পরমা মজুমদার: বন্ধ্যাত্বকে হারিয়ে মাতৃত্ব অর্জনে জয়যাত্রা
গ্রাহকের কথা : পশ্চিমবঙ্গ
বিয়ের পর প্রতিটি মেয়েই মা হওয়ার স্বপ্ন দেখে। একটি নতুন প্রাণকে এই পৃথিবীতে জন্ম দেওয়ার মতো এই ব্যাপার—স্বর্গের আশীর্বাদের থেকে কম কিছু নয়। কিন্তু মার্তৃত্ব অর্জনের এই পথ কারও কারও জন্য কুসুমাস্তীর্ণ হলেও এই সুখ অর্জনের পথে অনেককে অতিক্রম করতে হয় বহু বাধা। মা হওয়ার যাত্রাপথে একজন নারীকে শারীরিক থেকে মানসিক—নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
গর্ভধারণ এবং গর্ভাবস্থায় ভ্রুণের যত্ন নেওয়ার প্রক্রিয়া হতে পারে যেমন জটিল তেমন দেখা দিতে পারে অপ্রত্যাশিত সমস্যা। অনেক মহিলাকেই বন্ধ্যাত্বের সঙ্গে লড়াই করতে হয়। আর এই লড়াইয়ের সাথে সাথে আসে হতাশা, মানসিক যন্ত্রণা। যাঁরা গর্ভবতী হন, তাঁদেরও প্রয়োজন হয় প্রয়োজন হয় বিবিধ শারীরিক ও মানসিক প্রয়োজন। তাঁদের পেরোতে হয় উদ্বেগ অনিশ্চয়তার প্রহর।
ভারতে ক্রমবর্ধমান বন্ধ্যাত্ব্যের হার নিয়ে ইতিমধ্যে অনেক আলোচনা হয়েছে এবং গর্ভধারণের চেষ্টা করার সময় অসংখ্য দম্পতিকে যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয় তার উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরে বর্তমান কালের নানা পরিসংখ্যান।
ভারতে বর্তমানে বিবাহিত মহিলাদের মধ্যে প্রায় ৮% মহিলা বন্ধ্যাত্বের শিকার এবং তাদের মধ্যে বেশীরভাগেরই রয়েছে সেকেন্ডারি বন্ধ্যাত্ব (৫.৮%)। ভারতের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে মহিলাদের বন্ধ্যাত্বের হার ছিল সবচেয়ে বেশি (১৩.৯ শতংশ)। পরমা-র মা হওয়ার অভিজ্ঞতা তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা হলেও, তা তুলে ধরে পশ্চিমবঙ্গের হাজারো মহিলার না বলা সংগ্রামের কথা।
পরমার গর্ভধারণের ঘটনা একটা আশ্চর্য ঘটনা যা আমরা কল্পনাও করতে পারি না। স্থানীয় একজন স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে দেখানোর পরেই সে তার গর্ভধারণের সমস্যার কথা জানতে পারে। তার গর্ভসঞ্চার ঘটলেও গর্ভপাত হয়ে যায়। একথা জেনে সে হতবাক হয়ে যায়। মা হতে পারার অভিজ্ঞতা লাভ করার আগেই, সে হারিয়ে ফেলেছিল এই সুখ উপভোগ করার সুযোগ। সে কখনও ভাবেনি যে, সন্তান হারানোর মর্মভেদী যন্ত্রণায় সাথে সাথে এই যাত্রা পথে তাকে বইতে হবে তীব্র মানসিক আঘাত। পরমার স্বামী বিশ্বজিৎ তার পাশে দাঁড়ায়। তারা কখনোই বাবা-মা হওয়ার আশা ছাড়েনি।
