এক্সপ্লোর

Upendrakishore Ray Chowdhury: বাংলায় প্রিন্টিং প্রযুক্তিতে বিপ্লব এনেছিলেন উপেন্দ্রকিশোর, অবিস্মরণীয় কাজ দেখতে ছুটে এসেছিল ব্রিটিশরাও

Upendrakishore Birthday:উপেন্দ্রকিশোর তাঁর প্রথম বই ছোটদের রামায়ণ-এর চিত্রমুদ্রণমানে অসন্তুষ্ট হয়ে ১৮৯৫ সালে বিলেত থেকে তখনকার দিনের আধুনিকতম যন্ত্রপাতি নিয়ে এসে নিজেই একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন।

কলকাতা: শিশুসাহিত্যে আজও অমর ছোটদের রামায়ণ, ছোটদের মহাভারত, সেকালের কথা, টুনটুনির বই এবং গুপী গাইন বাঘা বাইন। চরিত্ররা যেন শৈশবের জীবন্ত হিরো। হবে না-ই বা কেন? সাদা-কালোয় আঁকা সেই ছবিগুলোকে যিনি প্রাণ দিয়েছিলেন তিনি উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। তবে শুধু ছবি নয়, ১৮৯৫ সালে সে ছাপা তিনি বাংলা সাহিত্যকে দিয়ে গিয়েছিলেন, তা তৎকালীন সময়ের নিরিখে বিপ্লবই বটে। 

ভাইঝি লীলা মজুমদার থেকে ছেলে সুকুমার রায়, উপেন্দ্রকিশোরের কাজের প্রতি নিখুঁত ভাব, দৃষ্টিভঙ্গি এবং হার না মানা চিন্তাভাবনা স্বীকার করে নিয়েছেন সকলেই। তরুণ বয়সেই উপেন্দ্রকিশোরের সাহিত্যচর্চায় হাতেখড়ি ঘটে এবং তৎকালীন শিশুকিশোর পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। নিরবচ্ছিন্ন সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি বেহালাও যেমন বাজাতেন তেমন ভাল ছবিও তুলতেন, আঁকতেনও। চিত্রাঙ্কনে তিনি সচরাচর পাশ্চাত্য প্রথায় তেলরঙ ও কালিকলম ব্যবহার করতেন। জলরঙের ছবিতেও তিনি কুশলী ছিলেন। তাই ছবির প্রতি বিশেষ আগ্রহ ছিল তাঁর। 

তবে একদিন যে এই ছবি থেকে তিনি হয়ে উঠবেন বাংলা ছাপাখানার অগ্রপথিক, তা বোধহয় ঠিক করে রেখেছিলেন অদৃষ্টই। উপেন্দ্রকিশোর তাঁর প্রথম বই ছোটদের রামায়ণ-এর চিত্রমুদ্রণমানে অসন্তুষ্ট হয়ে ১৮৯৫ সালে বিলেত থেকে তখনকার দিনের আধুনিকতম যন্ত্রপাতি নিয়ে এসে নিজেই একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন। একটি লেখায় লীলা মজুমদার বলেছিলেন, '১৮৯৫ খৃষ্টাব্দের মধ্যে ছাপার কাজ ও ছবি এনগ্রেভ করা সম্বন্ধে তাঁর এতখানি শেখা ও জানা হয়ে গিয়েছিল, এতখানি দক্ষতা ও নিজের উপরে একটা বিশ্বাস এসেছিল যে সাহস করে নিজের পয়সায় বিলেত থেকে কিছু যন্ত্রপাতি আনিয়ে নিজের ছাপাখানার কাজ শুরু করে ছিলেন। এই ভাবে সেকালের বিখ্যাত ইউ-রায় এণ্ড সন্সের ছাপাখানার গোড়াপত্তন হল । এই ছাপাখানার বিশেষত্ব হল এখানে হাফ টোনরক প্রিন্টিং এর কাজ হত ; ভারতবর্ষে তখন আর কেউ এ বিষয় জানত না। এদেশে ছাপা বই এর ছবিও ভালো হত না। উপেন্দ্রকিশোরের প্রথম বইয়ের নাম ‘ছেলেদের রামায়ণ', এ বই এখনো ছোট ছেলেমেয়েরা কত খুসি হয়ে পড়ে। উপেন্দ্রকিশোরের নিজের হাতে এর চমৎকার ছবি আঁকা হল। তখনো নিজের ছাপাখানা হয় নি, অন্য জায়গায় বই ছাপতে দেওয়া হল । তারা ব্লক তৈরী করতে গিয়ে সব ছবি খারাপ করে ফেলল, উপেন্দ্রকিশোরের সে কি দুঃখ ! এর পর আর কোনো বইএ এমনটি হয় নি, তার কারণ সব ছবি তাঁর নিজের প্রেসে নিজের প্রণালীতে ছাপা হয়েছে।' 

