নয়াদিল্লি: মহাকাশে থাকাকালীনই স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ দেখা গিয়েছিল। সুনীতা উইলিয়ামসের শীর্ণ চেহারা দেখে চমকে গিয়েছিলেন সকলেই। সাড়ে ন’মাস পর সুনীতা পৃথিবীতে ফেরার পরও তাঁর এবং সহযাত্রী ব্যারি বুচ উইলমোরের স্বাস্থ্য ঘিরে উদ্বেগ কাটছে না। এতদিন মহাকাশে থাকার পর পৃথিবীর সঙ্গে নতুন করে সহজাত হয়ে উঠতে তাঁদের বেশ খানিকটা সময় লাগতে পারে বলে জানা যাচ্ছে। তাঁদের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে ৪৫ দিনের বিশেষ পুনর্বাসন প্রকল্প গ্রহণ করল আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র NASA. (Sunita Williams Rehabilitation Programme)
মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বাইরে, মহাকাশে দীর্ঘদিন থাকলে স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এদিন সুনীতা এবং ব্যারি ফিরে আসার পর তাঁদের স্বাস্থ্য নিয়েও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার আটলান্টিক মহাসাগরে অবতরণ করেন সুনীতা, ব্য়ারি, NASA-র আর এক বিজ্ঞানী নিক হেগ এবং রাশিয়ার ROSCOSMOS-এর অলেকজান্ডার গরবুনভ। এখনই নিজ নিজ বাড়ি ফিরতে পারবেন না তাঁরা। বরং সেখান থেকে সটান হিউস্টনে Johnson Space Centre পুনর্বাসন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সুনীতাদের। পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি যাতে আবার তাঁদের সহজাত হয়ে ওঠে, সেই প্রচেষ্টা চলবে সেখানে। (NASA News)
দীর্ঘদিন মহাকাশে থাকলে পেশির ক্ষমতা কমে যায়, ক্ষয় শুরু হয় হাড়ের, কমে সহ্যশক্তি, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। পৃথিবীতে মানুষ যে স্বতঃস্ফূর্ত, তৎপর আচরণ করেন, মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বাইরে তাও আর থাকে না। স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতার উপরও প্রভাব পড়ে, হারিয়ে যায় নমনীয়তা। পৃথিবীতে শরীরের যে স্বাভাবিক রক্তচাপ, মহাকাশে তা বজায় থাকে না। বরং মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বাইরে থাকার ফলে শরীরে উপস্থিত তরল ঊর্ধ্বমুখে সঞ্চালিত হয়। এর ফলে মুখ ফুলে যায়, সরু হয়ে যায় পা। ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ও আগের মতো প্রখর থাকে না। হাত-পা নাড়ানো, ঘাড় ঘোরানোর আগেও ভাবতে হয়। ভারসাম্য ধরে রাখতে পারেন না শরীরের। এদিন যখন পৃথিবীতে অবতরণ করেন সুনীতারা, উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতাও ছিল না তাঁদের। ধরে তোলা হয় তাঁদের। সটান স্ট্রেচারে শুইয়ে তোলা হয় জাহাজে।
পৃথিবীতে পুনর্বাসন দিতে তাই আপাতত সুনীতাদের চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। Astronaut Strength, Conditioning and Rehabilitation (ASCR) বিশেষজ্ঞদের নিয়োগ করেছে NASSA. সুনীতাদের সমস্ত ঘাটতি পর্যবেক্ষণ করবেন তাঁরা। আবার যাতে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায় সকলকে, তার জন্য চিকিৎসা এবং প্রশিক্ষণ চলবে। পৃথিবীতে ফেরার পর বিশ্রামও করতে পারবেন না সুনীতা। বরং আটলান্টিকে নামার পরই সটান পুনর্বাসন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁদের। এখন থেকে সেখানে রোজ দু'ঘণ্টা করে চলবে শারীরিক এবং মানসিক কসরত। আগামী ৪৫ দিন চলবে এই প্রক্রিয়া।
অবতরণের দিন থেকেই এই পুনর্বাসন প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ শুরু হয়ে যায়। গোড়াতেই অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নাড়ানো শেখানো হবে। শেখানো হবে নমনীয়তা। পেশির শক্তি বাড়িয়ে তোলার কাজও শুরু হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে শুরু হবে শারীরিক কসরত, শরীরকে পর্যাপ্ত অক্সিজেন জোগানোর প্রক্রিয়া। তৃতীয় পর্যায়ে চারপাশের সঙ্গে সহজাত করে তোলার কাজ শুরু হবে। প্রত্যেকের ডাক্তারি পরীক্ষা হবে, সেই মতো তাঁদের জন্য কসরত বরাদ্দ করবেন বিশেষজ্ঞরা। মহাকাশে যাওয়ার আগে যে শারীরিক অবস্থা ছিল, তা ফিরে না আসা পর্যন্ত চলবে এই পুনর্বাসন প্রক্রিয়া। তার পর ফের ডাক্তারি পরীক্ষা হবে, তাতে সব ঠিক থাকলেই বাড়ি ফেরার অনুমতি দেওয়া হবে।