি করতে পারেননি কেউই। ওঁর কাজের পিছনে একটাই দর্শন ছিল। সেটা হল মানুষ। উনি সাধারণ মানুষের জীবনকে রুপোলি পর্দায় তুলে ধরার জন্য লড়াই করে গিয়েছেন চিরকাল। ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে পারবারিক জীবন, মৃণাল সেন সারা জীবন ধরেই লড়াই করে গিয়েছেন।'


একের পর এক মাস্টারপিস.. মৃণাল সেনের কোন ছবি সবচেয়ে বেশি ছুঁয়ে যায় পর্দার মৃণালকে? অভিনেতা বলছেন, 'ওঁর এতগুলো ছবির মধ্যে থেকে আলাদা করে কোনোটা আমি বেছে নিতে পারব না। তবে যেটা আমি লক্ষ্য করেছি, ওঁর ছবি তৈরির মধ্যে একটা অদ্ভূত ধারাবাহিকতা রয়েছে। ওঁর চলচ্চিত্র নির্মাণে যে সময়কাল, যে বাস্তবচিত্র ফুটে উঠেছে, সেটা অতুলনীয়। যে সময়ে যে গল্পটা নিয়ে উনি কাজ করার প্রয়োজন মনে করেছেন, উনি করেছেন। আমরা ছন্নছাড়া কাজ করি। কিন্তু ওঁর কাজের শুরু থেকে শেষের মধ্যে একটা অদ্ভুত ধারাবাহিকতা রয়েছে যা আমার মুগ্ধ করে।'


 


আরও পড়ুন: Unknown Stories about Satyajit Roy: কাশীর গলিতে মধ্যরাতে ফেলুদার সঙ্গে শ্যুটিং, সত্যজিতের স্মৃতি নিয়ে আজও দাঁড়িয়ে নিমতিতা রাজবাড়ি


আরও পড়ুন:Satyajit Roy's Shooting Story: বরফে হারাল যাদু জুতো, মরুভূমিতে মরীচিকা দেখেছিল গুপী-বাঘা? সত্যজিতের শ্যুটিং-কথা