ভূবনেশ্বর: সব ঠিক চললে আগামীকালই পরমাণু অস্ত্রবহনে সক্ষম ৫ হাজার কিলোমিটার পাল্লাসম্পন্ন অগ্নি-৫ (Agni-V) আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের (ICBM) প্রথম ইউজার ট্রায়াল করতে চলেছে ভারত। 


প্রতিরক্ষামন্ত্রক সূত্রে খবর, এই পরীক্ষার যাবতীয় প্রস্তুতি চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। ওড়িশা উপকূলের কাছে এপিজে আব্দুল কালাম দ্বীপে অবস্থিত প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অধিনস্থ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে এই উৎক্ষেপণ হবে। এর জন্য সেখানকার যাবতীয় খুঁটিনাটি ব্যবস্থা খতিয়ে দেখছে ভারতীয় সেনার স্ট্র্যাটেজিক ফোর্সেস কমান্ড।


প্রাথমিকভাবে ২০২০ সালে এই ক্ষেপণাস্ত্রটিকে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু কোভিড -১৯ অতিমারীর কারণে এই ক্ষেপণাস্ত্রের কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা করতে দেরি হয়েছিল। 


প্রতিরক্ষামন্ত্রক সূত্রে খবর, এই ক্ষেপণাস্ত্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ মাল্টিপল ইন্ডিপেন্ডেন্টলি টার্গেটেবল রি-এন্ট্রি ভেহিকল (MIRV)-এর কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাকি ছিল। যে কারণে, গোটা প্রক্রিয়াটি বিলম্বিত হয়ে পড়ে। 


সম্প্রতি, দেশের প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা (DRDO)-র তৈরি অগ্নি-পরিবারের নবীনতম সদস্য অগ্নি-প্রাইম ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা হয়। অত্যাধুনিক গাইডেন্স এবং নতুন প্রজন্মের প্রোপালশন সহ তিন-স্তরের কঠিন জ্বালানীযুক্ত অগ্নি-প্রাইম ক্ষেপণাস্ত্রটিকে ২৮ জুন পরীক্ষা করা হয়। 


প্রতিরক্ষামন্ত্রকের সূত্রের মতে, আগামীকাল অগ্নি-৫ এর ইউজার ট্রায়ালেও MIRV ওয়ারহেড অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে। এর আগে, মাল্টি-স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের সময় গোপনে MIRV সক্ষমতা পরীক্ষা করা হলেও এখনও পর্যন্ত কোনও লাইভ উৎক্ষেপণ করা হয়নি।


এক ওয়ারহেড সম্পন্ন ক্ষেপণাস্ত্র সাধারণত একটি টার্গেটের বিরুদ্ধে উৎক্ষেপণ করা হলেও MIRV সক্ষমতা সম্পন্ন একটি ক্ষেপণাস্ত্র একাধিক লক্ষ্যের উদ্দেশে ওয়ারহেড নিক্ষেপ করতে পারে।


একটি MIRV ক্ষেপণাস্ত্র একটি একক লঞ্চে একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে সক্ষম। ফলে, সাধারণ ক্ষেপণাস্ত্রের তুলনায় একটি অ্যান্টি-ব্যালিস্টিক মিসাইল সিস্টেম বা ক্ষেপণাস্ত্র-বিধ্বংসী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দ্বারা একে আটকানো আরও কঠিন।


প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, অগ্নি-৫ ক্ষেপণাস্ত্রের MIRV ক্ষমতা ভারতকে প্রয়োজনীয় প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রদান করবে। এই প্রযুক্তির ফলে, যুদ্ধের প্রস্তুতির ক্ষেত্রে নির্ণায়ক ভূমিকা নেবে এবং একইসঙ্গে অধিকমাত্রায় ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহার হ্রাস করবে।


ডিআরডিও-র তৈরি এই ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা বলা হচ্ছে ৫ হাজার কিলোমিটার। এই পাল্লা দিয়ে ক্ষেপণাস্ত্রটি এশিয়ার সব দেশ এবং আফ্রিকা ও ইউরোপের কিছু অংশে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।


রিং লেজার জাইরোস্কোপ-নির্ভর ইনার্শিয়াল নেভিগেশন সিস্টেম এবং মাইক্রো ইনার্শিয়াল নেভিগেশন সিস্টেম দিয়ে সজ্জিত অগ্নি-৫ ক্ষেপণাস্ত্র এবং জাইরোস্কোপ ক্ষেপণাস্ত্রের অবস্থান এবং গতিপথ প্রদর্শন করে।


১৭ মিটার দৈর্ঘ্য, ২ মিটার চওড়া, তিন পর্যায়ের কঠিন-জ্বালানি নির্ভর ক্ষেপণাস্ত্রটি ১.৫ টন ওয়ারহেড বহনে সক্ষম এবং মোট ওজন প্রায় ৫০ টন হতে পারে।


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, রাশিয়া, চিন, ফ্রান্স, ইজরায়েল এবং উত্তর কোরিয়ার পর ভারত অষ্টম দেশ যাদের নিজস্ব আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে।


আরও পড়ুন: অগ্নি সিরিজের নতুন ক্ষেপণাস্ত্রের সফল উৎক্ষেপণ ভারতের


আরও পড়ুন: ভারতীয় বায়ুসেনা পেল প্রথম Barak 8 MRSAM, কতটা গুরুত্বপূর্ণ? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?