এ কথা অনস্বীকার্য যে, প্রাচ্যে তখন এর কোনো চর্চা ছিল না, এমনকি পশ্চিমা বিশ্বেও তখন এ প্রযুক্তি প্রারম্ভিক পর্যায়ে মাত্র।এ দেশে ছবি ছাপা হত কাঠের ওপর খোদাই করা ব্লক দিয়ে। সেই সময়ে গভীর ব্যুৎপত্তি এবং সূক্ষ্ম বৈজ্ঞানিক দৃষ্টির সাহায্যে নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন উপেন্দ্রকিশোর। একটি চিঠিতে তিনি নিজেই জানিয়েছেন যে,  ছাত্রাবস্থায় জানতে পেরেছিলেন, তামা ও দস্তার পাতে খোদাই করে ছাপলে সুন্দর ও সূক্ষ্ম ছবি পাওয়া যায়। সেই থেকে গবেষণার নিয়ম মেনে কাজ শুরু করেন হাফটোন প্রসেসে।

তেরো নম্বরের বাড়িতে যে শিশুসাহিত্যের বীজের অঙ্কুর বেরিয়েছিল, আস্তে আস্তে সেখানে ফুল ফুটতে লাগল। বারান্দায় বসে ছেলেমেয়েদের কাছে উপেন্দ্রকিশোর যে সব সেকালের গল্প বলতেন, তাই দিয়ে 'সেকালের কথা' বই তৈরি হল। আগাগোড়া উপেন্দ্রকিশোরের নিজের লেখা, নিজের হাতে আকা, নিজের ছাপাখানায় ছাপা, এ বই-এর হাফটোন ব্লকে ছাপা ছবিগুলি হল প্রায় নিখুঁত। 

বিলেতের ছাপাখানার মহলে ততদিনে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। উপেন্দ্রকিশোরের পরিশ্রমী গবেষণা প্রসেস ক্যামেরা ব্যবহারের পদ্ধতি প্রকাশিত হল ‘মুদ্রণজগতের বাইবেল’ বলে পরিচিত একটি পত্রিকা— ‘পেনরোজ় পিকটোরিয়াল অ্যানুয়াল’-এ। এরপরের সংখ্যায় ছাপা হল উপেন্দ্রকিশোরের প্রবন্ধ ‘ফোকাসিং দ্য স্ক্রিন’। পরের দু’বছর বেরোল ‘দ্য থিয়োরি অব দ্য হাফটোন ডট’ এবং ‘দ্য হাফটোন থিয়োরি গ্রাফিক্যালি এক্সপ্লেনড’। এত দিন প্রচলিত পদ্ধতি’র অবসান ঘটাতে পেরেছে, তা স্বীকার করতে শুরু করল তামাম মুদ্রণবিশ্ব।

