Kali Puja 2025: শিকলে বেঁধে রাখা হতো কালীকে, স্বপ্নাদেশ পেয়ে মন্দির প্রতিষ্ঠা, জ্বালানো যায় না বৈদ্যুতিক আলো
Hooghly Bhandarhati Dakshina Kalimata Temple: উদয় চাঁদ মহাতব, গর্গ ঋষি গোত্র। বর্ধমান মহারাজার এই নাম ও গোত্র ধরে সংকল্প করে এখনও শুরু হয় কালীপুজো (Kali Puja 2025)।

সোমনাথ মিত্র, ভাণ্ডারহাটি: উদয় চাঁদ মহাতব, গর্গ ঋষি গোত্র। বর্ধমান মহারাজার এই নাম ও গোত্র ধরে সংকল্প করে এখনও শুরু হয় কালীপুজো (Kali Puja 2025)। মায়ের গর্ভগৃহে জলে না কোনও বৈদ্যুতিক আলো। মোমবাতি ও প্রদীপের আলোতেই পুজিত হন মা। হুগলির ভাণ্ডারহাটি এলাকার কেশবপুর গ্ৰামে দক্ষিণা কালীমাতা মন্দির ঘিরে রয়েছে নানা অলৌকিক ও ঐতিহাসিক ঘটনা।
কথিত আছে, প্রায় ৩০০ বছর আগে দামোদর নদের একটি শাখা নদী, যেটি এলাকা দিয়ে প্রবাহিত ছিল, সেই শাখা নদী ধরে মায়ের একটা কাঠামো ভেসে এসেছিল কেশবপুর গ্ৰামে। গ্ৰামবাসীরা সেটা তুলে রাখেন। তারপর বর্ধমানের মহারাজাকে মা স্বপ্নাদেশ দেয় তার মন্দির তৈরি করে মূর্তি প্রতিষ্ঠা করার জন্য। তখন মহারাজার কাছারিবাড়ি ছিল ধনিয়াখালিতে। বর্ধমানের মহারাজা কাছারিবাড়ির লোকজনকে পাঠিয়ে মন্দির তৈরি করান। এবং প্রায় ২০ বিঘা জমি দেবোত্তর সম্পত্তি হিসাবে দান করেন। তাই এখনও দীপান্বিতা কালীপুজোর রাতে বর্ধমান মহারাজার নাম ও গোত্র উল্লেখ করে পুজো শুরু করা হয়। কয়েক বছর আগে অবধি, প্রত্যেক কালীপুজোয় মহারাজের বাড়ি থেকে কাছারিবাড়ি হয়ে পুজোর সামগ্ৰী আসত মায়ের চরণে। বর্তমানে কোনও কারণে তা বন্ধ আছে। তবে, এখনও কালী পুজোর রাতে বর্ধমানের মহারাজা উদয় চাঁদ মহাতব-এর নামে প্রথমে পুজো করা হয়। তারপর গ্ৰামের অন্যান্য মানুষের পুজো নিবেদন করা হয় মায়ের কাছে।
সেই পুরানো প্রথার অন্যথা হয়নি এখনও। সেই প্রাচীন রীতি মেনেই কালী পুজোয় মায়ের পুজো অর্চনা শুরু হয় তন্ত্র মতে। এখানে মায়ের মূর্তির বিসর্জন হলেও ঘট বিসর্জন হয় না। বিসর্জনের পর ঘট সরিয়ে রাখা হয়। প্রতিমার মাটি ধুয়ে গেলে কাঠামো তুলে এনে মন্দিরে বসিয়ে সারা বছর পুজো অর্চনা করা হয়। বৈশাখ মাসের শেষ শনিবার দুপুরবেলা মাকে রক্ষাকালী রূপে পুজো করা হয়। তখনই বছরে একবার মায়ের ঘটের জল পাল্টানো হয়।
কেশবপুর গ্ৰাম বারোয়ারি শ্রী শ্রী কালীমাতা পুজো কমিটির কোষাধ্যক্ষ অশোক কুমার ঘোষ বলছেন, 'প্রথম দিকে মশাল জ্বেলে মায়ের পুজো হতো। তার পর হ্যাজাক এল, এখন প্রদীপ ও মোমবাতি জ্বেলে পুজো হয়। ঠাকুরের পুজোর জায়গায় কোন বৈদ্যুতিক আলো জ্বালানো যায় না। আগে যতবার জ্বালানোর চেষ্টা হয়েছে ততবার অলৌকিক ঘটনা ঘটেছে বা দুর্ঘটনা ঘটেছে।'
কথিত আছে, একবার কালীপুজোয় বলির সময় মা ক্রমশ এগিয়ে আসছিলেন। মা নিজেকে সংযত রাখতে পারছিলেন না। তখন পুরোহিতের কথা মতো মাকে লোহার বালার সঙ্গে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হতো। এখনও মায়ের গর্ভগৃহের ভিতর শিকল বাঁধার লোহার বালা লাগানো আছে। কেশবপুর দক্ষিণা কালীর মহিমা অপার। দূর দুরান্ত থেকে এখনও হাজার হাজার ভক্ত কালীপুজোর দিন উপস্থিত হন মায়ের মন্দির প্রাঙ্গণে। নিষ্ঠাভরে মায়ের কাছে পুজো নিবেদন করেন। মা সবার মনোবাসনা পুর্ণ করেন বলেই বিশ্বাস।























