পার্থপ্রতিম ঘোষ এবং হিন্দোল দে, কলকাতা: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে কার্যত সিংহভাগ জায়গাতেই নেই সিসিটিভি। UGC-র কঠোর নির্দেশিকার এক দশক পরও কেন এই অবস্থা? যাদবপুরের প্রাক্তন উপাচার্যের দাবি, তাঁর সময়ে কিছু ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা লাগানো হলেও, সেগুলি পরবর্তীকালে খুলে নেওয়া হয়। কিন্তু কেন? কার নির্দেশে? উঠছে প্রশ্ন।

  


ছেলেকে নিয়ে স্বপ্নের শেষ ছিল না। এখন সেই ছেলের ছবি বুকে আঁকড়ে, হাহাকার করছেন সন্তানহারা এই মা-বাবা। কিন্তু, তাঁদের এই অপূরণীয় ক্ষতির জন্য দায়ী কারা? যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কি এই দায় ঝেড়ে ফেলতে পারেন? এই প্রশ্নগুলো ক্রমশ জোরাল হচ্ছে। 


এই মেধাবী পড়ুয়ার মৃত্যুতে একদিকে -এর মতো মারাত্মক অভিযোগ ফের সামনে এসেছে। অন্যদিকে, এই ঘটনা একাধিক প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে যাদবপুরের মতো দেশের অন্যতম সেরা প্রতিষ্ঠানকে। কারণ, সূত্রের খবর, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে মূল ক্যাম্পাস বা কোনও হস্টেলের সামনে কোনও সিসি ক্যামেরা নেই।


কেবলমাত্র কয়েকটি ডিপার্টমেন্টে যেখানে দামি কিছু যন্ত্র আছে, সেখানে রয়েছে সিসি ক্যামেরা। এখানেই প্রশ্ন উঠছে, যে বিশ্ববিদ্য়ালয়ে এত বড় ক্যাম্পাস, যেখানে এত পড়ুয়া পড়াশোনা করে সেখানে সিসিটিভি ক্যামেরা থাকবে না কেন? তাহলে ক্যাম্পাসে কোনও অপরাধ ঘটলে, তার দায় কার?


যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী বলেন, 'এখানে বাইরে থেকে যে কেউ আসে, বেরোয়। কোনও অপরাধ ঘটে গেলে কেউ কিছু বুঝতেই পারবে না।' নিরাপত্তা আধিকারিক অবশ্য বলেছেন, 'হস্টেলে যে কেউ আসতে পারে। মেয়েরা এলে ঢুকতে দিই না।' 


২০১৪ সালে র‍্যাগিং বন্ধ করতে, কঠোর নির্দেশিকা জারি করে UGC। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হস্টেলের মতো জায়গায় সিসিটিভি নজরদারি চালানোর কথা বলা হয়। এর প্রায় এক দশক পরও যাদবপুর ক্যাম্পাসে সিসিটিভি ক্যামেরা নেই কেন? স্বপ্নদীপের মৃত্যুর পর এই প্রশ্নের মুখে কার্যত দায় এড়িয়েছেন ডিন অফ স্টুডেন্টস।


যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অফ স্টুডেন্টস রজত রায় বলেন, 'সিসিটিভি ক্যামেরা আছে কিনা, সেটা উপাচার্য বলতে পারবেন। তবে আমি যেটুকু বলতে পারি, সিসিটিভি আগের উপাচার্যের আমলে সেগুলো খুলে নেওয়া হয়েছে। এখন আছে কিনা, আমি বলতে পারব না।' 


যাদবপুর ক্যাম্পাসে সিসিটিভি না থাকা নিয়ে মুখ খুলেছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, 'সিসিটিভি থাকাটা বাধ্যতামূলক ছিল। আমার আমলে আমি সিসিটিভি লাগানো হয়েছিল। সংখ্যা বলা সম্ভব নয়। এন্ট্রি পয়েন্টে ছিল। কারণ একটাই, কে ঢুকছে, কে বেরোচ্ছে, সেগুলো দেখা যায়। এখন সেগুলো খুলে নেওয়া হয়েছে বলে শুনেছি। আমার মনে হয় রাজ্য সরকার, রাজ্যপাল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়ে সিসিটিভিতে মুড়ে ফেলা উচিত। তাহলে অপরাধীরা সাহস পেত না। দু'বার ভাবত। সিসিটিভি ক্যামেরা থাকলে এত সময়ই লাগত না।' 


আরও পড়ুন, 'দোষীকে ফাঁসি দিয়ে আমার বুকের জ্বালা মেটান', মুখ্যমন্ত্রীকে করুণ আর্তি স্বপ্নদীপের বাবার


স্বপ্নদীপের মৃত্যুর পর জোরাল হচ্ছে প্রশ্ন। অধ্যাপক ইমনকল্যাণ লাহিড়ি বলেন, 'সিসিটিভি নিয়ে আমরাও আন্দোলন করেছিলাম। যাদবপুর হচ্ছে মুক্ত চিন্তার জায়গা। কিন্তু এখানে মুক্ত চিন্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। তাই আমরা চাই সিসিটিভি লাগুক।' 


UGC-র নিয়ম অনুযায়ী, প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের হস্টেলে আলাদা রাখতে হয়। কিন্তু যাদবপুর বিশ্ববিদ্য়ালয়ের ক্যাম্পাসে সেই ব্যবস্থাও এতদিন ছিল না। স্বপ্নদীপের প্রাণ চলে যাওয়ার পর, সমালোচনার ঝড় আছড়ে পড়তে অবশেষে তা নিয়ে হুঁশ ফিরেছে। 


বৃহস্পতিবার থেকে প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের অন্য হস্টেলে সরিয়ে নিয়ে আসার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। শনিবার সেই কাজ খতিয়ে দেখতে আসেন প্রোভিসি এবং ডিন অফ স্টুডেন্ট। কিন্তু, প্রশ্ন উঠছে, এই কাজ এতদিনে হয়নি কেন? তাহলে তো এক মেধাবী পড়ুয়াকে এভাবে অকালে চলে যেতে হত না!