‘ডিক্টেটর’ মোদীর বিরুদ্ধে বিরোধীদের একজোট হওয়ার ডাক মমতার
কলকাতা: সমস্ত সিদ্ধান্তই চাপিয়ে দিচ্ছে কেন্দ্র। ‘অঘোষিত আর্থিক জরুরি অবস্থা’ চলছে। বিধানসভায় অভিযোগ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। নরেন্দ্র মোদীকে আক্রমণ করতে গিয়ে টানলেন হিটলার, স্ট্যালিনের প্রসঙ্গও। নোট বাতিলের বিরুদ্ধে বিজেপি ছাড়া, বাকিদের একজোট হতে আহ্বান মুখ্যমন্ত্রীর। পাশাপাশি, কংগ্রেস ও বামেদের খোঁচা দিতেও ছাড়েননি তিনি। নোট বাতিলের পর থেকেই আক্রমণ অব্যাহত রেখেছেন। সোমবার রাজ্য বিধানসভায়, মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সেই আক্রমণের সুরকে সপ্তমে নিয়ে গেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, আমার জমানো টাকা। কর মেটানো টাকা ব্যাঙ্কে রাখা। উনি বলছেন তোলা যাবে না। উনি কি অভিভাবক? অঘোষিত জরুরি অবস্থা চালানো হচ্ছে। অর্থনীতিতে ধস নেমেছে। যা ইচ্ছে তাই করছে, মোদী ভাবছে উনি ভগবান। যা বলবে তাই লোকে মানবে। যা বলবে তাই করবে। কিন্তু এটা ভারত, এখানে গণতন্ত্র চলে, একনায়কতন্ত্র চলে না। মোদীকে আক্রমণ করতে গিয়ে হিটলার, স্ট্যালিনের প্রসঙ্গও টেনে আনেন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, চা ওয়ালা হয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন, এখন সব লুঠ করে পালাচ্ছো না তো? হিটলার, স্ট্যালিন, বিন তুঘলকও এরকম করতে পারেনি। হিটলারের প্রেতাত্মা থাকলেও চমকে উঠত! কালো টাকা উদ্ধারের প্রতিশ্রুতি নিয়েও এদিন প্রধানমন্ত্রীর দিকে তীব্র কটাক্ষ ছুড়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, কালো টাকার মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা কোথায়? কত টাকা কালো টাকা উদ্ধার করতে পেরেছো? শুধু নিজের ইগোর জন্য ম্যান মেড ডিজাস্টার করা হল। এখানেই না থেমে, মমতা আরও একবার টেনে এনেছেন টোলপ্লাজায় সেনাবাহিনীর সমীক্ষার প্রসঙ্গ। ফের তুলেছেন যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় হস্তক্ষেপের অভিযোগ। বলেন, কিছু বললেই আর্মি পাঠাচ্ছে। নবান্নর সামনে কেন আর্মি প্রশ্ন মুখ্যমন্ত্রীর। মোদীকে আক্রমণ করায় পাল্টা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জবাব দিয়েছে বিজেপিও। মাদারিহাটের বিজেপি বিধায়ক মনোজ টিগ্গা বলেন, আদৌ দেশে জরুরি অবস্থার মতো পরিস্থিতি নয়। ২৮জন মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে একমাত্র উনিই বিরোধিতা করছেন। যদিও, দমে যাওয়ার লোক যে তিনি নন, এদিন তা ফের বোঝালেন মমতা। বিজেপি নেতৃত্বধীন এনডিএ সরকার হোক কিংবা প্রধানমন্ত্রী, বিধানসভার বক্তৃতায়, আক্রমণের প্রতিটি ক্ষেত্রেই সাধারণ মানুষের দুর্ভোগকে হাতিয়ার করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বিশেষ করে নোট বাতিল ইস্যুকে এদিন ফের উত্থাপন করে বিরোধীদের এক হওয়ার আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, সিবিআই-ইডিকে দিয়ে হুমকি দিচ্ছে। রাহুল গাঁধীর ট্যুইটার অ্যাকান্ট হ্যাক। নানাভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে।অর্থ দফতরে ২ জন অফিসার পাঠাচ্ছে। যাদবপুরে আগুন নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক পিআইবির রিলিজ বের করছে। মুখ্যমন্ত্রী বিরোধীদের একজোট হয়ে লড়াইয়ের ডাক দিলেও, তাল কেটে যায় শুরুতেই। বক্তা তালিকায় মানস ভুঁইয়ার নাম দেখে তীব্র প্রতিবাদ জানায় কংগ্রেস। তারা প্রশ্ন তোলে, যাঁর বিরুদ্ধে দলত্যাগবিরোধী আইনে অভিযোগ আনা হয়েছে, তিনি কি করে বক্তা হন? অধ্যক্ষ বলেন, কোনও বিধায়ক বলতে চাইলে, তিনি সেই অনুমতি দিতেই পারেন। এরপরই সভা থেকে ওয়াক আউট করে কংগ্রেস। তাদের সঙ্গে ওয়াক আউট করলেও মিনিট পাঁচেক পরে ফিরে আসে বামেরা। যদিও প্রশ্ন উঠছে, শাসক দলের আহ্বানে সাড়া দিয়ে কি বিজেপি বিরোধিতায় একজোট হবে সবাই? বিধানসভায় কংগ্রেসের মুখ্য সচেতক মনোজ চক্রবর্তীর প্রতিক্রিয়া, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কখনও বিজেপিকে আক্রমণ করেন, কখনও আবার মন্ত্রীও হন! নিজের রাজনৈতিক সুবিধা অনুযায়ী একেক সময় একেক কথা বলেন। তাই ওনাকে বিশ্বাস করা যাবে না। বিজেপি-বিরোধী লড়াই আমাদের ছিল, আছে, থাকবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আহ্বান সম্পর্কে সাংবাদিক বৈঠকে কোনও মন্তব্য করতে চাননি সুজন চক্রবর্তী। তবে নোট বাতিল নিয়ে মোদীর সমালোচনার পাশাপাশি, চিটফান্ডকাণ্ডের প্রসঙ্গও উস্কে দিয়েছেন তিনি। পাল্টা মমতাও সিপিএমকে খোঁচা দেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করেননি। বলেন, বনধ ডেকে আপনারা তো সাইন বোর্ড হয়ে গিয়েছেন। রাহুলের পাশে দাঁড়ালেও, প্রদেশ কংগ্রেস এখনও মুখ্যমন্ত্রীর চক্ষুশূল। বলেন, সব জায়গায় সব দল একসঙ্গে কাজ করছে। বেঙ্গল ব্যতিক্রম। কংগ্রেস সাইনবোর্ড হয়ে গিয়েছে, তাতেও লজ্জা নেই! সব মিলিয়ে নোট ইস্যুতে জাতীয় রাজনীতির পাশাপাশি আরও তপ্ত হল রাজ্য-রাজনীতিও।