নয়াদিল্লি: কয়েক বছর ধরে টানা সারা বিশ্বজুড়ে দাপট দেখাচ্ছে কোভিড। একের পর এক কোভিড ঢেউয়ে কার্যত দিশেহারা হয়েছিল বিভিন্ন দেশ। বহু মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যুও হয়েছে বহু মানুষের। দীর্ঘ গবেষণার পরে কোভিডের সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য আসে কোভিড টিকা। পরপর একাধিক সংস্থা টিকা আনে বাজারে। কোভিডের বিপদ থেকে বাঁচতে টিকাই যে আসল অস্ত্র তা বারবার বলেছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু অনেক দেশেই টিকা সহজলভ্য যেমন ছিল না। তেমনই টিকা নিতে গররাজি বাসিন্দাও ছিল বহু।
এখন ফের ভয় ধরাচ্ছে ওমিক্রনের নয়া সাব ভ্যারিয়েন্ট। ঠিক এমন সময়েই ভারতের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে সামনে এসেছে কোভিডের বুস্টার ডোজে অনীহার ভয়াবহ ছবি। পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে বাসিন্দারা কোভিড বুস্টার না নেওয়ায় নষ্ট হয়ে গিয়েছে বিপুল পরিমাণ কোভিড ডোজ। সম্প্রতি এমন ঘটনাই সামনে এসেছে।
যদিও সম্প্রতি একটি সমীক্ষা কিছুটা হলেও আশার ছবি দেখিয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, বিশ্বজুড়ে কোভিডের টিকা মেনে নেওয়ার সংখ্যা বেড়েছে। ২০২১ সালে যা ৭৫.২ শতাংশ ছিল, ২০২২ সালে তা দাঁড়িয়েছে ৭৯.১ শতাংশে। ২৩টি দেশজুড়ে এই সমীক্ষা হয়েছে। বিশ্বের অন্তত ৬০ শতাংশ জনসংখ্যা ওই ২৩টি দেশেই রয়েছে। যদিও ৮টি দেশে টিকাকে মান্যতা দেওয়ার প্রবণতা কমেছে। বেশ কিছু কমবয়সীদের ক্ষেত্রেও এই প্রবণতা দেখা গিয়েছে। তাঁরা বুস্টার ডোজ নিতে বিশেষ উৎসাহী নন, এমন তথ্য মিলেছে।
কারা করেছে সমীক্ষা:
স্পেনের বার্সেলোনা ইন্সিটিটিউট ফর গ্লোবাল হেলথ (Barcelona Institute for Global Health) এবং আমেরিকার সিটি ইউনিভার্সিটি অফ নিউ ইয়র্ক গ্র্যাজুয়েট স্কুল অফ পাবলিক হেলথ অ্যান্ড হেল্থ পলিসি (CUNY SPH)- মিলে এই সমীক্ষা চালিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বারবার বলে এসেছেন কোভিড মহামারির বিপদ এখনও পুরোপুরি কাটেনি। কোভিড ঠেকাতে গেলে প্রয়োজন সামগ্রিক টিকাকরণের। কিছু টিকায় অনীহার ছবিও স্পষ্ট বিভিন্ন জায়গায়। কোভিড সচেতনতার অংশ হিসেবে সেই অনীহা মেটানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে প্রথম থেকেই। সেই কাজ করতে গেলে প্রয়োজন তথ্য। টিকায় অনীহা কেন, মূলত কাদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি, কী কী কারণে অনীহার মতো বিষয়টিকে প্রভাবিত করছে, কোন বিষয়ের জন্য টিকার উপর ভরসা করার প্রবণতা তৈরি করছে-এমন সব তথ্য জানা প্রয়োজন। সেগুলি পেতেই এমন সমীক্ষার ভাবনা। CUNY SPH-এর ডিন আয়মান -এল মোহনদিস (Ayman El-Mohandes)-এবং Lazarus-এর নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক স্তরে বিভিন্ন ক্ষেত্রের সহায়তায় একটি সমীক্ষা হয়। মহামারিতে ভীষণভাবে আক্রান্ত হয়েছিল এমন ২৩টি জনবহুল দেশে এই সমীক্ষা চলে।
কোথায় কোথায় সমীক্ষা:
ব্রাজিল, কানাডা, চিন, ইকুয়েডর, ফ্রান্স, জার্মানি, ঘানা, ভারত, ইতালি, কেনিয়া, মেক্সিকো, নাইজেরিয়া, পেরু, পোল্যান্ড, রাশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ আফ্রিকা, দক্ষিণ কোরিয়া, স্পেন, সুইডেন, তুরস্ক, ইংল্যান্ড, আমেরিকা- এই ২৩টি দেশে ২০২০ সাল থেকে ২০২২ সালের জুন-জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপে সমীক্ষা হয়।
সর্বশেষ ধাপে যে সমীক্ষা হয়েছে। তাতে মোট ২৩ হাজার বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। প্রতি দেশে থেকে ১ হাজার জন। সেখানে দেখা গিয়েছে ৭৯.১ শতাংশ টিকার উপর ভরসা রাখছেন। যা ২০২১ সালের জুন থেকে ৫ শতাংশ বেশি। শিশুদের টিকাকরণ নিয়েও অভিভাবকদের মধ্যে উৎসাহ বেড়েছে। ২০২১ সালে ছিল ৬৭.৬ শতাংশ, ২০২২ সালে তা হয়েছে ৬৯.৫ শতাংশ। যদিও কিছু কিছু দেশে টিকার অনীহা বাড়তে দেখা হিয়েছে। ইংল্যান্ডে যেখানে সেই হার ১ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকায় তা ২১ শতাংশের মতো।
বুস্টারে অনীহা:
টিকা নিয়েছে, কিন্তু বুস্টার ডোজ নিতে চান না, এমন লোকের সংখ্যাও রয়েছে। টিকা নেওয়া লোকেদের অন্তত ১২ শতাংশের মতো লোক বুস্টারে অনীহা প্রকাশ করেছেন। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই কমবয়সী, মূলত ১৮-২৯ বছরের মধ্যে।
সংবাদ সংস্থা পিটিআই সূত্রে খবর, CUNY SPH-এর ডিন আয়মান -এল মোহনদিস (Ayman El-Mohandes) বলেছেন, 'এই তথ্য়ের খোঁজ চালিয়ে যেতে হবে, কেন অনীহা তা জেনে সেইভাবে সচেতনতার প্রসার করতে হবে। নয়তো ভবিষ্যতে তা কোভিড-লড়াইয়ে সমস্য়া তৈরি করবে।'
এই সমীক্ষায় আরও কিছু জিনিসে লক্ষ্য রাখা হয়েছে। কোভিড সংক্রান্ত চিকিৎসায় কী কী ওষুধ ব্যবহার করা হয়েছে। আগের তুলনায় কোভিড বিধির দিকে নজরদারি কমেছে না কি বেড়েছে সেগুলিও খোঁজা হয়েছে।
আরও পড়ুন: সরব নোয়াম চমস্কি, নিশানায় বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রাষ্ট্রপতিকে চিঠি শিক্ষাবিদদের