গোপাল চট্টোপাধ্যায়, কীর্নাহার (বীরভূম) : দশভুজার আটটি হাতই স্বাভাবিকের থেকে ছোট! মায়ের সঙ্গে লক্ষ্মী-সরস্বতীর ঠাঁই হলেও তাদের বাহনদের জায়গা হয় না একচালাতে। সিংহের পরিবর্তে থাকে নরসিংহ! বীরভূমের কীর্নাহারের সরকার বাড়ির পুজো তাই বেশ কিছুটা আলাদা বাকি পুজোগুলোর থেকে। স্থানীয় লোকজনের কাছে যা পরিচিত 'ছোট হাতের দুর্গা' নামেই। দীর্ঘ ৩৫০ বছর ধরে একইরকমভাবে মায়ের আরাধনা চলে আসছে এই সরকার বাড়িতে।


আপাতত দুর্যোগের ঘনঘটায় আপাতত ঢাকা শরতের আকাশ। চেনা রোদের ফালি ও ঘাসফুলের গন্ধ মিলছে না এখনও সেভাবে। একদিকে করোনাকাল অন্যদিকে ক্রমাগত বৃষ্টিতে পুজোর প্রস্তুতিতে বিঘ্নই আপাতত দিনযাপনের অঙ্গ। তবে দ্রুত দুর্যোগ কেটে যাবে এই প্রত্যাশায় বাঙালি তাঁদের সর্বশ্রেষ্ট উৎসবের প্রস্তুতি সারতে পিছিয়ে নেই। কার্যত গোটা বঙ্গজুড়েই চলছে তোড়জোড়। বারোয়ারি থেকে বনেদি বাড়ি, পিছিয়ে নেই কেউ-ই। কাজের সূত্রে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে বীরভূমের কীর্নাহারের সরকার বাড়ির সদস্যরা। করোনাকালের বিধিনিষেধ বাধ সাধলেও সকলেই পুজোর দিনগুলোতে চেষ্টা করেন শিকড়ে ফেরার। তবে যাঁরা আপাতত বাড়িতে রয়েছেন ও যাঁরা নেই, সকলেই কোমর বেঁধেছেন।


দীর্ঘ ৩৫০ বছর আগে সরকার বংশের পূর্বপুরুষ কিশোর কুমার সরকারের হাত ধরে প্রচলন হয়েছিল ছোট হাতের দুর্গার। এখানে দেবী যেহেতু চামুণ্ডা রূপে পূজিত হন, তাই দেবীর এখানে দুটি হাত বড় ও বাকি আটটি হাতকে কাল্পনিক মনে করা হয়। পাশাপাশি এখনও তালপাতার পুঁথি দেখে পুজোর প্রচলন রয়েছে। দশভুজার হাতেই শুধু নয় কীর্নাহারের সরকার বাড়ির দেবীর একচালাতেও রয়েছে বিশেষত্ব। একই কাঠামোয় কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী ও মহিষাসুর থাকলেও এখানে শুধু কার্তিকের বাহন ময়ূর দেখা যায়, তাছাড়া লক্ষী বা সরস্বতীর বাহনকে এখানে দেখা যায় না। এখানে সিংহের পরিবর্তে দেখা যায় নরসিংহকে।


সরকার বংশের এগারোতম বংশধর রাজা সরকার জানান, মহালয়ার পরদিন অর্থাৎ প্রতিপদের দিন থেকেই ঘট পূজার মধ্য দিয়ে এখানে শুরু হয়ে যায় দুর্গাপুজো। সঙ্গে এখানকার পুজোর আরও এক বৈশিষ্ট্য হল সপ্তমীর দিন থেকেই এখানে হোম-যজ্ঞ শুরু করা হয়, আর সেই হোমের আগুন জ্বলতে থাকে দশমী অবধি। অর্থাৎ হোমের আগুন জাগিয়ে রেখে প্রতিদিন চলে হোম-যজ্ঞ। এবারেও নিজস্ব রীতিনীতিতে ভর করে ছোট হাতের দুর্গার পুজোয় মেতে ওঠার প্রস্তুতিতে মগ্ন কীর্নাহারের সরকার বাড়ি।


আরও পড়ুন- 'দুর্গাকে সন্ধ্যা দেখাতে গিয়ে ফেরেননি কুমারী', কেন মাটির মূর্তি নয় খরুনের রায়পরিবারের পুজোয় ?


বক্রেশ্বরের সতীপীঠে দুর্গারূপে পূজিত মনপাত দেবীর অষ্টধাতুর মূর্তি


বাড়ির পুজোয় নিজেই চণ্ডীপাঠ করতেন প্রণব মুখোপাধ্যায়, মৃত্যুতে জৌলুসহীন মিরাটির পুজো