নয়াদিল্লি: ভারতের বাজারেও এবার মিলতে পারে রোগা হওয়ার ওষুধ টিরজেপাটাইড (Tirzepatide)। স্থূলতা ঘোচাতে অন্যত্র এই ওষুধের বহুল ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। অনেকে এই টিরজেপাটাইড-কে 'মিরাকল ওষুধ'ও বলেন। একবার খেলেই হাতেনাতে ফল মিলতে শুরু করে বলেও চাউর রয়েছে বাজারে। এমনকি এই ওষুধের দৌলতেই পশ্চিমি দেশগুলিতে রোগা হওয়ার ওষুধের এত বাড়বাড়ন্ত বলে মানেন বাজার বিশেষজ্ঞরা।


ভারতের বাইরে অন্য দেশগুলিতে গত কয়েক বছরে স্থূলতা থেকে মুক্তি পেতে রোগা হওয়ার ওষুধের দ্বারস্থ হয়েছেন মানুষজন। বিশেষ করে আমেরিকা এবং ইউরোপের দেশগুলিতে এই রোগা হওয়ার ওষুধ বেশ জনপ্রিয়। ভারতের বাজারে রোগা হওয়ার ওষুধ বিক্রির অনুমোদন নেই।  নিয়ন্ত্রক সংস্থার ছাড়পত্র পাওয়া থেকে পশ্চিমি দেশের চাহিদার জোগান দিয়ে এদেশে ওষুধ এসে পৌঁছনোও ঝক্কির বিষয়। কিন্তু শীঘ্রই তা পাল্টা চলেছে।


গত সপ্তাহে ভারতের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিশেষজ্ঞ কমিটির বৈঠক হয়। সেখানে ভারতের বাজারে টিরজেপাটাইড বিক্রিতে সবুজ সঙ্কেত মিলেছে। তাদের এই সুপারিশ পর্যালোচনা করে দেখা হবে। সব ঠিক থাকলে শীঘ্রই ছাড়পত্র মিলে যাবে। ফলে টিরজেপাটাইড উৎপাদনকারী সংস্থা Eli Lilly ভারতের বাজারেও তাদের ওষুধ বিক্রি করতে পারবে আগামী দিনে।


আরও পড়ুন: Bangladesh Job Quota Protests: সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ ঘিরে অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশ, পুলিশ-আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ, বাড়ছে হতাহত


২০১৭ সালে আমেরিকার ফুডস অ্যান্ড ড্রাগস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FDA)-এর তরফে ডেনমার্কের Novo Norsdisk সংস্থার রোগা হওয়ার ওষুধ Ozempic-কে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। ওই ওষুধে সেমাগ্লুটাইড রয়েছে, যা টাইপ ২ ডায়বিটিস নিয়ন্ত্রণ করে। এরই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় রোগী রোগা হন বলে লক্ষ্য করেন আমেরিকার চিকিৎসকরা। এর পর, ডায়বিটিসের ওই ওষুধ রোগা হওয়ার জন্য সুপারিশ করতে শুরু করেন তাঁরা। সাধারণ মানুষ তো বটেই তারকারাও ওই ওষুধ নিতে শুরু করেন। সোশ্য়াল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সাররাও ওই ওষুধকে রোগা হওয়ার 'সঞ্জীবনী ওষুধ' বলে উল্লেখ করতে শুরু করেন।


এর পরই Novo Nordisk সেমাগ্লুটাইড-কে রোগা হওয়ার উপাদান হিসেবে ব্যবহার করতে উদ্যোগী হয়, যাতে ডায়বিটিস নেই যাঁদের, তাঁরা শুধু রোগা হওয়ার ওষুধ খেতে পারেন। ২০২১ সালে ওই সংস্থা সেমাগ্লুটাইড ইঞ্জেকশন Wegovy বাজারে আনে, যা স্থূলতার চিকিৎসায় অনুমোদন পায়। Ozempic এবং Wegovy-র মধ্যে মূল পার্থক্য হল,  Wegovy বেশি মাত্রায় নিতে হয়। ফলে চাহিদা অনুযায়ী, সবসময়ই ওই দুই ওষুধের ঘাটতি থাকে বাজারে। ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে Eli Lilly-র তৈরি টিরজেপাটাইড ওষুধটি ছাড়পত্র পায় সেখানে।


পশ্চিমি দেশে Eli Lilly-র তৈরি টিরজেপাটাইড ওষুধটি ডায়বিটিসের জন্য Mounjaro নামে এবং স্থূলতার জন্য Zepbound নামে বিক্রি হয়। এখনও পর্যন্ত যা খবর, অনুমোদন পেলে ভারতের বাজারে টিরজেপাটাইড ডায়বিটিসের ওষুধ হিসেবেই বিক্রি করা হবে, রোগা হওয়ার ওষুধ হিসেবে নয়। স্থূলতার ওষুধ হিসেবে বিক্রির বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে। 


Wegovy (Semaglutide) এবং Zepbound (Tirzepatide) প্রাপ্তবয়স্কদের স্থূলতার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। যাঁদের BMI ৩০-এর ঊর্ধে এবং উচ্চরক্তচাপ, কোলেস্টেরল এবং টাইপ ২ ডায়বিটিস রয়েছে, তাঁদের এই ওষুধ দেওয়া যায় ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে।  পাশাপাশি ডায়েট এবং শারীরিক কসরতও করতে হয়। ধীরে ধীরে কমানো হয় ডোজ। সর্বোচ্চ ২.৪ মিলিগ্রাম সেমাগ্লুটাইড এবং ১৫ মিলিগ্রাম টিরজেপাটাইড দেওয়া হয়। তবে কোনওটি কম বা বেশি শক্তিশালী নয়।


এই দুই উপাদানই আসলে প্রোটিন, যা শরীরে Glucagon-like-peptide 1 (GLP-1) হরমোনের মাত্রা বাড়িয়ে তোলে, যা ওজনকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। খিদে পায় না, সামান্য খাবারেই পেট ভরে গিয়েছে বলে মনে হয়। শরীরে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণেও কার্যকরী। ট্রায়ালের পর ভারতে Zepbound সবুজ সঙ্কেত পেয়েছে। কিন্তু ভারতের জনবৈচিত্রকে সামনে রেখে ষষ্ঠ পর্যায়ে ফের পরীক্ষার শর্ত দিয়েছে ভারতের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা। 


এই ওষুধের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে, যেমন, বমিভাব, ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, তলপেটে যন্ত্রণা, বদহজম, ক্লান্তি, অ্যালার্জি, চুলপড়া, বুকজ্বালা। Elli Lilly থাইরয়েড টিউমার, থাইরয়েড ক্যান্সারের ঝুঁকির কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখ করেছে। পরিবারে কারও থাইরয়েড কারসিনোমা থাকলে বা মাল্টিপল এন্ডোক্রাইন নিওপ্লেসিয়া সিনড্রোম টাইপ ২ থাকলে এই ওষুধ খাওয়া বারণ। চিকিৎসকরাই প্রয়োজন বুঝে প্রেসক্রিপশনে Zepbound লিখতে পারেন, তার বাইরে কেনার অনুমতি নেই। আরও একটি বিষয় মাথায় রাখা দরকার, রোগা হওয়ার ক্ষেত্রে এই ওষুধ কখনও এককালীন সমাধান নয়। অন্য ভাবেও চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া জরুরি।