নয়াদিল্লি: বাংলায় একা লড়াইয়ের ঘোষণা করেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই রেশ কাটিয়ে ওঠার আগেই ফের সংশয় বিজেপি বিরোধী I.N.D.I.A জোটে (I.N.D.I.A Alliance)। সংযুক্ত জনতা দলের নেতা তথা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারকে (Nitish Kumar) ঘিরে এবার দোলাচল দেখা দিয়েছে। এক দিকে, কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গাঁধীর 'ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা'য় অংশ নিচ্ছেন না নীতীশ। পাশাপাশি তাঁকে নিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্ট করেও মুছে দিলেন লালুপ্রসাদ যাদবের মেয়ে রোহিণী আচার্য। সেই নিয়েই ফের প্রমাদ গোনা শুরু হয়েছে। কারণ ইতিমধ্যেই বিকল্প ভাবনা নিয়ে নীতীশ দলের বিধায়কদের নিয়ে বৈঠক সেরে ফেলেছেন বলে খবর।
এখনও পর্যন্ত যে খবর মিলেছে, সেই অনুযায়ী, পটনায় দলের বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠক করেন নীতীশ। বিজেপি, জিতন রাম মাঝি এবং বাকিদের সহায়তায় বর্তমান বিধানসভা ভেঙে দিয়ে নতুন বিধানসভার দাবি জানানো নিয়ে সেখানে আলোচনা হয়েছে বলে খবর। বিহারে বিজেপি-র সভাপতি সম্রাট চৌধুরি এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী চৌবে বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই দিল্লি রওনা দিয়েছেন বলে খবর। সেখানে অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে তাঁদের। অন্য দিকে, রাষ্ট্রীয় জনতা দলের অন্দরেও তৎপরতা শুরু হয়েছে। নীতীশ বেরিয়ে গেলে ম্যাজিক সংখ্যা ১২২-এ পৌঁছতে লালু-শিবিরের আরও আট জন বিধায়কের প্রয়োজন পড়বে। সেই লক্ষ্যপূরণে তৎপরতা শুরু হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
এই খবর যদি সত্য হয়, তাহলে এই নিয়ে পঞ্চম বার শিবির বদল করবেন নীতীশ। ২০১৩ সাল থেকে কখনও NDA, কখনও বিজেপি বিরোধী শিবিরে অবস্থান করে আসছেন তিনি। শেষ বার ২০২২ সালে শিবির বদল করেন তিনি। বিজেপি নেতৃত্বাধীন NDA থেকে বেরিয়ে আসেন। I.N.D.I.A জোট গড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন নীতীশ।
আগামী ৩০ জানুয়ারি বাংলা থেকে বিহারে প্রবেশ করছে রাহুলের 'ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা'। সেখানে নীতীশ এবং তাঁর দলের নেতারা যাত্রায় শামিল হবেন বলেই আশা ছিল। বুধবার সেই মর্মে কংগ্রেসের তরফে আমন্ত্রণপত্রও পৌঁছয়। কিন্তু এখন জানা যাচ্ছে, যাত্রায় যাবেন বলে কথা দেননি নীতীশ। আসন সমঝোতা নিয়ে কংগ্রেসের তরফে যে গড়িমসি চলছে, তাতে নীতীশ ক্ষুণ্ণ হয়েছেন বলে সংযুক্ত জনতা দলের একটি সূত্র মারফত জানা গিয়েছে।
আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি-কে পরাস্ত করতে বিরোধী দলগুলিকে একছাতার তলায় নিয়ে আসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল নীতীশের। I.N.D.I.A জোটের মুখ হিসেবেও একসময় জোর চর্চা শুরু হয়েছিল তাঁকে নিয়ে। কিন্তু জোটের বৈঠকে নীতীশের পরিবর্তে মল্লিকার্জুন খড়্গের নাম প্রস্তাব করেন মমতা।তার পর থেকেই নীতীশ দূরত্ব বাড়িয়ে নিয়েছেন বলে খবর। সম্প্রতি জোটের আহ্বায়ক হওয়ার প্রস্তাবও দেওয়া হয় নীতীশকে। কিন্তু তিনি সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।
আরও পড়ুন: I.N.D.I.A Alliance: অধীরের জন্যই একা চলার সিদ্ধান্ত মমতার? প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির দিকে আঙুল ডেরেকের
এরই মধ্যে সম্প্রতি একটি সভায় রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্রের ধারা নিয়ে সরব হন নীতীশ। বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কর্পূরী ঠাকুরের জন্মবার্ষিকীতে নীতীশকে বলতে শোনা যায়, নিজের পরিবারকে রাজনীতিতে আনেননি কর্পূরী। কর্পূরীকে প্রাপ্য সম্মান প্রদানের জন্য কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারকে ধন্যবাদও জানান তিনি। সরাসরি কারও নাম মুখে না আনলেও, রাষ্ট্রীয় জনতা দলের নেতা লালুপ্রসাদ যাদব এবং তাঁর পরিবারকে নিশানা করেই নীতীশ এমন মন্তব্য করেন বলে গুঞ্জন শুরু হয়। সেই নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিক্রিয়া জানান লালু-কন্যা রোহিণী। তিনি লেখেন, 'অনেক সময় নিজের খামতিগুলি দেখতে পায় না মানুষ। ঔদ্ধত্য দেখিয়ে অন্যের গায়ে কাদা ছুড়তে ব্যস্ত থাকে।" আর একটি পোস্টে লেখেন, 'অযোগ্য ব্যক্তি বেশি গুরুত্ব পেলে কতটা রাগ হওয়া উচিত? শঠতাপূর্ণ উদ্দেশ্য নিয়ে কেউ ঘুরলে, প্রশ্ন তোলার ক্ষমতা কার আছে'?
কারও নাম না করেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই পোস্ট দিয়েছিলেন রোহিণী। কিন্তু কিছু ক্ষণ পরই দু'টি পোস্টটি তুলে নেন তিনি। কিন্তু বিষয়টি সেখানেই থামেনি। শোনা যাচ্ছে, রোহিণীর ওই পোস্ট সম্পর্কে দলের নেতাদের কাছে জানতে চেয়েছেন নীতীশ। বিহারে লালুর দলের সঙ্গে নীতীশের জোট নিয়ে তাই ধন্দ দেখা দিয়েছে। বিধানসভা টিকে থাকা নিয়েও চলছে জল্পনা। তবে নীতীশকে ফেরত নেওয়ায় আপত্তি রয়েছে বিজেপি-র অন্দরে। যদিও বা নীতীশ বিজেপি-র সঙ্গে আবার হাত মেলান, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী পদে তাঁকে রাখা নিয়ে আপত্তি রয়েছে গেরুয়া শিবিরের বড় অংশের।