‘জঙ্গিদের শ্রমিক-হত্যার ঘটনা অত্যন্ত মর্মান্তিক’, কেন্দ্রের কাশ্মীর-নীতিকে তীব্র আক্রমণ অধীরের
মৃত শ্রমিকরা মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি থানা এলাকার বাহালনগর গ্রামের বাসিন্দা।
শ্রীনগর ও মুর্শিদাবাদ: জম্মু-কাশ্মীরের কুলগামে মুর্শিদাবাদের ৫ শ্রমিককে জঙ্গিদের নির্বিচারে হত্যাক ঘটনাকে অত্যন্ত মর্মান্তিক ও লজ্জাজনক বলে উল্লেখ করলেন কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী। একইসঙ্গে, কেন্দ্রের তীব্র সমালোচনায় মুখর হলেন তিনি।
মৃত শ্রমিকরা মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি থানা এলাকার বাহালনগর গ্রামের বাসিন্দা। কাশ্মীরে হত্যাকাণ্ডের খবর আসতেই শোকস্তব্ধ হয়ে পড়ে গ্রাম। বুধবার সকালে সেখানে গিয়ে নিহত শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন মুর্শিদাবাদের সাংসদ। তাঁদের আশ্বস্ত করেন। একইসঙ্গে ক্ষোভ উগড়ে দেন মোদি সরকারের কাশ্মীর-নীতির বিরুদ্ধে।
(1/2) কাশ্মীর আজ অত্যন্ত ঘৃণ্য ও জঘন্য হত্যালীলার সাক্ষী হয়ে রইলো, সন্ত্রাসবাদীরা বর্বরোচিত আক্রমণ করে পাঁচজন গরিব মানুষের প্রাণ কেড়ে নিল। মানুষগুলো সকলে আমার জেলা মুর্শিদাবাদের মানুষ। তারা ভারত সরকারের দেওয়া ভরসায় ভরসা করে কাশ্মীরে রুটি রুজির জন্য গিয়ে আজ প্রাণ দিল।
— Adhir Chowdhury (@adhirrcinc) October 29, 2019
(2/2) খুব দুঃখ পাচ্ছি, শাস্তি চাই অপরাধীদের।
— Adhir Chowdhury (@adhirrcinc) October 29, 2019
এদিন অধীর বলেন, কাশ্মীর জ্বলছে, সবাই দেখছে। বাংলার গরিব মানুষ রুজির জন্য সেখানে গেছে। উত্তপ্ত কাশ্মীরকে শান্ত দেখাতে ইইউ থেকে সাংসদ ভাড়া করে নিয়ে এসেছে কেন্দ্র। অন্যদিকে, জঙ্গিরা দেখাতে চাইছে কাশ্মীর অশান্ত। দুয়ের মাঝে পড়ে প্রাণ যাচ্ছে গরিব মানুষদের।
এটা স্বাভাবিক ঘটনা যে, ৩৭০ ও ৩৫এ অবলুপ্তির পর, কাশ্মীরে ভিনরাজ্যের মানুষদের যাতায়াত রুখতে চেষ্টা করবে জঙ্গিরা। সেই প্রেক্ষিতে, কেন্দ্রের উচিত ছিল ভিনরাজ্যের মানুষদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করা। কিন্তু, তারা অ-কাশ্মীরিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি। এই ক্ষেত্রে কেন্দ্র পুরোপুরি ব্যর্থ।
নিহতদের পরিবারের কাছে দেহগুলি ফিরে আসে, তার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে অনুরোধ করেন তিনি। পরে বলেন, মৃতদেহগুলি বিমানে করে নিয়ে আসা হচ্ছে। জম্মু ও কাশ্মীরের ডিজির সঙ্গে রাজ্য ডিজির কথা। এছাড়া, যারা ওখানে রয়েছে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার হেল্পলাইনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, কুলগামে লাইন দিয়ে দাঁড় করিয়ে মুর্শিদাবাদের ৬ নির্মাণ শ্রমিককে নির্বিচারে গুলি করল জঙ্গিরা। মৃত্যু পাঁচজনের। গুলিবিদ্ধ এক শ্রমিক ভর্তি হাসপাতালে। ঘড়িতে তখন সন্ধে সাড়ে সাতটা। দক্ষিণ কাশ্মীরের কুলগাম জেলার কাটরাসুতে একটি ভাড়া বাড়িতে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন মুর্শিদাবাদ থেকে যাওয়া ৬ জন নির্মাণ শ্রমিক।
পুলিশ সূত্রে খবর, সেইসময় আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ওই ভাড়া বাড়িতে ঢুকে পড়ে জঙ্গিরা। টেনে হিঁচড়ে বের করা হয় ৬ জন শ্রমিককে। অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয় একটি ফাঁকা জায়গায়। সূত্রের খবর, তখনই শ্রমিকদের নির্বিচারে গুলি করতে শুরু করে জঙ্গিরা। ৫ জন শ্রমিক ঘটনাস্থলেই মারা গেলেও একজন পালাতে সক্ষম হন। যদিও ওই শ্রমিকের পায়ে গুলি লাগে।
গুরুতর জখম অবস্থায় জহুরুদ্দিন নামে ওই শ্রমিককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। যাঁদের মৃত্যু হয়েছে তাঁদের নাম কামারউদ্দিন, রফিক আহমেদ, নঈম আহমেদ, রফিকুল্লা শেখ এবং মুরসালিন শেখ।
এদিনই কেন্দ্রের উদ্যোগে উপত্যকায় যান ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭ জনের এক প্রতিনিধিদল। বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখেন তাঁরা। তারইমধ্যে এই জঙ্গি হামলা। জঙ্গি হামলার খবর পেয়ে এদিন ঘটনাস্থলে পৌঁছয় জম্মু কাশ্মীর পুলিশ ও আধাসেনা। গোটা এলাকা ঘিরে জঙ্গিদের খোঁজে শুরু হয় তল্লাশি।