কলকাতা :আমাদের দেহের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হৃদপিন্ড। সঠিক সময়ে চিকিৎসার অভাবে কিংবা বহু ভুল ধারণার কারণে আজ বহু মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। হৃদরোগের ছোট থেকে বড় যেকোনও লক্ষণকেই সমান গুরুত্ব দিয়ে শুরু থেকে চিকিৎসা করানো প্রয়োজন। নাহলে তা প্রাণঘাতী আকার নিতে পারে। হৃদরোগের ঝুঁকি এড়াতে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া থেকে শরীরচর্চা করা প্রয়োজন এবং অবশ্যই ধূমপান এবং মদ্যপান ত্যাগ করা প্রয়োজন। তবে আজও হৃদরোগ নিয়ে বহু মানুষের মনে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। যা সহজেই হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার দিকে ঠেলে দিতে পারে। তাই জেনে নেওয়া যাক হৃদরোগ সংক্রান্ত কোন কোনও ভুল ধারণা আজও বহু মানুষের মনে জাল বিস্তার করে রয়েছে।


আরও পড়ুন - Monsoon Tips: বর্ষাকালে টানা বৃষ্টি আর ভ্যাপসা গরমের মধ্যে কীভাবে সুস্থ থাকবেন?


১. বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন যে, আজও বহু মানুষের মনে ধারণা রয়েছে যে, হৃদরোগ শুধুমাত্র পঞ্চাশ বছরের বেশি বয়সের মানুষের মধ্যেই দেখা দিতে পারে। পঞ্চাশ বছরের কম বয়সী মানুষের মধ্যে সেভাবে প্রভাব ফেলতে পারে না হৃদরোগ। এই ধারণা একেবারেই ভুল বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি বেশ কিছু ঘটনায় আমরা দেখেছি স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং নিয়মিত শরীরচর্চা করার পরও মাত্র ৪০ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অকালে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়লেন বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা সিদ্ধার্থ শুক্ল। এছাড়াও বহু মানুষ যাঁদের বয়স পঞ্চাশের কোঠায় পৌঁছয়নি, তাঁরাও আক্রান্ত হচ্ছেন হৃদরোগে। ফলে বোঝাই যাচ্ছে হৃদরোগের নির্দিষ্ট কোনও বয়স নেই। যেকোনও বয়সের মানুষের মধ্যেই এই মারণ রোগ হানা দিতে পারে। মধ্যবয়সী মানুষ যাঁদের মধ্যে ওবেসিটি বা টাইপ টু ডায়াবিটিসের মতো রোগ ইতিমধ্যেই বাসা বেঁধেছে, তাঁদের মধ্যে হৃদরোগের ঝুঁকি রয়েছে।


২. অল্পবয়সীদের মধ্যে একটা ধারণা দেখা দেয় যে, তাঁরা যেহেতু পঞ্চাশের কোঠায় এখনও পৌঁছননি, তাই তাঁরা জাঙ্ক ফুড খেতেই পারেন। এই ধারণাকেও ভুল প্রমাণিত করে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন যে, অস্বাস্থ্যকর খাবার, অনিয়মিত লাইফস্টাইল যেকোনও বয়সের মানুষের জন্যই বিপজ্জনক হতে পারে। হৃদরোগের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে জাঙ্ক ফুড। যাতে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে। আর তাই ডেকে আনছে হৃদরোগের সমস্যাকে।


আরও পড়ুন - Diabetes Diet: মধুমেহ রোগীরা যে ফলগুলো নিয়মিত খাবারের তালিকায় রাখবেন


৩. কিছু কিছু মানুষের ধারণা রয়েছে যে, তাঁর মধুমেহ রোগ থাকলেও তা এখন নিয়ন্ত্রণে, তাই তাঁর হৃদরোগের কোনও সম্ভাবনা নেই। এই ধারণাকেও একেবারেই অসত্য বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা জানাচ্ছেন যে, মধুমেহ রোগ থাকলেও যদি তা নিয়ন্ত্রণে থাকে, তাহলে হৃদরোগে ঝুঁকি খানিকটা কমতে পারে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা মনে রাখতে বলছেন যে, কারও শরীরে যদি মধুমেহ রোগ বাসা বেঁধে থাকে, তাহলে মনে রাখতে হবে যে, প্রতিনিয়তই তাঁর মধ্যে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ছে। তাই কোনওভাবেই তাঁরা এটাকে এড়িয়ে চলতে পারেন না। এছাড়াও উচ্চরক্তচাপের সমস্যা, ওবেসিটি, অতিরিক্ত ওজনের সমস্যা যাঁদের মধ্যে রয়েছে, তাঁদেরকেও সাবধানে থাকা প্রয়োজন।


৪. কম বয়সী বহু মানুষের মধ্যে কোলেস্টেরলের মাত্রা মাপার অভ্যাস কম থাকতে দেখা যায়। তাঁদের ধারণা, বেশি বয়স হলে তবেই কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ে। এই ধারণাকেও ভুল বলছেন বিশেষজ্ঞরা। কুড়ি বছরের উর্ধ্বের প্রতিটা মানুষকে কোলেস্টেরল মাপার পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা।


৫. বহু মানুষ এমনটাও জানিয়ে থাকেন যে, তাঁদের পরিবারের প্রত্যেকের মধ্যেই হৃদরোগের ইতিহাস রয়েছে। তাই তাঁদের কিছু করার নেই। এই ধারণাকেও কার্যত নস্যাত করে দিয়ে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন যে, যাঁদের পরিবারের ইতিহাসে হৃদরোগ আগেই দেখা দিয়েছে, তাই তাঁদের সচেতন থাকা আরও প্রয়োজন। বিশেষ করে অল্প কোনও লক্ষণ দেখা দিলেও সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের কাছে তাঁদের যাওয়া দরকার।


ডিসক্লেইমার : কপিতে উল্লেখিত দাবি, পদ্ধতি পরামর্শস্বরূপ। প্রয়োজনীয় চিকিৎসাপদ্ধতি/ডায়েট ফলো করার জন্য অবশ্যই বিশেষজ্ঞ / চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন ও সেইমতো নিয়ম মেনে চলুন।