শুধু তাই নয় গুণগ্রাহীরা ছাপাখানার কাজ দেখবার প্রস্তাব নিয়ে প্রায়ই আসতেন উপেন্দ্রকিশোর রায়ের বাড়িতে। লীলা মজুমদারের কথায়, 'ছোটোখাটো একটা ভাড়াবাড়িতে সামান্য উপকরণ দিয়ে কেবল নিজের প্রচণ্ড প্রতিভাবলে মাত্র বত্রিশ বছরের একজন বাঙ্গালী যে এতখানি সম্পাদন করতে পেরেছিলেন এ বোধহয় তাঁরা ধারণা করতেও পারেনি'। ১৮৯৬ সালের দিকে স্টুডিও, ডার্করুম নিয়ে 'ইউ এন রায় এন্ড সন্স' নামে একটি ছাপাখানা তৈরি করেন তিনি। এরপর বাকিটা ইতিহাস। উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ও তাঁর নেতৃত্বে ইউ এন রায় এণ্ড সন্স বাংলা তথা ভারতের মুদ্রণ শিল্পের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় নামে পরিণত হয় এবং বাংলার প্রকাশনা জগতে যুগান্তর আসে। 

সাহিত্যচর্চার সঙ্গে সঙ্গে ছাপাখানাও সামলে চলেছেন 'প্রিন্টিং প্রযুক্তির দিকপাল'। লীলা মজুমদার স্মৃতিচারণ করে লিখেছিলেন, 'দিনে দিনে ছাপাখানার উন্নতি হতে লাগল, ক্রমে এ বাড়িতেও জায়গা কুলোয় না, তখন আরো বড় বাড়ি দেখে উপেন্দ্র কিশোরকে আবার উঠে যেতে হল। এই হল বাইশ নম্বর সুকিয়া স্ট্রীটের বাড়ি ১৯০০ সাল থেকে এই বাড়ির একতলায় চলতে লাগল ইউ রায় এত সন্সের ছাপাখানার কাজ।' 

এই ছাপাখানার আরেকটি যন্ত্রের আবিষ্কারকও ছিলেন তিনি। ‘স্ক্রিন অ্যাডজাস্টমেন্ট ইন্ডিকেটর’ তাঁর হাতেই তৈরি। আবিষ্কারকের নামে পরে এর নামকরণ হয় ‘রে-স্ক্রিন অ্যাডজাস্টার’।  এমনটি 'ইউ এন রায় এন্ড সন্স' থেকেই প্রকাশিত হয় চিত্রকর রবিবর্মার সুবিখ্যাত তৈলচিত্র ‘অজবিলাপ’। ভারতীয় কাগজে তিন-রঙা হাফটোন মুদ্রণ ওই প্রথম। 

টুনটুনি, গুপি-বাঘার লেখক যিনি পরিবার ভালবাসতেন, যিনি ভালবাসতেন অবসরে বেহালা বাজাতে, মেধাবী হিসেবে ছেলেবেলা থেকে যিনি বিস্ময়ের, তিনি বিনয়ীও। তাই আজও বাংলা সাহিত্যর জগতে স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন উপ্রেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী। আর ছাপাখানার ইতিহাসে তাঁর নাম বাঙালির হৃদয়ে 'সোনালি অক্ষরে' মুদ্রিত। 

আরও পড়ুন, ভারতের জাতীয় সঙ্গীত ইংরেজিতেও অনুবাদ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ! পাণ্ডুলিপি প্রকাশ সোশাল মিডিয়ায়

আরও দেখুন
Advertisement
Advertisement
Advertisement

সেরা শিরোনাম

Team India Flight: ঘরে ফেরার সময়েও নজির! বিশেষ রেকর্ড গড়ল রোহিত-বিরাটদের বিমানও
ঘরে ফেরার সময়েও নজির! বিশেষ রেকর্ড গড়ল রোহিত-বিরাটদের বিমানও
Hemant Soren: ফের ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত, শপথ নিয়েই ভোটবার্তা, চম্পাই-অস্ত্রে শান বিজেপি-র
ফের ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত, শপথ নিয়েই ভোটবার্তা, চম্পাই-অস্ত্রে শান বিজেপি-র
Narendra Modi in Space: মহাকাশ অভিযানে যাবেন মোদি! আশাবাদী ISRO প্রধান, কংগ্রেস বলল...
মহাকাশ অভিযানে যাবেন মোদি! আশাবাদী ISRO প্রধান, কংগ্রেস বলল...
Mamata Banerjee: এককালীন অবসরভাতা বেড়ে ৫ লক্ষ, প্যারা টিচার, আশাকর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের সুখবর মমতার
এককালীন অবসরভাতা বেড়ে ৫ লক্ষ, প্যারা টিচার, আশাকর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের সুখবর মমতার
Advertisement
ABP Premium

