কলকাতা: বিরোধীরা হিসার অভিযোগ আনলেও, আক্ষরিক অর্থেই হেসেখেলে ভোট তুলেছে দল। কলকাতা পুরসভার ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৩৪টি নিশ্চিত ভাবে তাদের দখলে (KMC Election Result 2021 )। কিন্তু তৃণমূলের অন্দরে এখনও ঝুলছে লাখ টাকার প্রশ্ন। আর তা হল, কলকাতার পরবর্তী মেয়র (KMC Election Result 2021 ) কে হবেন? বৃহস্পতিবার পুরবোর্ড নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চলেছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। সেখানেই মেয়র পদে নাম চূড়ান্ত হতে পারে বলে জানা যাচ্ছে।
মঙ্গলবার কলকাতা পুরভোটের ফলাফল নিয়ে যখন ব্যস্ত তৃণমূল সেই সময় গুয়াহাটিতে মমতা। সেখানে পরবর্তী মেয়র কে হবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, "২৩ ডিসেম্বর পুরবোর্ড নিয়ে বৈঠক রয়েছে। সেখানে দলই ঠিক করবেন, কে মেয়র হবেন। তার পর সরকারি নিয়ম মেনেই শপথগ্রহণের ব্যবস্থা করা হবে।"
পুরভোটের দিন ক্ষণ ঘোষণা হওয়ার অনেক আগে থেকেই কলকাতার পরবর্তী মেয়র নিয়ে জল্পনা চলে আসছে। তাতে প্রথমেই মমতার বিশ্বস্ত বলে পরিচিত ফিরহাদ হাকিমের (Firhad Hakim) নাম যেমন উঠে এসেছে, তেমনই রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকেও (Chandrima Bhattacharya)দৌড়ে এগিয়ে রাখেন অনেকে। কিন্তু এ নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব।
মঙ্গলবার পুরভোটের ফলাফল বেরনোর পর সরাসরি ফিরহাদকেই এ নিয়ে প্রশ্ন করে বসেন জনৈক সাংবাদিক। জানতে চাওয়া হয়, কলকাতার মেয়র হিসেবে কি ফের তাঁকে দেখা যাবে? তবে দলের প্রোটোকল মেনেই জবাব দিয়েছেন ফিরহাদ। তাঁর কথায়, “পরবর্তী মেয়র কে হবেন, তা দলই ঠিক করবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ নিয়ে বৈঠক করবেন। সকলের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেবেন।”
কিন্তু ফিরহাদ বৈঠকের কথা বললেও, নির্বাচনের ঢের আগে থেকেই পরবর্তী মেয়র ঠিক হয়ে রয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই ফিরহাদকে এগিয়ে রাখছেন সকলে। কারণ স্কুটারে চেপে নবান্নে যাওয়া হোক বা ভোট পরিচালনা, ইদানীং কালে মমতার অন্যতম ভরসার জায়গা হয়ে উঠেছেন ফিরহাদ।
কিন্তু ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে জিতে তৃতীয় বার ক্ষমতায় ফেরার পর ‘এক নেতা, এক পদ’ নীতিতে জোর দিয়েছিলেন মমতা এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। তার জন্য জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, মলয় ঘটক, সৌমেন মহাপাত্র এবং অরূপ রায়ের মতো নেতাকে সাংগঠনিক দায়িত্ব থেকে সরানো হয়।
আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: উৎসবের মতো নির্বাচন হয়েছে, মাথা নত করে কাজ করে যাব: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
পুরভোটে প্রার্থিচয়নের ক্ষেত্রে যদিও এই ‘এক নেতা, এক পদ’ নীতি খাটেনি। যে কারণে মন্ত্রী এবং বিধায়ক হওয়া সত্ত্বেও পুরভোটের প্রার্থী হন ফিরহাদ, দেবাশিস কুমার, রত্না চট্টোপাধ্যায়, অতীন ঘোষরা। তবে নিজ নিজ এলাকায় এঁদের জনপ্রিয়তা এবং প্রভাবের কথা মাথায় রেখেই প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করানো হয় বলে মনে করছেন দলের একাংশ।
সে ক্ষেত্রে নীতি রক্ষাও হয়, আবার ফিরহাদের প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগও খণ্ডন করা যায়, এমন কাউকেই মেয়র করা হতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। আর এ ক্ষেত্রে সবার আগে যাঁর নাম উঠে আসছে, তিনি হলেন বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া বাবুল সুপ্রিয় (Babul Supriyo)।
বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবি এবং দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে মতানৈক্যের জেরে গত ১৮ সেপ্টেম্বর তৃণমূলে যোগ দেন বাবুল। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সেই সময়ই জানিয়ে দেন যে, ব্যাকফুটে খেলতে তিনি তৃণমূলে আসেননি। প্রথম একাদশে থেকে ব্যাট করার জন্যই তাঁকে বেছে নিয়েছেন মমতা এবং অভিষেক। অর্পিতা ঘোষ ইস্তফা দিয়ে সরে এলেও, তাঁর জায়গায় বাবুলকে সংসদে পাঠানো হয়নি। গোয়া-ত্রিপুরাতেও কোনও দায়িত্বে নেই তিনি। তাই বাবুলের কলকাতার মেয়র হওয়ার সম্ভাবনাই ক্রমশ জোরালো হচ্ছে।
আরও পড়ুন: KMC Election Result 2021:গণনার প্রবণতায় প্রাপ্ত ভোটের হারে বিজেপিকে পিছনে ফেলল বামফ্রন্ট
তবে ফিরহাদ, চন্দ্রিমাদের টপকে শেষ মুহূর্তে বাবুল বাজিমাত করতে পারেন কি না, তা সময়ই বলবে। আবার মেয়র পদে ফিরহাদ ফিরছেন বলে আশাবাদী তাঁর অনুগামীরা। যদিও শেষ মুহূর্তে অন্য কাউকে এনে মমতা চমকও দিতে পারেন বলে মনে করছেন অনেকেই।