Nocturnal Enuresis: রাতে ঘুমের মধ্যে নানা ধরনের স্বপ্নই আসে। কিন্তু এর মধ্য়ে যেগুলি আমাদের অস্বস্তিতে ফেলে, তার একটি হল প্রস্রাবের স্বপ্ন। অনেকেই রাতে প্রস্রাবের স্বপ্ন দেখেন। বিষয়টি কিছু ক্ষেত্রে লজ্জা ও অস্বস্তির হলেও এটি বাস্তব। তবে আদতে একটি শারীরিক সমস্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত। আর সেটি হল নকটারনাল ইনিউরেসিস। অর্থাৎ রাতে বিছানার মধ্যেই প্রস্রাব করে ফেলা। সাধারণত এটি শিশুদের মধ্যেই বেশি দেখা যায়। তবে বড়দেরও কিছু ক্ষেত্রে এই রোগ হতে পারে। বিশেষত বেশি বয়সে।
নকটারনাল ইনিউরেসিস
রাতে প্রস্রাবের স্বপ্ন দেখা ও বিছানা ভিজিয়ে ফেলা। এই দুটি ঘটনা প্রায়ই একসঙ্গে ঘটে। বলা যেতে পারে নকটারনাল ইনিউরেসিসের একটি লক্ষণ হল রাতের এই স্বপ্ন। অর্থাৎ এবার বিছানায় প্রস্রাব হয়ে যেতে পারে।
পুরুষরাই কি এই সমস্যার শিকার ?
পুরুষ ও মহিলা উভয়ের মধ্যেই এই রোগটি দেখা যেতে পারে। তবে পুরুষদের মধ্য়েই বেশি দেখা যায় নকটারনাল ইনিউরেসিস। চিকিৎসকদের কথায়, পুরুষ ও এএমএবি (অ্যাসাইনড মেল অ্যাট বার্থ - অর্থাৎ জন্মসূত্রে যিনি পুরুষ)-দের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়।
কেন নকটারনাল ইনিউরেসিসের শিকার বড়রাও?
সাধারণত বিছানার মধ্য়ে প্রস্রাব করে ফেলার ঘটনা শিশুদের মধ্যেই বেশি দেখা যায়। চিকিৎসকদের কথায়, এর কারণ তারা মূত্রথলি নিয়ন্ত্রণ করতে তখনও শেখে না। পাঁচ বয়স পর্যন্ত এই সমস্যা কমবেশি অনেকেরই থাকে। আবার কিছুক্ষেত্রে পাঁচ বছরের পরেও থাকতে পারে। তাঁর কারণ ট্রমা বা অতিরিক্ত স্ট্রেস। এই স্ট্রেসই কিন্তু বড়দের নকটারনাল ইনিউরেসিসের অন্যতম কারণ (Nocturnal Enuresis Cause)।
স্ট্রেস ও ট্রমার সম্মিলিত প্রভাব
স্ট্রেসের সঙ্গে প্রায়ই রোজই ওঠাবসা করতে হয় অনেককে। তবে ট্রমারও সম্মুখীন হতে হয় কিছু কিছু দিন। ট্রমার বিষয়টির সঙ্গে জড়িয়ে থাকে ভয়। ট্রমা এমন এক খারাপ অভিজ্ঞতা যা মনে দীর্ঘকালীন ছাপ ফেলে যায়। যেমন ধরা যাক, একটি ট্রেন দুর্ঘটনা চোখের সামনে দেখা বা কোনও অত্যন্ত খারাপ অভিজ্ঞতার শিকার হওয়া। এই সব ক্ষেত্রে নকটারনাল ইনিউরেসিসের আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে।
কিছু ক্ষেত্রে শারীরিক সমস্যার লক্ষণ হতে পারে নকটারনাল ইনিউরেসিস
কিছু ক্ষেত্রে বিছানায় প্রস্রাব করে ফেলা শারীরিক সমস্যারও লক্ষণ হতে পারে। যেমন —
- মূত্রথলির পেশি শিথিল হয়ে গেলে প্রস্রাবের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না।
- রাতে বেশি জল খেলে বা প্রস্রাব ঠিকমতো না করে শুতে গেলে।
- সুগার বা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে।
- কিডনির সমস্যা থাকলে।
- পেটের গুরুতর সমস্যা থাকলে।
- মনমেজাজ খারাপ থাকলে।
- মানসিক অবসাদ বা প্রচণ্ড উদ্বেগজনিত সমস্যায় ভুগলে।
নকটারনাল ইনিউরেসিসের কী কী লক্ষণ (Nocturnal Enuresis Signs) ?
