কলকাতা: স্ট্রোক শুধু একজন মানুষেরই নয়, গোটা একটা পরিবারের ভবিষ্যতের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। কোনও ব্যক্তি স্ট্রোকে (Stroke) আক্রান্ত হলে তিনি সারাজীবনের জন্য পঙ্গু পর্যন্ত হয়ে যেতে পারেন। গবেষকরা জানাচ্ছেন, আমাদের দেশে প্রতি এক লক্ষ মানুষের মধ্যে ১১৯ থেকে ১৪৫ জন ব্যক্তি স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। এছাড়াও প্রতিবছর ১.৪৪ থেকে ১.৬৪ মিলিয়ন মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। বিশেষজ্ঞ জানাচ্ছেন, অনেক সময়ই স্ট্রোকের উপসর্গ এবং লক্ষ্যণগুলির দিকে আমরা খুব একটা নজর দিই না। আর তার ফলেই স্ট্রোকের শিকার হতে হয় বহু মানুষকে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, অনেক সময় উপসর্গ হিসেবে মৃদু স্ট্রোক দেখা দেয়। কিন্তু সেই মৃদু স্ট্রোক অবহেলা বা অগ্রাহ্য করার কারণেই পরবর্তীকালে ম্যাসিভ স্ট্রোকের শিকার হতে হয়। গবেষকদের মতে, প্রায় ৩৩ শতাংশ মানুষ মৃদু স্ট্রোক দেখা দেওয়ার পরও সঠিক চিকিতসা না হওয়ার জন্য পরবর্তীকালে স্ট্রোকের শিকার হয়েছেন।
মৃদু স্ট্রোকের কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞ জানাচ্ছেন, যখন কোনও ব্যক্তির মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ হয়ে যায়, তখন মৃদু স্ট্রোক দেখা দেয়। এই সময়টা পাঁচ মিনিটেরও কম বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, মৃদু স্ট্রোক হয়তো শরীরের বিশেষ কোনও ক্ষতি করে না সেই মুহূর্তে, কিন্তু তার সঠিক চিকিতসা না হলে পরবর্তীকালে বড়সড় স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বাড়িয়ে দেয়।
স্ট্রোকের সঙ্গে মৃদু স্ট্রোকের পার্থক্য কী?
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, যখন মস্তিষ্কের ধমনীতে রক্ত জমাট বাঁধে স্বল্প সময়ের জন্য, তখন মস্তিষ্কে অক্সিজেনের সরবরাহ প্রক্রিয়াতেও প্রভাব পড়ে। তখনই মৃদু স্ট্রোক দেখা দেয়। যদিও মৃদু স্ট্রোক হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই আবার মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ সঠিক হয়ে যায়। কিন্তু যদি দীর্ঘক্ষণ মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ থমকে যায়, বা রক্ত জমাট বেঁধে যায়, তাহলে মস্তিষ্কে অক্সিজেন চলাচলও একেবারে থমকে যায়। এর ফলেই বড় স্ট্রোক দেখা দেয়। যা মারাত্মক আকার নিতে পারে। কখনও কখনও তা প্রাণঘাতীও হয়ে ওঠে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি পরিবারের ইতিহাসে আগেও স্ট্রোক আক্রান্ত কেউ থেকে থাকেন, তাহলে সেই ব্যক্তির স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়াও, যাঁদের ওবেসিটি, উচ্চরক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল, মধুমেহ এবং বিভিন্ন হৃদরোগের সমস্যা রেয়ছে, তাঁদেরও স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বিশেষজ়্দের মতে, অনিয়মিত লাইফস্টাইল, মদ্যপান, ধূমপান, উচ্চ কোলেস্টেরল সম্পন্ন খাবার খাওয়ার প্রবণতা স্ট্রোকের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেয়।
স্ট্রোকের লক্ষণগুলি কী কী?
১. বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে আক্রান্ত ব্যক্তির মুখ একদিকে ঝুঁকে পড়ে। হাসতেও সমস্যা হলে বুঝতে হবে তিনি স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন।
২. কোনও কথা বুঝতে, বলতে কিংবা উচ্চারণ করতে যদি কারও সমস্যা হয়।
৩. স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে হাত তোলার ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা দিতে পারে।
কীভাবে প্রতিরোধ করা যায় স্ট্রোকের সমস্যা?
১. বিশেষজ্ঞদের মতে, স্ট্রোক প্রতিরোধ করতে প্রথমেই তামাকজাতীয় পদার্থ সেবন করা বন্ধ করে দেওয়া দরকার।
২. একটা সিগারেট বহু সময়েই অনেকে একসঙ্গে খেয়ে থাকেন, এই অভ্যাসও পরিবর্তন করা প্রয়োজন।
৩. খাদ্যাভ্যাসের উপর স্ট্রোক প্রতিরোধ অনেকটাই নির্ভর করে। তাই বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বাস্থ্যকর খাবার তালিকায় রাখা দরকার। নিয়মিত টাটকা ফল এবং সব্জিও রাখতে হবে তালিকায়।
৪. অত্যধিক পরিমাণে নুনের ব্যবহার কমাতে হবে।
আরও পড়ুন - Health Tips: রোজ অন্তত ৮ ঘণ্টা না ঘুম হলে কী হবে?
৫. প্রতিদিন শরীরচর্চা করা প্রয়োজন।
৬. মাদকজাতীয় দ্রব্য ত্যাগ করা দরকার।
৭. শরীরের ওজনও নিয়ন্ত্রণে রাখা দরকার।
৮. হৃদরোগ, মধুমেহ রোগের চিকিত্সা সঠিক সময়ে করানো দরকার।
ডিসক্লেইমার : কপিতে উল্লেখিত দাবি, পদ্ধতি পরামর্শস্বরূপ। প্রয়োজনীয় চিকিৎসাপদ্ধতি/ডায়েট ফলো করার জন্য অবশ্যই বিশেষজ্ঞ / চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন ও সেইমতো নিয়ম মেনে চলুন।