নয়াদিল্লি:  নিরাপত্তার সব সীমারেখা পার করে ‘গুরুতর অসুস্থ’ হয়ে পড়েছে পৃথিবী। যথেচ্ছাচার এবং স্বার্থপরতা চরমে ওঠায় ঘোর বিপদ উপস্থিত হয়েছে বলে ক'দিন আগেই জানিয়েছেন গবেষকরা। এবারে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের ঘনত্বও রেকর্ড গড়ল। আমেরিকার ন্যাশনাল ওশিয়ানিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মে মাসের গড় হিসেবে বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইডের ঘনত্ব ৪২৪ PPM। অর্থাৎ বাতাসের প্রতিটি কণাকে যদি গোনা যায়, তাহলে ১০ লক্ষের মধ্যে ৪২৪টিই কার্বন ডাই অক্সাইডের (Carbon Dioxide Levels)।


প্রাক শিল্প যুগে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের যে ঘনত্ব ছিল, বর্তমানে তা ৫০ শতাংশ বেশি বলে জানিয়েছে আমেরিকার ন্যাশনাল ওশিয়ানিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (NOAA)। জলবয়ু পরিবর্তন (Climate Change), বিশ্ব উষ্ণায়নের (Global Warming) জন্য বরাবর গ্রিন হাউস গ্যাসের নির্গমনকে দায়ী করে আসছেন বিজ্ঞানীরা। ক্ষতিকর গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির মধ্যে অন্যতম হল কার্বন ডাই অক্সাইড। এ ছাড়াও রয়েছে মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড এবং HFC, HCFC এবং ওজোনের ক্ষতিকর গ্যাস। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ নির্গমনই ঘটে জ্বালানি থেকে। 


আরও পড়ুন: Air India Flight: ইঞ্জিন বিভ্রাটে ২ দিন আটকে রাশিয়ার প্রত্যন্ত শহরে, অবশেষে উড়ান এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানের


NOAA জানিয়েছে, গত বছরের সঙ্গে তুলনা করলে, এ বছর বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাউ অক্সাইডের ঘনত্ব বেড়েছে উল্লেযোগ্য হারে। গত বছর মার্চ মাসের সঙ্গে তুলনা করলে, এ বছর বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডই অক্সাইডের ঘনত্ব ৩ PPM বেশি। বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডই অক্সাইডের ঘনত্বের এই ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধির প্রভাব স্থলভূমি নয়, সমুদ্র এবং সাগর ও মহসাগরের উপরও পড়ছে। বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড এবং অতিরিক্ত তাপমাত্রা শুষে নেয় সমুদ্র। এর ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রাও বিপজ্জনক হারে বাড়ছে। এতে সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্রও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সমুদ্রের জলস্তর বাড়ছে এবং সমুদ্রের অম্লকরণ ঘটছে। 


বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এ ভাবে কার্বন ডাই অক্সাইডের ঘনত্ব বাড়তে থাকলে, সমুদ্রের তাপমাত্রাও বাড়বে। এর ফলে সমুদ্রের জলের রয়াসনেও হেরফের ঘটবে। তাতে জলে অক্সিজেন কম দ্রবীভূত হবে। সামুদ্রিক প্রাণীদের অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়বে। 


উন্নত প্রযুক্তির সাহায্য়ে, এই মুহূর্তে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের ঘনত্ব নির্ধারণ করেন বিজ্ঞানীরা। এমনি ৪ লক্ষ বছর আগে এই ঘনত্ব কত ছিল, তাও বের করা সম্ভব। এমনিতে লক্ষ লক্ষ বছর ধরে মেরুপ্রদেশের বরফের অন্তস্থলের তাপমাত্রায় কোনও পরিবর্তন চোখে পড়েনি। তুষার যুগে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের ঘনত্ব ছিল ২০০ PPM. তার পরবর্তীতে তা বেড়ে ২৮০ PPM হয়। কিন্তু গত শতাব্দির মাঝামাঝি সময় থেকে অস্বাভাাবিক বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গিয়েছে। চলতি শতকের নয়ের দশকে যখন জসবায়ু পরিবর্তন নিয়ে উদ্বেগ ধরা পড়ে, সেই সময় বায়ুমণ্ডলের কার্বন ডই অক্সাইডের ঘনত্ব ছিল ৩৫৭ PPM.


২০১৩ সালের মে মাসে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের ঘনত্ব ৪০০ PPM-এর কোটা পার করে ফেলে। গবেষণায় দেখ গিয়েছে, ১৯৬০ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত প্রতি বছরে কার্বন ডাই অক্সাইডের ঘনত্ব ১ PPM করে বাড়ছিল। ২০১০ সালে সেই বৃদ্ধি আরও তীব্র হয়ে ২.৫ PPM হয়ে ধরা দেয়। এ বছর তা আরও বেড়ে ৩ PPM হয়েছে। বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের ঘনত্ব ২০০ থেকে ৩০০-র মধ্যে থাকলে নিরাপদ বলে ধরা হয়।