কলকাতা : কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ-ক্ষেত্রে সামনে যখন নিজের গুরুজনেরা, ভাইরা, তখনই মানসিক জোর হারান তৃতীয় পাণ্ডব। তিনি অস্ত্রত্যাগ করার চিন্তাও করেন। তখন পার্থসারথি তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, তিনি বৃথাই শোক করছেন। আসলে আত্মার মৃত্যু নেই। কুরুক্ষেত্রর যুদ্ধে যে মৃত্যুগুলি হবে সেগুলো শুধু সূক্ষ্ম দেহের মৃত্যু। আত্মা তো অমর। আত্মা এক দেহ থেকে অন্য দেহ ধারণ করে মাত্র। অর্জুন আত্মাকে হত্যা করতে পারবে না। এই প্রসঙ্গে নানা ব্যাখ্যা দিয়েছেন শ্রীকৃষ্ণ। গীতার সাংখ্য যোগে লিপিবদ্ধ সেই পর্ব, যেখানে কৃষ্ণ অর্জুনকে আত্মার স্বরূপ চেনাচ্ছেন। যেমন এই ১৯ নম্বর শ্লোকে। 

য এনং বেত্তি হন্তারং যশ্চৈনং মন্যতে হতম্।

উভৌ ভৌ ন বিজানীতো নায়ং হন্তি ন হন্যতে৷৷ 

এই শ্লোকের অর্থ - যিনি এই আত্মাকে হত্যাকারী মনে করেন কিংবা যিনি এঁকে নিহত বলে মনে করেন তাঁরা উভয়েই আত্মার স্বরূপ জানেন না । কারণ আত্মা প্রকৃতপক্ষে কাউকে হত্যা করে না এবং কারও দ্বারা হতও হয় না।।

এবার প্রশ্ন, আত্মা যদি না মরে এবং কাউকে না মারে, তাহলে মরে কে,  মারেই বা কে ? তারও ব্যাখ্যা রয়েছে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায়। আমরা যে শরীর দেখতে পাই, যে শরীর নিয়ে আমাদের যাবতীয় চিন্তা, তা হল  স্থূল শরীর। আর আত্মা হল সূক্ষ্ম শরীর। এই আত্মা যখন দেহকে ছেড়ে যায়, তখনই তাকে ‘মৃত্যু’ বলা হয়। তার মানে, আত্মা কখনওই মরে না বা মারে না। পুরোটাই ঘটে স্থূল শরীরের মধ্যে। 
 
গীতার ১৮ নম্বর শ্লোকে বলা হয়েছে - 


অন্তবন্ত ইমে দেহা নিত্যস্যোক্তাঃ শরীরিণঃ

অনাশিনোহপ্রমেয়স্য তস্মাদ্ যুধ্যস্ব ভারত।।

এর দ্বারা বোঝানো হয়েছে, যে স্থূল শরীরের মন ও বুদ্ধি আছে, সেই শরীরের দ্বারা যখন অন্য কোনও স্থূল দেহের প্রাণ চলে যায়, তখন সেই স্থূল শরীরই হত্যাকারী। আত্মা কিন্তু হত্যাকারী নয়। কিন্তু যাদের পাণ্ডত্য নেই, তারা সেটা মনে করেন না। তারা আত্মাকেই হত্যাকারী বলে মনে করে।  অজ্ঞ ব্যক্তিরা আত্মাকে হত্যাকারী বলে মনে করে। তাই তাঁদের কুফল ভোগ করতে হয়।


শুধু ১৮ ও ১৯ তম শ্লোকেই নয়, পরবর্তী কয়েকটি শ্লোকেও এই দর্শন বুঝিয়েছেন ভগবান। শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, আত্মাকে কোনো কিছুর সাহায্যে হত্যা করা যায় না, তার কারণ কী । 


(তথ্যসূত্র: শ্রীমদভগবদ্ গীতা, (তত্ত্ববিবেচনী), গীতা প্রেস, গোরক্ষপুর )              


আরও পড়ুন :


মৃত্যুর পর আত্মার কী হয়? কুরুক্ষেত্রে অর্জুনকে কী বলেছিলেন সখা কৃষ্ণ?