Santiniketan News: দেওয়াল জুড়ে শুধু ফুল-পাতার নকশা, বাংলার এই আদিবাসী গ্রামে দেওয়াললিখনের অনুমতি নেই রাজনীতিকদের
Santiniketan News: রাজনীতির আঁকিবুকি নয়, বরং আদিবাসী সংস্কৃতির বৈধতা স্বরূপ বাড়ি বাড়ি দেওয়ালো ফুল-পাখি-পশুর ছবিই চোখে পড়ে সেখানে।
আবীর ইসলাম, বীরভূম: কমিশনের তরফে ঢাকে কাঠি দেওয়ার অপেক্ষা মাত্র। তার পরই ভোটযুদ্ধকে (WB municipal Polls 2022) সামনে রেখে অস্ত্রে শান দিতে শুরু করেন রাজনীতিকরা। ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ের সঙ্গে সঙ্গে চলে দেওয়াললিখনের (Political Wall Graffiti) লড়াইও। কোন এলাকায়, কোন দলের পাল্লা ভারী, তা বোঝা যায় দেওয়াললিখনের দৌড়ে কে এগিয়ে, তা দেখেই। বছর বছর ভোটের সময় এমন ছবি দেখতেই অভ্যস্ত বাংলার মানুষ। কিন্তু এই বাংলার অংশ হয়েও ভোটের বাজারে ব্যাতিক্রম হয়ে রয়ে গিয়েছে বনেপুকুরডাঙা। দেওয়ালে রাজনীতির আঁকিবুকি নয়, বরং আদিবাসী সংস্কৃতির বৈধতা স্বরূপ বাড়ি বাড়ি দেওয়ালো ফুল-পাখি-পশুর ছবিই চোখে পড়ে সেখানে।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (Rabindranath Tagore) ঐতিহ্যমণ্ডিত শান্তিনিকেতনের (Santiniketan) অন্তর্গত সোনাঝুরি (Sonajhuri) জঙ্গলের ঠিক পাশেই রয়েছে আদিবাসী (Adivasi Tribe) অধ্যুষিত গ্রাম বনেপুকুর ডাঙা। বোলপুর পৌরসভার ২২টি ওয়ার্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সেটি। এই ২২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১ নম্বর ওয়ার্ডের অংশ আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রাম বনেপুকুরডাঙা। প্রতিবছরই পঞ্চায়েত ভোটে বিভিন্ন জায়গায় দেওয়াল লিখন হলেও, এই গ্রামের দেওয়াল ছুঁতে পারে না কোন রাজনৈতিক দল। এ বারও তার অন্যথা হল না। ভোটের দেওয়াললিখনে বিভিন্ন দলের প্রতীক চিহ্ন, এবং ছড়ার পরিবর্তে সেখানকার সারি সারি বাড়ির দেওয়ালে শোভা পাচ্ছে ফুল, পাতা, পশু, পাখির হাতে আঁকা এবং খোদাই করে ফোটানো ছবি।
প্রচারে যদিও খামতি রাখছেন না রাজনৈতিক দলগুলি এবং তাদের নেতারা। বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমর্থন প্রার্থনা করছেন তাঁরা। মন নিয়ে শুনছেন স্থানীয়দের যাবতীয় অভাব-অভিযোগের কথাও। শীঘ্রই সব সমস্যার সমাধান করবে বলে আশ্বাস দিতেও শোনা যাচ্ছে নেতাদের। কিন্তু এত কিছুর মধ্যেই দেওয়ালে তুলি ছোঁয়াতে পারছে না কোনও দলই। বরং আদিবাসী সমর্থনের কথা মাথায় রেখে তাদের ঐতিহ্য রক্ষার কথাই বলছেন সকলে।
আরও পড়ুন: Malda News: মাদকচক্রের পর্দাফাঁস পুলিশের, পাচারের আগে উদ্ধার বিপুল পরিমাণ ফেনসিডিল সিরাপ
গ্রামবাসীরা পরিষ্কার জানিয়েছেন, বহু কষ্ট করে তাঁদের মা-বোনেরা দেওয়ালজুড়ে নিজেদের ঐতিহ্য এবং শিল্পকর্ম তুলে ধরেন। রাজনৈতিক দলগুলিকে তা নষ্ট করতে দেওয়া হবে না বলে একেবারে গোড়া থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছিলেন তাঁরা। তাই দেওয়াললিখন, দলের প্রতীক চিহ্ন আঁকার অনুমতি দেননি কোনও দলকেই। গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, যে কোনও রাজনৈতিক দলই বা বাড়ি এসে প্রচার করতে পারে। নিজেদের মতামত, পরিকল্পনার কথা জানাতে পারে সাধারণ মানুষকে। কিন্তু দেওয়ালে কোনও আঁকিবুকি চলবে না।
স্থানীয়দের এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলিকে। এলাকার তৃণমূল প্রার্থী বলেন, “বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার করছি। আদিবাসী এই গ্রামগুলিতে ভালই সাড়া পাচ্ছি। কিন্তু আমরা কোনও রকম দেওয়াল লিখন করিনি। আদিবাসীদের যে ঐতিহ্য, সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি দেওয়ালে শোভা পাচ্ছে, সেটাকে আমরা নষ্ট করতে চাই না।” একই বক্তব্য কংগ্রেসের প্রার্থীরও। স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদও জানিয়েছেন তাঁরা।