পরমা সামান্যই জানত যে তার এই ব্যক্তিগত দুর্ঘটনা আসলে পশিমবঙ্গে ঘনিয়ে আসা একটি বৃহত্তর সঙ্কটের ক্ষুদ্র প্রতিফলন মাত্র – অগণিত জীবনকে স্তব্ধ করে দিয়েছে আকাশছোঁয়া বন্ধ্যাত্বের হার।
বন্ধ্যাত্বের নীরব থাবা যেভাবে চেপে ধরেছে পশ্চিমবঙ্গকে তার একটা সামগ্রিক স্বীকৃতি প্রয়োজন। স্টার্ক স্ট্যাটিস্টিক্স কার্যকরী সমাধানের উপর জোর দেয়। এই গভীর ব্যক্তিগত সংগ্রামের জালে আটকে পড়া মানুষদের সমস্যার মোকাবিলা করতে এবং তাদের পাশে থাকতে সমাজকে আহ্বান জানায়। ডাক্তারের কাছে বার বার যাওয়ার পর, শেষ পর্যন্ত তারা আয়ুর্বেদ চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা সাহায্য চাইল গাইনোভেদা এবং ডাঃ আরতি পাটিল-এর কাছে। গাইনোভেদা-র প্রতিষ্ঠাতা সেইসঙ্গে একজন দক্ষ গাইনোকলোজিষ্ট ডাঃ আরতি পাটিল, পরমাকে হতাশার গোলকধাঁধাঁয় হারিয়ে যাওয়া থেকে উদ্ধার করেছেন।
পরমা ও বিশ্বজিতের এই এই কাহিনি আসলে বন্ধ্যাত্বের সমস্যাকে হারিয়ে আশার আলো খুঁজে পাওয়ার কাহিনি। পথে অসংখ্য বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও সেগুলো তারা একসঙ্গে অতিক্রম করার অঙ্গীকারে অটল ছিল। একতা আর অটুট সঙ্কল্প দিতে পারে এমন এক শক্তি যা দিয়ে লডাই করা যায় বন্ধ্যাত্বের বিরুদ্ধে। মানসিক ও শারীরিক ক্ষমতার সাহায্যে কীভাবে লড়াই করা যায় সে বিষয়ে আলকপাত করে পরমা ও বিশ্বজিতের যাত্রাপথ। ছোট বড় নানা অভিজ্ঞতার মাধ্যমে তারা তুলে ধরে মানুষের ইচ্ছের শক্তিতে সব সম্ভব। তারা বলে গভীর অন্ধকারেও তুলে ধরা যায় আশার আলো।
সমাধানের পথ খুঁজতে খুঁজতে তারা আবিষ্কার করেছে আয়ুর্বেদ-এর পথ। একটি প্রাচীন সামগ্রিক নিরাময় পদ্ধতি হল আয়ুর্বেদ যা আমাদের দেহ মন আত্মার পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপন করে। তাদের অভিজ্ঞতা আমাদের শেখায় কীভাবে কাজ করে এই সামগ্রিক নিরাময় পদ্ধতির শক্তি। আমাদের মনে করিয়ে দেয় বিকল্প সমাধানের পথ খোঁজার কথা, প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও নিরাময়ের সম্ভাবনার উপর বিশ্বাস রাখার গুরুত্ব।
ডিসক্লেমার: এই নিবন্ধটি একটি ফিচার্ড প্রতিবেদন। ABP অথবা ABP LIVE কর্তৃক সম্পাদিত নয়। ABP বা ABP LIVE এখানে প্রকাশিত মতামতকে সমর্থন/সাবস্ক্রাইব করে না। উল্লিখিত অনুচ্ছেদে বর্ণিত সব কিছুর জন্য অথবা উল্লিখিত নিবন্ধে বর্ণিত/নির্দিষ্ট ভাবনা, মতামত, ঘোষণা, ডিক্লেয়ারেশন, যাচাইকরণ ইত্যাদির জন্য আমরা ABP Live বা ABP Network কোনওভাবেই দায়ী থাকব না। সেই অনুসারে পাঠকদের কোনও বিষয়ে বিবেচনা বা সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।