বেঙ্গালুরু: মহাকাশ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরেই নিজের ছাপ রেখেছে ভারত। এবার চাঁদের লক্ষ্যে দৌড়ের একেবারে শেষ ল্যাপে ভারত। চন্দ্রযান ৩ (Chandrayaan 3 Landing) যদি সফল ভাবে দক্ষিণ মেরুর বুকে নামতে পারে, তাহলে মানব সভ্যতায় ইতিহাস তৈরি হবে। ফলে এই দৌড় বিজ্ঞানের। জাতীয় স্বার্থের দিকে তাকলে এই দৌড় কিছুটা রাজনীতিরও। আর তার সঙ্গেই রয়েছে আরও একটি বিষয়- অর্থ।
বুধবার নির্দিষ্ট সময়ে সফলভাবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুর (South Pole) মাটি যদি চন্দ্রযান ৩ ছুঁয়ে ফেলতে পারে, তাহলে শুধু বিজ্ঞানে মাইলস্টোনই তৈরি হবে না। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এমনটা হলে মহাকাশ সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডের যে শিল্প (Space Industry) গড়ে উঠছে তাতে অনেকটা গতি আসবে।
কয়েকদিন আগেই চাঁদের (Moon Mission) দক্ষিণ মেরুতে নামার লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল রাশিয়ার (Russia) মহাকাশযান লুনা (Luna)। তাদের লক্ষ্য ছিল ভারতের চন্দ্রযান-৩ (Chandrayaan 3) এর আগে 'অজানা' দক্ষিণ মেরুতে নামা। কিন্তু সেটি ভেঙে পড়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে আগে বিনিয়োগ টানার জন্য়ই এই তাড়া ছিল রাশিয়ার। এখন মহাকাশ অন্বেষণও ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। সেই কারণেই চাঁদের দক্ষিণ মেরু নিয়ে এতটা উৎসাহ রয়েছে। কারণ বিজ্ঞানীদের একাংশের আশা দক্ষিণ মেরুতে জল-বরফ থাকার কারণে ভবিষ্যতে চাঁদে কলোনি তৈরি, খননকাজ চালানোর জন্য ওই এলাকার বিষয়ে জানা প্রয়োজন। শুধু তাই নয়, মঙ্গলে অভিযানের জন্য চাঁদের মাটিকে ব্যবহারের ভাবনাচিন্তাও রয়েছে। সেই কারণেই দক্ষিণ মেরুতে যদি চন্দ্রযান ৩ ল্যান্ড করে তাহলে শুধু বিজ্ঞান নয় ব্যবসায়িক দিক থেকেও কয়েক কদম এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এরই সঙ্গে আরও একটি দিক রয়েছে, মহাকাশ অভিযানে (Space Mission) বেসরকারিকরণ। ভারতেও এমন করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। মহাকাশ অভিযানে বিদেশি বিনিয়োগ টানার লক্ষ্য়ও রয়েছে। আগামী দশকের মধ্যে বিশ্বের Launch market-এ ভারতের অংশীদারিত্ব অন্তত ৫ গুণ বাড়ানোর লক্ষ্য রয়েছে। যদি চন্দ্রযান ৩ সফল হয়, তাহলে সেই লক্ষ্যপূরণে অনেকটা এগোন যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। স্বল্প খরচে উন্নত প্রযুক্তি অর্থাৎ cost-competitive engineering-এর নিরিখে ভারতের মহাকাশ বিজ্ঞানক্ষেত্র অনেকটাই সুনাম অর্জন করতে পারবে। চন্দ্রযান ৩ অভিযানের জন্য ৭৪ মিলিয়ন বাজেট ছিল ইসরোর। সেখানে Artemis অভিযানের জন্য় NASA বাজেট রেখেছে ৯৩ বিলিয়ন ডলার।
এলন মাস্কের Space X থেকে Astrobotic, Axiom Space বা জেফ বেজোসের Blue Origin- এগুলো সবকটিই বেসরকারি মহাকাশ অভিযান সংস্থা। কোনওটি বেসরকারি ভাবে রকেট লঞ্চ করায়। কোনওটি নাসার (NASA) নভোচরদের চাঁদে পৌঁছনোর কন্ট্রাক্ট নিচ্ছে। নতুন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (International Space Station) তৈরির জন্যও কাজ চালানো হচ্ছে বেসরকারিভাবে। Axiom জানিয়েছে ইতিমধ্যেই সৌদি ও দক্ষিণ কোরিয়ার বিনিয়োগকারীদের থেকে ৩৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ মিলেছে। নাসার পথে এবার সেই দৌড়ে কি ভারতও (India) ঢুকবে?
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে লাইভ হোক চন্দ্রযান ৩-ল্যান্ডিং! ভারতের ভূয়সী প্রশংসায় প্রাক্তন পাক-মন্ত্রী