- স্বপ্ন দেখলেও অনেকে ঠিক সময়ে টের পান না যে বিছানায় প্রস্রাব করে ফেলেছেন। তবুও স্বপ্ন একটি প্রাথমিক লক্ষণের মধ্যেই পড়ে।
- মাঝে মাঝেই প্যান্ট ও বিছানা ভিজে থাকা। একবার বা দুবার এমনটা হলে নকটারনাল ইনিউরেসিস (Nocturnal Enuresis Symptoms) বলা মুশকিল। তবে মাঝে মাঝেই এটি হলে নকটারনাল ইনিউরেসিসের শিকার হতে পারেন একজন।
নকটারনাল ইনিউরেসিসের প্রতিকার কীসে ?
১. অভ্যন্তরীণ সমস্যা থেকে হলে - শরীরের অভ্যন্তরীণ সমস্যা থেকে নকটারনাল ইনিউরেসিস হলে সেই সমস্যাটির সমাধান করা জরুরি। যেমন সুগার, প্রেশার বা মূত্রথলির কোনও সমস্যার কারণে এটি হলে সঠিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খেতে হতে পারে।
২. মানসিক উদ্বেগের জেরে - মানসিক উদ্বেগ, ট্রমা বা স্ট্রেসের জেরে এই সমস্যা হলে তা নিয়ন্ত্রণে পন্থা অবলম্বন করা দরকার। এক্ষেত্রে প্রাণায়াম, ডিপ ব্রিদিংয়ের মতো কিছু ব্যায়াম নিয়মিত করা জরুরি। এতে উদ্বেগের সমস্যা (Nocturnal Enuresis Treatment) নিয়ন্ত্রণে থাকে। এছাড়াও, রাতের দিকে ফাস্ট ফুড, ঠাণ্ডা মিষ্টি পানীয়, ধূমপান, মদ্যপানের অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। কারণ এগুলি স্ট্রেস বাড়িয়ে দেয় অনেকটা।
যেভাবে এই সমস্যাকে প্রতিরোধ করা যেতে পারে
- রাতে জল কম খাওয়া - সাধারণত জল খাওয়ার দুই ঘন্টা পর আমাদের মূত্রথলিতে প্রস্রাব জমা হয়। তাই ঘুমোতে যাওয়ার দুই ঘন্টা আগে শেষবার জল খেয়ে নিন।
- একবার প্রস্রাব - একবার প্রস্রাব করে তবেই শুতে যাওয়া।
- প্রস্রাবের সময় ঠিক রাখা - ঘড়ি ধরে প্রতি ২-৩ ঘন্টা অন্তর প্রস্রাব করতে যান। এতে মূত্রথলির মূত্রধারণ ক্ষমতা বাড়ে। যা রাতের দিকে নকটারনাল ইনিউরেসিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তবে সুগার থাকলে এটি না করাই ভাল। কারণ সুগারসহ মূত্র মূত্রথলিতে বেশিক্ষণ থাকলে সংক্রমণের আশঙ্কা থাকতে পারে।
- চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে কিছু ওষুধ - চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে কিছু ওষুধ খেতে পারেন। এই ধরনের ওষুধগুলি মূত্রথলির মূত্র ধারণ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। ফলে বিছানায় প্রস্রাব হয় না।
ডিসক্লেমার: লেখায় উল্লেখিত দাবি বা পদ্ধতি পরামর্শস্বরূপ। এটি মেনে চলার আগে অবশ্যই সরাসরি বিশেষজ্ঞ/চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
আরও পড়ুন - Spinach Benefits: মূত্রজনিত সমস্যার বড় সুরাহা, এই শাক খেলে হার্টের রোগের ঝুঁকিও কমে
আপনার পছন্দের খবর এবার হোয়াটসঅ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে।