Manmohan Singh Memorial: রাজঘাটে প্রণবের পাশেই তৈরি হোক মনমোহনের স্মৃতিসৌধ, প্রস্তাব কেন্দ্রের, নতুন বিতর্কের সম্ভাবনা?
Pranab Mukherjee: প্রণবের জন্য প্রস্তাবিত স্মৃতিসৌধের পাশেই মনমোহনের জন্য জমি দেওয়া হল কেন, সেই নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

নয়াদিল্লি: রাজঘাটে তৈরি হবে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের স্মৃতিসৌধ। সেখানে একটি জায়গায়ই পছন্দ হল কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারের। মনমোহ সিংহের পরিবারকে সেই মতো প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। জানা গিয়েছে, রাজঘাটে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের স্মৃতিসৌধ তৈরিতে উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার। আর তার পাশের জমিতেই মনমোহনের স্মৃতিসৌধ তৈরির প্রস্তাব গিয়েছে কেন্দ্র।
মনমোহনের স্মৃতিসৌধ তৈরির জন্য একটি ট্রাস্ট গড়ার কথা জানিয়েছিল কেন্দ্র। দিল্লি সূত্রে খবর, মনমোহনের পরিবারের তরফে কী করা হয়, তার জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। ট্রাস্ট গঠন করা হলেই জমি হস্তান্তরিত করা হবে। পাশাপাশি, মনমোহনের স্মৃতিসৌধ তৈরির জন্য ২৫ লক্ষ টাকা দেবে কেন্দ্র। দেশের অর্থনীতির সংস্কার ঘটানো মনমোহন ২০০৪ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। গত বছর ২৬ জিসেম্বর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। সেই সময় তাঁর শেষকৃত্য এবং স্মৃতিসৌধ গড়া নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে সংঘাত দেখা দেয় কংগ্রেসের। এর পাল্টা পিভি নরসিংহ রাওয়ের স্মৃতিসৌধ গড়া নিয়ে কেন কংগ্রেস এত তৎপরতা দেখায়নি, পাল্টা প্রশ্ন তোলে বিজেপি। সেই সংঘাত কাটিয়ে মনমোহনের স্মৃতিসৌধ তৈরির জন্য জমি বাছল কেন্দ্র।
যদিও প্রণবের জন্য প্রস্তাবিত স্মৃতিসৌধের পাশেই মনমোহনের জন্য জমি দেওয়া হল কেন, সেই নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। কারণ মনমোহনের মৃত্যপর পরই প্রণবের স্মৃতিসৌধ তৈরির প্রস্তাব দেয় কেন্দ্র। রাজঘাটের ‘রাষ্ট্রীয় সমিতি‘ কমপ্লেক্সে প্রণবের স্মৃতি তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয়।
মনমোহন এবং প্রণব, দু’জনের রাজনৈতিক জীবনই শুরু হয় কংগ্রেসের হাত ধরে। দু’জনই দেশের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। মনমেহন যখন প্রধানন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি হিসেবে অধিষ্ঠিত ছিলেন প্রণব। যদিও মনমোহন এবং প্রণবের রাজনৈতিক উত্তরাধিকার নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত হালফিলেই। মনমোহনের মৃত্যুর পর কংগ্রেসের প্রতি প্রণব-কন্যা যে অসন্তোষ প্রকাশ করেন, সেই নিয়েও কম চর্চা হয়নি।
রাজঘাটে মনমোহনের শেষকৃত্য এবং স্মৃতিসৌধ গড়ার দাবিতে কংগ্রেস যখন অনড়, সেই সময় তীব্র কটাক্ষ করেছিলেন প্রণব-কন্যা শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের ছবি পোস্ট করে জানান, প্রণবের স্মৃতিসৌধ গড়তে আপনা থেকেই উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্র। এর পর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্যে শর্মিষ্ঠা লেখেন, 'বাবা বলতেন, রাষ্ট্রীয় সম্মান যেতে চাইতে নেই। আপনা থেকে পেতে হয়'।
২০২০ সালের ৩১ অগাস্ট শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন প্রণব। মনমোহনের মৃত্যুতে, চার বছর পর হঠাৎ প্রণবের স্মৃতিসৌধ তৈরিতে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার এত উদ্যোগী হল কেন, সেই নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। আজীবন কংগ্রেসে প্রণবের সঙ্গে কংগ্রেসের দূরত্ব তৈরি হওয়া নিয়েও নানা তত্ত্ব উঠে আসে। মৃত্যুর কয়েক বছর আগে নাগপুরে রাষ্ট্রীয় স্বয়ম সেবক সঙ্ঘের প্রশিক্ষণ শিবিরে হাজির হওয়াতেই প্রণবের সঙ্গে কংগ্রেসের সম্পর্কে সুতো আলগা হয়ে যায় বলে জানা যায়।
শর্মিষ্ঠা অভিযোগ করেন, স্মৃতিসৌধ তৈরি তো দূর, বাবার মৃত্যুর পর কংগ্রেসের তরফে শোকসভা আয়োজনেরও কোনও উদ্যোগ চোখে পড়েনি। যদিও কংগ্রেসের যুক্তি ছিল, প্রণব রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত হন, যা একটি অরাজনৈতিক পদ। তাই দলীয় সুপারিশ জমা দেওয়া হয়নি। কিন্তু তাতেও বিতর্ক থামেনি। এবার সেই প্রণবের পাশেই মনমোহনের স্মৃতিসৌধ তৈরির কথা জানাল কেন্দ্র।
বাংলা কংগ্রেসের হাত ধরে রাজনৈতিক জীবনের সূচনা ঘটে প্রণবের। ইন্দিরা গাঁধী তাঁকে জাতীয় কংগ্রেসে টেনে নেন। অতি অল্প সময়ের মধ্যে ইন্দিরার অতি বিশ্বস্তও হয়ে ওঠেন প্রণব। দলের অন্দরে তো বটেই, কেন্দ্রে কংগ্রেসের সরকারেও অর্থমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী, বিদেশমন্ত্রীর মতো একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদ অলঙ্কৃত করেন প্রণব। ইন্দিরার প্রয়াণের পর কংগ্রেসের সঙ্গে সাময়িক দূরত্ব তৈরি হয় তাঁর। পৃথক রাষ্ট্রীয় সমাজবাদী কংগ্রেস দলেরও প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু আবারও কংগ্রেসেই ফিরে যান প্রণব।
শোনা যায়, ২০০৪ সালে সনিয়া গাঁধী যখন UPA সরকারের প্রধানমন্ত্রী হতে অস্বীকার করেন, সেই পদের দাবিদার হিসেবে আশায় বুক বেঁধেছিলেন প্রণব। কিন্তু আচমকা মনমোহনের নাম ঘোষণা করা হয় দলের তরফে। তাতেও প্রণব ক্ষুণ্ণ হন। শেষ পর্যন্ত, ২০১২ সালে দেশের রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত হন প্রণব, যা ছিল অরাজনৈতিক পদ। সেই থেকেই কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁর সমীকরণে বিস্তর পরিবর্তন আসে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রণবের দহরম মহরম নিয়েও প্রশ্ন ওঠে কংগ্রেসের।
তবে কংগ্রেসের সঙ্গে প্রণবের দূরত্ব সবচেয়ে বাড়ে ২০১৮ সালে। ততদিনের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব থেকে অবসর নিয়েছেন তিনি। সেবছর ৭ জুন বিজেপি-র অভিভাবক সংস্থা, রাষ্ট্রীয় স্বয়ম সেবক সঙ্ঘের নাগপুরের প্রশিক্ষণ শিবিরে উপস্থিত হন প্রণব। আজীবন নিজের কংগ্রেসি পরিচয়কে সামনে রেখে একের পর এক উচ্চতা ছোঁয়া প্রণব কোন যুক্তিতে সঙ্ঘের শিবিরে গেলেন, সেই নিয়ে বিতর্ক বাধে। দলের তদানীন্তন মুখপাত্র টম বেদাক্কনকে বলতে শোনা যায়, "কেন গিয়েছেন, ওঁর কাছেই জানতে চান। আমরা শুধু এটুকুই বলতে পারি যে, ওদের সঙ্গে আমাদের আদর্শের বিস্তর ফারাক রয়েছে।" প্রণবের প্রয়াণের পরও কংগ্রেসের প্রতিক্রিয়া শীতল ছিল বলে পরবর্তীতে সরব হন শর্মিষ্ঠা।
ট্রেন্ডিং
সেরা শিরোনাম
