Humayun Kabir Exclusive : ''এটা কী ধরনের নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি'' ফিরহাদের মন্তব্য নিয়ে বিস্ফোরক হুমায়ুন, চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বললেন...
Humayun Kabir Exclusive Interview :

তৃণমূল থেকে সাসপেনশনের পরে কোন পথে হুমায়ুন? টাকা খেয়ে বিজেপির তাঁবেদারি? সাসপেন্ড হতেই চড়া সুর হুমায়ুনের । এবিপি আনন্দর ঘণ্টাখানেক সঙ্গে সুমন অনুষ্ঠানে এসে একের পর এক বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। এবিপি আনন্দর এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট (Executive Vice President) সুমন দে-র প্রশ্নের জবাবে কী বললেন তিনি।
সুমন দে: আপনার কাছে আপনার প্রথম প্রশ্ন, যে দলে আপনি এই কয়েক ঘণ্টা আগেও ছিলেন, এখনও কাগজে কলজে আপনি যে দলের বিধায়ক, সেই দলের মন্ত্রী, কলকাতার মেয়র এবং তৃণমূলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির সদস্য ববি হাকিম আজ প্রশ্ন তুলেছেন, যে হুমায়ুন আপনি রেজিনগরে থাকেন, ভরতপুরের বিধায়ক, আপনি কেন বেলডাঙায় বাবরি মসজিদ বানাতে চাইছেন? যেহেতু বেলডাঙা সাম্প্রদায়িকভাবে স্পর্শকাতর, তাই বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে দাঙ্গা লাগিয়ে আপনি ভোটের আগে ধর্ম নিয়ে বিভাজনের রাজনীতি করছেন। মারাত্মক অভিযোগ হুমায়ুন।
হুমায়ুন কবীর: ববি হাকিমকে ও সারা বাংলার মানুষকে আপনার চ্যানেলের মাধ্যমে শোনাতে চাই, ববি হাকিম বিধানসভার শৃঙ্খলা কমিটির একজন সদস্য। আমাকে ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে রাজ্যের শৃঙ্খলা কমিটি একটা শো কজ নোটিশ দেয়...এক পাতার, আমি তার এগেইনস্টে তিন-পাতার জবাব দিই। এখনও পর্যন্ত, সেই শৃঙ্খলা কমিটি , মাননীয় শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় , ববি হাকিম ওরফে ফিরহাদ হাকিম,মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, এই চারজনের নিয়ে যে কমিটি, তারা আমার লেটারের উত্তর দেয়নি। নভেম্বরে আমার উত্তর দেওয়ার পর ডিসেম্বরে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী ডিসেম্বরে পরিষদীয় মিটিংয়ে বিধানসভায় নৌশাদ আলির পক্ষে তিনি পরিষ্কার করে বলেন, হুমায়ুনের নাম না করে বলেন, শোকজের সন্তোষজনক উত্তর হয়েছে। তিনি নিজে মুখ্যমন্ত্রী সেখানে বলেন, আমার নাম না করে বলেন, নাম করার দরকার ছিল না...
সুমন দে: শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে আপনার এই শৃঙ্খলাভঙ্গ নিয়ে কোনও বৈঠক হয়েছিল?
হুমায়ুন কবীর: সেটা তো অনেকদিন আগে। জুন মাসে। সেখানে শোভনদেববাবু আমাকে লাস্ট ওয়ার্নিং নোটিশ দিয়েছিল। প্রথমে নভেম্বর ২০২৪, তারপর মার্চ ২০২৫ আমার সেকেন্ড শো-কজ নোটিশ, সেখানে ২ পাতার এগেইস্টে আমার চার পাতার উত্তর, প্রথমে ১ পাতার এগেইনস্টে তিন পাতার উত্তর,যদিও সেই শৃঙ্খলা কমিটি কী বস্তু, তাদের কী কাজ, তারা এটা নিয়ে পর্যালোচনা করেছেন, সেটা সন্তোষজনক, না ওনারা খুশি...না আমার প্রতি তাদের কোনও অভিযোগ আছে ...
