কলকাতা: কাজ থেকে ফিরে মাথাব্যথা (headache)? রাতে ঠিকঠাক ঘুম হচ্ছে না? সকাল-বিকেল খিটখিটে মেজাজ (short temper) বা রক্তচাপ (high BP) কমার নামগন্ধ নেই? কম-বেশি এসব সমস্যা আমাদের অনেকেরই চেনা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এগুলির নেপথ্যে বহু ক্ষেত্রেই 'ভিলেন' 'ওয়ার্কপ্লেস স্ট্রেস' (Work Place Stress) বা কর্মক্ষেত্রে স্ট্রেস। আমরা যদিও বেশিরভাগ সময়ই এসবে আমল দিই না। যদিও তাতে হিতে বিপরীতের আশঙ্কা ষোলো আনা, মনে করেন চিকিৎসকরা (doctors)।


কর্মক্ষেত্রে স্ট্রেস কী?
সহজ করে বললে, কাজ বা আনুষঙ্গিক বিভিন্ন কারণে যে স্ট্রেস তৈরি হয় তারই নাম 'ওয়ার্কপ্লেস স্ট্রেস'। আমেরিকান সাইকোলজিকাল অ্যাসোসিয়েশনের বা APA-র তরফে কর্মক্ষেত্রে স্ট্রেসের কিছু নির্দিষ্ট উপসর্গের কথা বলা হয়েছে। বিশেষত এই অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে যেতে হলে মাথাব্যথা, পেটে যন্ত্রণা, নিদ্রাহীনতা, খিটখিটে মেজাজ, মনোযোগের সমস্যা, উদ্বেগ, উচ্চ রক্তচাপ, দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে মনে করে APA। ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রির মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সুজিত সরখেল আবার জানালেন, সময়মতো ওয়ার্কপ্লেস স্ট্রেসের ঠিকঠাক সুরাহা না হলে অবসাদ পর্যন্ত তৈরি হতে পারে। সঙ্গে আরও কিছু বিপদের আশঙ্কা রয়েছে। কী রকম?


ক্ষতি শরীরে...
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অরিন্দম বিশ্বাসের মতে, অল্পবয়সী চাকুরিজীবীদের বড় অংশের মধ্যে ডায়াবিটিস এবং স্থূলতার সমস্যা বাড়ছে। এর অন্যতম কারণ কর্মক্ষেত্রে বিপুল স্ট্রেস। তাঁর কথায়, 'কাজের  চাপে অনেকেই দীর্ঘক্ষণ নিজের সিট ছেড়ে উঠতে পারেন না। কাজ হোক বা খাওয়াদাওয়া, সবটাই একই জায়গায় বসে করতে হয়। ফল? স্থূলতা ও ডায়াবিটিসের বাড়বৃদ্ধি।' হাইপারটেনশন ও কার্ডিওভাস্কুলার নানা সমস্যার বাড়বাড়ন্তের নেপথ্যে কর্মক্ষেত্রে স্ট্রেসই যে অন্যতম বড় 'ভিলেন', তাও মনে করালেন চিকিৎসক বিশ্বাস। কার্যত একসুর মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সুজিত সরখেলও। পাশাপাশি তাঁর সংযোজন, 'স্ট্রেস কমাতে অনেকে মদ ও সিগারেটের উপর ভরসা করতে শুরু করেন। যাতে আখেরে ক্ষতি লাংস ও লিভারের।' কেউ কেউ আবার অতিরিক্তি খাওয়াদাওয়াও শুরু করে দেন। সবটার ধাক্কা গিয়ে পড়ে শরীরে। 


কতটা ভয়ঙ্কর?
'ওয়ার্কপ্লেস স্ট্রেস' কথাটি শুনতে বিজাতীয় হলেও সমস্যাটি কিন্তু আর কোনও সাত সমুদ্র তেরো নদীর পাড়ের কোনও কল্পনার বিষয় নয়। অন্তত তেমনই বলছে 'ডেলয়েট'-র একেবারে সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষা। তাতে উঠে এসেছে, ২০২১-২০২২-র মধ্যে ভারতের কর্মরত অংশের ৮০ শতাংশই কোনও না কোনও মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যার শিকার। এর মধ্যে ২৯ শতাংশ মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত অসুবিধার কারণে কোনও আগাম পরিকল্পনা ছাড়াই ছুটি নিয়েছেন। এই সমস্যার জন্য সংস্থাগুলিকে যে আর্থিক ক্ষতি বহন করতে হয়েছে, অঙ্কের হিসেবে তার পরিমাণ ১.১ লক্ষ কোটি টাকা। অর্থাৎ 'ওয়ার্কপ্লেস স্ট্রেস' বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা জরুরি। 


কেন হয়?
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সুজিত সরখেলের মতে, 'মূলত দুটি কারণ থাকে এর নেপথ্যে। এক, যাঁরা ধরাবাঁধা সময়সীমার বদলে বিকল্প শিফটে কাজ করেন, তাঁদের খাওয়াদাওয়া এবং ঘুম সময়ে হয় না। ফলে স্ট্রেস বাড়ে। দুই, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কী চান তা নিয়ে স্পষ্ট ধারণা না থাকলেও সমস্যায় পড়তে হয় অনেককে। বহু সময়ে অনেকের আবার মনে হয়, তাঁরা যা-ই করুন, ঠিকঠাক স্বীকৃতি পাবেন না।' সব মিলিয়ে বাড়তে থাকে স্ট্রেস। তবে এছাড়াও কিছু কারণ থাকতে পারে, জানাচ্ছেন তিনি। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বললেন, প্রায়ই কর্মক্ষেত্রে স্ট্রেস ও তার থেকে তৈরি অবসাদের কারণে অনেকে তাঁর কাছে আসেন। এক অভিজ্ঞতা মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অরিন্দম বিশ্বাসের।


কী করণীয়?
ঘটনা হল, চাকুরিজীবী থেকে ব্যবসায়ী, যিনি যে কাজ-ই করুন, স্ট্রেস থাকবে। তাই পালিয়ে না গিয়ে এর সঙ্গে মোকাবিলার উপায় খুঁজে বের করা দরকার, মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। চিকিৎসক বিশ্বাস যেমন মনে করেন, এই সমস্যা মোকাবিলায় প্রত্যেক সংস্থা নিজস্ব মনোবিদ রাখার কথা ভাবতে পারে যাতে যে কোনও প্রয়োজনে তাঁর সঙ্গে গিয়ে কথা বলতে পারেন কর্মীরা। চিকিৎসক সরখেলের আবার মত, কর্মক্ষেত্রে স্ট্রেস বাড়লে বিশেষজ্ঞের চেম্বারে আলাদা করে দেখানো ভাল। কারণ ব্যক্তিভেদে প্রত্যেকের সমস্যা আলাদা। তাই তাঁর প্রয়োজন বুঝে সেই মতো সাহায্য করা বেশি সহজ হবে এই ভাবেই। মোটের উপর বার্তা একটাই। সাহায্য নিন। ফেলে রাখবেন না। তাতে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা ষোলো আনার উপর আঠারো আনা।


আরও পড়ুন:'বাঘ তো খাঁচাতেই থাকবে, নচেৎ জঙ্গলে', অনুব্রতকে খোঁচা সুজনের