Indian Politicians In Sports : খেলার জগতে রাজনীতিবিদদের রাজ! তালিকায় রয়েছে সব দলের নেতার নাম !
Sourav Ganguly News Update : ক্রীড়া প্রশাসনের মাথায় রাজনীতিবিদদের দাপটের ছবিটা সর্বত্র একই। কংগ্রেস থেকে বিজেপি কিংবা রাজ্যে তৃণমূল। তালিকায় রয়েছে সব দলের নেতার নাম।
কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, সত্যজিৎ বৈদ্য, কলকাতা : সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় BCCI প্রেসিডেন্টের পদ হারানোর পর থেকেই প্রবল হয়েছে বিষয়টি ঘিরে রাজনৈতিক চাপানউতোর। রাজনৈতিক কাদা ছোড়াছুড়ি। তেতে উঠেছে বঙ্গের রাজনৈতিক জগতও। বিভিন্ন মহল থেকে আসছে প্রতিক্রিয়া। বিসিসিআইয়ের বিভিন্ন পদে জায়গায় পেয়েছেন বিজেপির নেতা ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর আত্মীয়রা। তাই নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার তিনি বলেন, ' কেন জানি না, কী কারণে, অমিতবাবুর ছেলে রয়ে গেলেন। আর সৌরভ বাদ পড়লেন। '
আর এতেই বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, ভারতে খেলার জগতে রাজনীতিবিদদের ছড়ি ঘোরানো কি কোনওদিন বন্ধ হবে না? কোনওদিনই কি ভারতীয় ক্রীড়া জগত পরিবারতন্ত্রের রাশ থেকে মুক্ত হতে পারবে না ! ফুটবলে একটা গোল না করেও কিংবা ক্রিকেটে কোনওদিন রান না করেও, কীভাবে দশকের পর দশক ক্রীড়া প্রশাসক পদে কাটিয়ে দেওয়া সম্ভব?
১৯৮৮ থেকে ২০০৮ অবধি অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন বা AIFF’এর প্রেসিডেন্ট ছিলেন, কংগ্রেস নেতা প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি। তাঁর পর এই পদে বসেন শরদ পাওয়ারের দল NCP’র নেতা প্রফুল পটেল। দু’জনের কেউই ফুটবল খেলার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। কিন্তু, ভারতীয় ফুটবল সংস্থার রাশ ছিল তাঁদের হাতেই।
ক্রিকেটেও ছবিটা একই রকম। আজ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে যে পদ থেকে সরানো নিয়ে এত বিতর্ক., সেই BCCI প্রেসিডেন্টের পদে ২০০৫ থেকে ২০০৮ অবধি ছিলেন NCP প্রধান শরদ পাওয়ার। জীবনে ক্রিকেট না খেললেও, BCCI’এর পর, ২০১০ থেকে ২০১২ অবধি ICC’র প্রেসিডেন্ট পদেও বসেছিলেন তিনি। বিসিসিআই সভাপতির পদে ছিলেন মোদি মন্ত্রিসভার বর্তমান সদস্য অনুরাগ ঠাকুর। ইন্ডিয়ান অলিম্পিক্স অ্যাসোসিয়েশনের দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ছিলেন কংগ্রেস সাংসদ সুরেশ কলমডী। ২০১০ কমনওয়েলথ গেমসের চেয়ারম্যানও ছিলেন তিনি। যে সময়ে দুর্নীতির অভিযোগে তাঁর দশ মাস জেল হয়। কংগ্রেসের আরেক সাংসদ রাজীব শুক্লা এখনও BCCI’এর ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে রয়েছেন।
সম্প্রতি জাতীয় গেমসের উদ্বোধনে, ক্রীড়া জগতে পরিবারতন্ত্র নিয়ে সুর চড়িয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি। পরিবারতন্ত্র ও দুর্নীতির কারণে ভারতীয় ক্রীড়াবিদরা অতীতে ভাল ফল করতে পারেননি। কিন্তু, এই সরকার ক্রীড়া প্রশাসন থেকে এইসব সমস্যা দূর করেছে। কিন্তু বিসিসিআইয়ের সাম্প্রতিক রদবদলে দেখা গেছে, সেখানে জায়গা পাচ্ছেন বিজেপি নেতা কিংবা তাঁদের পরিবারের সদস্যদের অনেকেই।
বোর্ডের সচিব পদে থেকে গেছেন অমিত শাহর ছেলে জয় শাহ। IPL চেয়ারম্যান হচ্ছেন কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী এবং বিজেপি সাংসদ অনুরাগ ঠাকুরের ভাই অরুণ ধুমল। BCCI’এর কোষাধ্যক্ষ হচ্ছেন মহারাষ্ট্রের বিজেপি বিধায়ক এবং মুম্বইয়ের বিজেপি সভাপতি আশিস শেলার। দীর্ঘদিন দিল্লি ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের মাথায় ছিলেন বিজেপি নেতা ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অরুণ জেটলি। এখন সেই পদে রয়েছেন তাঁর ছেলে রোহন জেটলি।
এ রাজ্যও কোনও ব্যতিক্রম নয়। বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট পদে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর ভাই স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়। সচিব পদে রয়েছেন দাদা অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়। এছাড়া বেঙ্গল হকি অ্যাসোসিয়েশন, বেঙ্গল বক্সিং অ্যাসোসিয়েশন, বেঙ্গল কবাডি অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট পদে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর ভাই স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়। মোহনবাগান ক্লাবের ফুটবল সচিব পদেও রয়েছেন স্বপন। মোহনবাগানের ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে রয়েছেন তিন তৃণমূল নেতা, অরূপ রায়, কুণাল ঘোষ ও মলয় ঘটক। ইন্ডিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন বা IFA’র ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে রয়েছেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের ভাই স্বরূপ বিশ্বাস।
ক্রীড়া প্রশাসনের মাথায় রাজনীতিকদের দাপট! গতবছর থেকে, রাজনীতিতে জনপ্রিয়তার শিখড়ে রয়েছে একটা শব্দবন্ধ... খেলা হবে। অনেকে বলছেন, রাজনীতিতে ‘খেলা হবে’র দাপট যতটা, বাস্তবের খেলায় রাজনীতিকদের দাপট তার থেকে কোনও অংশে কম নয়!