মেয়ের ছবি জড়িয়ে ধরে বললাম, মাগো, আজ তুই বিচার পেলি: নির্ভয়ার মা

মেয়ের মৃত্যুর পর শুরু হয় তাঁদের আইনি লড়াই। সেই লড়াই অবশেষে আজ শেষ হয়েছে কিন্তু নির্ভয়ার বাবা মা জানাচ্ছেন, দেশের অবশিষ্ট মেয়েদের জন্য ন্যায় বিচারের লড়াই জারি রাখবেন তাঁরা।

Continues below advertisement
নয়াদিল্লি: ৭ বছর ৩ মাস আগে হাসপাতালের বিছানায় মেয়ের মুখটা আজও ভুলতে পারেন না আশা দেবী। আঘাতে চোখ বন্ধ হয়ে গিয়েছে, ফুলে ঢোল হয়ে গিয়েছে ক্ষতবিক্ষত ঠোঁট। শেষ শয্যাতেও বাবা মায়ের খবর রাখত সে, বুজে যাওয়া গলায় খুব আস্তে আস্তে জিজ্ঞেস করত, খেয়েছ তো? তাকে প্রবল যন্ত্রণা দিয়ে যারা মেরেছিল, তাদের মধ্যে নৃশংসতম ছিল যে সে আইনের ফাঁকে ছাড়া পেয়ে গিয়েছে। একজন আত্মহত্যা করেছে তিহারে। কিন্তু বাকি ৪ জনের আজ ফাঁসি হল। বদ্রীনাথ-আশা দেবী বলছেন, বিচার পেল তাঁদের মেয়ে। গতকাল যখন আদালতে গিয়েছিলাম, মেয়ের ছবির সামনে হাতজোড় করে প্রণাম করেছি। আদালত ফাঁসি নিশ্চিত করার পর ফিরে এসে মেয়ের ছবি জড়িয়ে ধরে বলেছি, মাগো, অবশেষে তুই বিচার পেলি। আমাদের মেয়ে আর কোনওদিন ফিরবে না কিন্তু আজকের পর দেশের অন্য মেয়েরা নিজেদের কিছুটা নিরাপদ বোধ করবে। লোকে বুঝবে, ছেলেদের শিক্ষা দিতে হবে, যে এমন অপরাধ করলে মৃত্যুদণ্ড হবেই। বলেছেন আশা দেবী। মেয়ের নামে তাঁকে গোটা বিশ্ব চেনে, তাই তার জন্য তিনি গর্বিত। তাকে বাঁচাতে পারেননি ঠিকই কিন্তু তার খুনীদের চরম সাজা দিয়ে মায়ের ধর্ম আজ পূর্ণ করেছেন।
মেয়ের মৃত্যুর পর শুরু হয় তাঁদের আইনি লড়াই। সেই লড়াই অবশেষে আজ শেষ হয়েছে কিন্তু নির্ভয়ার বাবা মা জানাচ্ছেন, দেশের অবশিষ্ট মেয়েদের জন্য ন্যায় বিচারের লড়াই জারি রাখবেন তাঁরা। বদ্রীনাথ বলেছেন, ৭ বছর ধরে এই দিনটার জন্য অপেক্ষা করেছেন তাঁরা। অবশেষে বিচার মিলেছে, শুধু তাঁরা নন, গোটা দেশের কাছে আজ বিরাট আনন্দের দিন। গোটা দেশ বিচার পেয়েছে আজ। কোনও মেয়ে তখনই খুশি হয়, যখন তার বাবা মা খুশি হন। আজ তাঁরা এত খুশি, নির্ভয়াও নিশ্চয় ভীষণ খুশি হয়েছে। আজ শান্তি পেয়েছে তার আত্মা। মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে এমন আইন তৈরি হোক, যাতে আর কোনও বাবা মাকে বিচারের জন্য এতদিন অপেক্ষা না করতে হয়।
যেভাবে দোষীরা বারবার ক্ষমাভিক্ষার আবেদন করে ফাঁসি পিছিয়ে দিচ্ছিল, তাতে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন নির্ভয়ার মা বাবা। তাঁরা বলেছেন, এই মামলার সূত্রে দেশের আইনের খামতি সকলের সামনে এসে গিয়েছে, প্রশ্ন উঠেছে সংবিধান নিয়ে। কিন্তু এই সংবিধান আর আইনই বিচার দিয়েছে তাঁদের। এর ফলে আইনের প্রতি বিশ্বাস বাড়বে দেশের মহিলা সমাজের। আজকের দিন তাই শুধু মহিলাদের জন্য। আশা দেবী বলেছেন।
Continues below advertisement
Sponsored Links by Taboola