বীরভূম: বিশ্বভারতীর একশো বছরের ইতিহাসে সম্ভবত এটাই প্রথমবার, যেখানে গুরুদেবের জন্মদিন পালন হল একেবারে নিঃশব্দে, নিভৃতে। প্রভাতফেরি নেই। গান নেই, নাচ নেই, আবৃত্তি নেই। নেই নাটক। উপসানা গৃহ একেবারে খাঁ খাঁ করছে। যার জন্মদিন ঘিরে চাঁদের হাঁট বসতো শান্তিনিকেতনে, সেখানে একা একা দাঁড়িয়ে শিমুল, পলাশ, বকুল, কৃষ্ণচূড়া। ঘণ্টাতলায় কোকিলের কোলাহলও যেন কৃপণ। একটু শব্দ নেই। বিশ্বভারতীর চৌহদ্দিতে গুনগুন করেও কেউ গাইছে না ‘হে নূতন’। নামমাত্র অনুষ্ঠানে কবিগুরুর প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণ করলেন উপাচার্য।  স্বাধীনত্তোর ভারতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিনে শান্তিনিকেতনে শূন্যতা? না, কস্মিনকালেও এমন ভাবনা কারো মাথায় আসেনি। দুঃস্বপ্নেও এমন অমানিশার কথা কেউ ভাবেনি। তবে এটাই হল।


আরও পড়ুন: আজ ১৫৯-এ পড়লেন রবীন্দ্রনাথ, জেনে নিন তাঁর সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য


করোনার কারণে ভানু সিংহর পাড়ায় আগেই বাতিল হয়েছিল বসন্ত উৎসব। এবার লকডাউনে রবির প্রভাতও যেন গোধূলি! শুক্রবার বিশ্বভারতীতে কবিগুরুর ১৬০ তম জন্মদিন পালন হল স্রেফ নামেই। উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপনেই শুরু আর সেখানেই শেষ।


আরও পড়ুন: রবীন্দ্রনাথের স্বকন্ঠে গাওয়া ‘জনগণমন’-র ভিডিও উপহার লতার


একই অবস্থা কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুবাড়িতেও। বাংলাদেশের শিলাইদহতেও ছবিটা একই। মহর্ষি দেবেন্দ্র নাথ ঠাকুর ও সারদা দেবীর সংসারে রবির আসা কিংবা ১৯২১ সালে শান্তিনিকেতনের প্রতিষ্ঠার পর এমন অনাড়ম্বরে ২৫শে বৈশাখ পালন, না কখনও হয়নি।


আরও পড়ুন: কেউ গাইলেন, 'ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলে ', কেউ 'নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে' 


ভানু সিংহর স্বপ্নের দেশ থেকে অনেক দূর, শহর কলকাতাও যেন বুড়িছোঁয়া করেই কাটিয়ে দিল। দু, তিনটে ট্যাবলোর শহর প্রদক্ষিণ। উর্দিধারীদের উত্তরীয় পরে সামাজিক দূরত্ব মেনে রাস্তায় হাত জোড় করে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন। আর বলার মতো ক্যাথিড্রাল রোডে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কবি প্রণাম’। ব্যস। এবারের মতো গুরু প্রণামের ইতি।