২০১৫ সালে ২৫ ফেব্রুয়ারিতেও একবার সাসপেন্ডেড হয়েছিলেন হুমায়ুন। তখনও তিনি একই ধরনের অভিযোগ তুলেছিলেন। তিনি জানান,বহিষ্কারের মাথামুন্ডু তিনি খুঁজে পাচ্ছেন না। বৃহস্পতিবার ফিরহাদ হাকিম, যে সাংবাদিক বৈঠক থেকে হুমায়ুনকে সাসপেন্ড করার কথা ঘোষণা করেন, সেখানেই তিনি প্রশ্ন তোলেন, রেজিনগরে থাকেন, ভরতপুরের বিধায়ক, কেন বেলডাঙায় বাবরি মসজিদ হবে? - এই ভিডিও ক্লিপটি দেখিয়ে হুমায়ুনকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন,
হুমায়ুন কবীর: উত্তর এটাই ববি হাকিমকে বলতে চাই, আপনি বেশ কিছুদিন আগে, প্রায় ১ বছর আগে একটা মুসলিম সমাজের অনুষ্ঠানে গিয়ে আপনি নিজেকে বলেছিলেন, আপনি সৌভাগ্যবান। মুসলিম হয়ে যারা জন্মগ্রহণ করেছে পৃথিবীতে , ইন্ডিয়ায় বা বাংলায় তাঁরা সৌভাগ্যবান। যারা অমুসলিম হয়ে জন্মগ্রহণ করেছেন ,তাঁরা দুর্ভাগা। এটা কী ধরনের নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি বা সেকুলার বা আপনার এই ধর্মনিরপেক্ষতার মুখোশ না মুখ ...আজকে যেটা বলছেন সেটা ঠিক না সেদিন যেটা বলেছিলেন সেটা ঠিক..তার জন্য বিজেপির পরিষদীয় দল বিধানসভায় আপনি কোনও প্রশ্নের উত্তর দিতে উঠলেই বারবার আপনাকে বয়কট করত বা তারা ওয়াকআউট করত। পরিশেষে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে আপনি আনুষ্ঠানিকভাবে সেখানে, ক্ষমাই চেয়েছিলেন। হুমায়ুন কবীর কোনও অন্যায় করে না। কারও কাছে ক্ষমাও চাইতে হয় না।
সুমন দে: হুমায়ুন আপনি আজই নিজের মুখে বলেছেন, ''RSS মার্কা মুখ্যমন্ত্রীর থেকে direct BJP-র মুখ্যমন্ত্রী হোক, আমি Welcome করব।'' কেউ যদি বলে, আপনি BJP-র B Team....এটা আপনি নিজেই প্রকাশ্যে বলে দিয়েছেন। তো আপনার লড়াইটা তো তাহলে তৃণমূলের বিরুদ্ধে, BJP-কে সুবিধা পাইয়ে দিতে, এই অভিযোগ তো খুব স্বাভাবিক ভাবেই উঠবে।
হুমায়ুন কবীর: আপনারা অভিযোগ করতেই পারেন। কিন্তু আমার বক্তব্য হচ্ছে, যে বাবুল সুপ্রিয় যখন, বিজেপির সাংসদ ছিলেন, মন্ত্রী ছিলেন, তখন আসানসোলে তিনি দাঙ্গা লাগিয়েছিলেন। মুসলমানদের হত্যাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন, সেই বাবুল সুপ্রিয় যদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভায় এসেই সদস্য হয়ে যান...গুরুত্বপূর্ণ জায়গা পেয়ে যান, তাহলে আমি সেখান থেকে বুঝতে পারি, মুসলিমদের কয়েকজনকে ঠুঠো জগন্নাথ করে, সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী, গুলাম রব্বানি, তারপরে ....
সুমন দে: তার মানে, আপনার এই কথাটায় একটা অভিমান আছে...বাবুল সুপ্রিয় বিজেপি থেকে তৃণমূলে গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছে, আপনিও একটা সময় বিজেপিতে ছিলেন, সেখান থেকে তৃণনূলে গিয়ে আপনি তেমন ভাল পদ পাননি, এমন মনে করে অভিমান আপনার?
হুমায়ুন কবীর: না আমার কোনও অভিমান নেই। আমি মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে কথা বলেছি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমার সঙ্গে মিথ্যাচার করেছে। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে আনুষ্ঠানিক ভাবে ১০ মার্চ, ২০২৪, নিজে থেকে নেত্রী ৪২ টা প্রার্থী ডিক্লেয়ার করেছিলেন। সবাই অবগত আছে, খেলোয়াড় , ক্রিকেট প্লেয়ার, ওই গুজরাত থেকে ইউসুফ পাঠানকে নিয়ে আসা হয়েছিল। আমি তার পরের দিন ব্রিগেড থেকে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন, বলেছিলাম, মুর্শিদাবাদে যোগ্য কোনও নেতা নেই অধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে এমপি হওয়ার ? আমাকে না দিতে পারে, যে কেউ মুর্শিদাবাদের দিতে পারে....সেদিন আমি বলেছিলাম এভাবে ভোট করব না। এরপর সেদিন ১৯ মার্চ , ২০২৪, ক্যামার স্ট্রিটের অফিসে ডেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে ডেকে কী বলেছিল, তা প্রকাশ করতে হবে। ১.৫.২০২৪ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, গড়িয়ার এক সভা থেকে, বিকেল ৪ টের সময় হেলিকপ্টার থেকে নেমে, অপূর্ব সরকারকে নেতা বানিয়ে রেখেছে...তাকে কিছু না বলে...অন্য অনেক নেতা ছিল, তাদেরকে কিছু না বলে কেন হুমায়ুন কবীরকে বলেছিল...যে আইবির রিপোর্ট আছে, অধীর চৌধুরী ৭০ থেকে ৮০ হাজার ভোটে জিতে যাচ্ছে, সেলিম ৩০ থেকে ৪০ হাজার ভোটে জিতে যাচ্ছে...হুমায়ুন তুমি কিছু একটা করো। তোমার ওপর মুর্শিদাবাদের মানুষ আস্থা রাখে ভরসা রাখে ,কাজেই ৭ তারিখ জঙ্গিপুর আর মুর্শিদাবাদের ভোট ছিল, ১৩ তারিখ রানাঘাট, বহরমপুর, কৃষ্ণনগরের ভোট ছিল...তাহলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন হুমায়ুন কবীরকে এই কথা বললেন?






