ভিডিও

Kolkata Municipality: মুখ্য়মন্ত্রীর বাড়ির কাছে সরকারি সম্পত্তি দখলমুক্ত করল কলকাতা পুরসভা। ABP Ananda LiveDengue In Bengal: বর্ষা আসতেই রাজ্য়ে ফিরেছে ডেঙ্গির ভয়! ABP Ananda LivePetrol Density: গাড়িতে তেল ভরার সময় কোন কোন বিষয়ে নজর রাখা দরকার? না রাখলে কী ক্ষতি হতে পারে?Bhupatinagar Incident: ভূপতিনগর বিস্ফোরণকাণ্ডে প্রথম চার্জশিটেই বিস্ফোরক দাবি NIA-র! ABP Ananda Live

ফটো গ্যালারি

ব্যক্তিগত কর্নার

সেরা প্রতিবেদন
সেরা রিল
Team India Flight: ঘরে ফেরার সময়েও নজির! বিশেষ রেকর্ড গড়ল রোহিত-বিরাটদের বিমানও
ঘরে ফেরার সময়েও নজির! বিশেষ রেকর্ড গড়ল রোহিত-বিরাটদের বিমানও
Hemant Soren: ফের ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত, শপথ নিয়েই ভোটবার্তা, চম্পাই-অস্ত্রে শান বিজেপি-র
ফের ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত, শপথ নিয়েই ভোটবার্তা, চম্পাই-অস্ত্রে শান বিজেপি-র
Narendra Modi in Space: মহাকাশ অভিযানে যাবেন মোদি! আশাবাদী ISRO প্রধান, কংগ্রেস বলল...
মহাকাশ অভিযানে যাবেন মোদি! আশাবাদী ISRO প্রধান, কংগ্রেস বলল...
Mamata Banerjee: এককালীন অবসরভাতা বেড়ে ৫ লক্ষ, প্যারা টিচার, আশাকর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের সুখবর মমতার
এককালীন অবসরভাতা বেড়ে ৫ লক্ষ, প্যারা টিচার, আশাকর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের সুখবর মমতার
West Bengal Assembly: আমাদের দুর্বল ভাবা ভুল', রাজ্যপালকে নিশানা বিমানের, শপথ জটিলতার মধ্যে কাল বিশেষ অধিবেশন
আমাদের দুর্বল ভাবা ভুল', রাজ্যপালকে নিশানা বিমানের, শপথ জটিলতার মধ্যে কাল বিশেষ অধিবেশন
Bihar Bridge Collapse: ধসে নেমে গেল মাঝের অংশ, নদীতে বসে গেল থাম, বিহারে ফের ভাঙল সেতু, ১৭ দিনে ১২টি
ধসে নেমে গেল মাঝের অংশ, নদীতে বসে গেল থাম, বিহারে ফের ভাঙল সেতু, ১৭ দিনে ১২টি
Brain Eating Amoeba: মস্তিষ্ক খেকো অ্যামিবার সংক্রমণ, পুকুরে স্নান করে চরম পরিণতি কিশোরের
মস্তিষ্ক খেকো অ্যামিবার সংক্রমণ, পুকুরে স্নান করে চরম পরিণতি কিশোরের
Team India Victory Parade Live: বৃষ্টি ও ট্রাফিকের জন্যই পিছিয়ে যাচ্ছে প্যারেডের সময়, এখনও বিমানবন্দরেই রোহিতরা
বৃষ্টি ও ট্রাফিকের জন্যই পিছিয়ে যাচ্ছে প্যারেডের সময়, এখনও বিমানবন্দরেই রোহিতরা
Embed widget