সুনীত হালদার, হাওড়া: বুধবার সন্ধেয় চাঁদের মাটির একটু একটু করে দূরত্ব কমাচ্ছিল চন্দ্রযান ৩। আর একটু একটু করে যেন উদ্বেগ কমছিল হাওড়ার এই পরিবারটির। কারণ, এই ঘরের ছেলেই যে কাজ করেছেন চন্দ্রযান ৩-এর টিমে। তারপর যখন আলতো করে চন্দ্রযান ৩ (Chandrayaan 3) চাঁদের দক্ষিণ মেরুর মাটি ছুঁল, তখন উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েছিল হাওড়ার শেখপাড়ার এই পরিবারটি। চন্দ্রযান ৩-এর সাফল্য়ে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে বাংলার মেধা। আর তারই প্রতিনিধিত্ব করেছেন ইসরোর বিজ্ঞানী হাওড়ার (Howrah) শেখ পাড়ার ইনশা ইরাজ (Insha Eraj)।
বাবা কামালউদ্দিন জানাচ্ছেন, ছোট থেকে মেধাবী ছিল তাঁর ছেলে। পার্ক সার্কাস এলাকায় একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন তিনি। তারপরে হেরিটেজ ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে বিটেক পাস করেন, সালটা ২০১৫। লক্ষ্য ছিল বিজ্ঞানী হওয়া। প্রস্তুতিও চলছিল। এরপর ২০১৬ সালে ইসরোর সর্বভারতীয় পরীক্ষায় প্রথমবারেই ১৮ র্যাঙ্ক করেন। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ইনশা ইরাজকে। ২০১৭ সালের তিনি বিজ্ঞানী হিসাবে ইসরোতে যোগ দেন। তারপর থেকেই তিনি নাকি চন্দ্রযান সংক্রান্ত গবেষণার কাজে যুক্ত ছিলেন। এখন ইনশা ইরাজ থাকেন শ্রীহরিকোটায় সরকারি ফ্ল্যাটে। সারাদিন কাজকর্মে ব্যস্ত থাকেন ছেলে। তাও প্রায় প্রতিদিনই রাতের দিকে কথা হয় বাবা-মায়ের সঙ্গে। তেমনটাই জানালেন তাঁর মা।
বাবা কামালউদ্দিন বলেন, 'খুব আনন্দের খবর। ও যেন আরও ভাল কিছু করে'। আনন্দে চোখের জল বাঁধ মানেনি তাঁর মা নীলোফার বেগমের। খুশির খবর মেলার পরেই পোলাও-মাংস রাঁধতে বসেছিলেন তিনি। এদিন বললেন, ' শুধু আমার ছেলে নয়, এটা গোটা টিমের সাফল্য। ওঁদের পরিশ্রমের জন্যই আমার ভারতের মাথা উঁচু হয়েছে। ইসরোয় যাঁরা কাজ করে সবাই আমার ছেলে। ওঁদের সবার ভাল হোক। সবাই ভাল থাকুক, আরও ভাল কাজ করুক।'
উচ্ছ্বসিত ইনশা ইরাজের জামাইবাবু সিরাজ আহমেদও। তিনি SSKM-এর চিকিৎসক ও অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর। তিনি জানাচ্ছেন, ছোট থেকেই রকেট সায়েন্সে উৎসাহ ছিল ইনশার। বিজ্ঞানী হওয়ার ইচ্ছেই ছিল তাঁর। বলছেন, 'এপিজে আবদুল কালাম ওঁর ধ্যানজ্ঞান ছিল। বিজ্ঞানীদের কাজ নিয়ে, জীবনী নিয়ে নানা বই পড়ত ও। আমি বলতাম এই লাইনে থাক। নিশ্চয়ই ভাল জায়গায় যাবি। আজ ভীষণ আনন্দ হচ্ছে।' সঙ্গে তাঁর সংযোজন, আগে আমরা NASA NASA করতাম। এখন বিশ্বের সবাই ISRO ISRO করবে। আমরা ভীষণ গর্বিত।'
এই ভাল খবরের কদিন আগেই আরও একটি সুখবর পেয়েছে এই পরিবার। দিন পনেরো আগে ইনশা ইরাজের ছেলে হয়েছে, তাঁর স্ত্রীও পেশায় চিকিৎসক। আপাতত তিনি কলকাতায় রয়েছেন।
আরও পড়ুন: চাঁদের মাটিতে ভারত! তোসিকুলের হাত ধরে নাম জুড়ল মুর্শিদাবাদেরও