Left-Congress Alliance : ২০১৬-য় শুরু জোটবদ্ধ লড়াই, এবার পঞ্চায়েত ভোটেও কি এক ছাতার তলায় বাম-কংগ্রেস ?
Panchayat Vote : সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার আগে, ফের সমঝোতায় শান দিল সিপিএম ও কংগ্রেস।
কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, মনোজ বন্দ্যোপাধ্যায়. সৌমিত্র রায়, কলকাতা : ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে হাত ধরাধরি করে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোটে লড়েছিল বাম ও কংগ্রেস। কিন্তু পুরোপুরি মুখ থুবড়ে পড়ে সেই প্রচেষ্টা । সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার আগে, ফের সমঝোতায় শান দিল সিপিএম ও কংগ্রেস।
সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার আগে কেউ জনংযোগ সারছেন, কেউ রাজ্য়র নানা প্রান্তে সভা মিছিল করছেন, আর সিবিআই-ইডি-আইটির হাত থেকে কোনও অভিযুক্ত রেহাই পাবে না বলে হুমকি দিচ্ছেন। আর সাগরদিঘি উপনির্বাচনে তৃণমূলকে হারানোয় উজ্জীবিত হয়ে রাস্তায় নেমেছে কংগ্রেস-সিপিএম। এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েত ভোটের আগে জোটের জল্পনা আরও বেশি করে উস্কে দিয়ে বীরভূমে যৌথ সভা করলেন মহম্মদ সেলিম ও অধীর চৌধুরী। তাও আবার সেই মাঠে কংগ্রেস-সিপিএম সভা করল, যেখানে সম্প্রতি অমিত শাহ সভা করে গেছেন ! সভামঞ্চ থেকে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের দাবি, বাম-কংগ্রেস বিক্রি হবে না। বাংলার আদিবাসী রাজবংশী সব এককাট্টা হবে।
একটা দল ২ দশক রাজ্যের ক্ষমতায় ছিল। আরেকটা দল রাজ্য চালিয়েছে ৩ দশক ধরে। অথচ আজ সেই দুই দলেরই ভগ্নপ্রায় দশা। এই পরিস্থিতিতে গ্রামবাংলার ভোটের আগে, একযোগে এগিয়ে চলার অঙ্গীকার করছে সিপিএম ও কংগ্রেস। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, 'বামেদের সঙ্গে বিরোধিতা ছিল। তখন তৃণমূলকে সমর্থন করেছিলাম। এখন বামেদের করছি। কোনও চালাকি নেই এর মধ্যে। কোনও চালাকি নেই।'
মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি উপনির্বাচনের সাফল্যকেই মডেল করে এগোচ্ছেন দুই দলের নেতারা। তৃণমূল আর বিজেপি - দুই শিবিরকেই প্রতিপক্ষ হিসাবে লাগাতার আক্রমণ করে চলেছেন তাঁরা। ঐতিহাসিকভাবে বিভিন্ন রাজ্যে প্রতিপক্ষ হলেও, ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে, প্রথমবার বাম ও কংগ্রেস জোট করে ভোটে লড়ে ৭৭টি আসনে জয়লাভ করে। এরপর ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে শেষ মুহূর্তে আসন সমঝোতা ভেস্তে গেলেও, কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বহরমপুর ও মালদা দক্ষিণে প্রার্থী দেয়নি বামেরা। ২০২১-এ ফের বাম, কংগ্রেসের মধ্যে জোট হয়। তাতে সামিল করা হয় আইএসএফ-কে। কিন্তু, ঐতিহাসিকভাবে রাজ্য বিধানসভায় একটিও আসনে জিততে পারেনি বাম ও কংগ্রেস। মালদা, মুর্শিদাবাদ যে কংগ্রেসের গড়, সেই মিথও কার্যত ধুয়েমুছে সাফ হয়ে যায় ! শেষ পর্যন্ত ২০২৩-এ সাগরদিঘি বিধানসভা উপনির্বাচনে জয় পায় কংগ্রেস। সিপিএমের সমর্থনে সাগরদিঘি থেকে জয়ী হন কংগ্রেসের বায়রন বিশ্বাস।
স্থানীয় নির্বাচনগুলির মধ্যে, ২০২১ সালের কলকাতা পুরভোটে প্রাপ্ত ভোটের হারের নিরিখে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে বামেরা। আর প্রাপ্ত আসনের নিরিখে তৃতীয় স্থানে ছিল কংগ্রেস। ২০২২ সালে ১০৮টা পুরসভার ভোটেও প্রাপ্ত ভোটের হারের নিরিখে দ্বিতীয় স্থানে ছিল বামেরা। পাশাপাশি বামেরা জয়ী হয় তাহেরপুর পুরসভায়। বিস্তর আইনি লড়াইয়ের পরে ঝালদায় শেষ পর্যন্ত বোর্ড গড়েছে কংগ্রেস।
এবার কি তাহলে পঞ্চায়েত ভোটেও জোট করে লড়বে সিপিএম-কংগ্রেস ? আর এই দুই দল যদি তাদের পুরনো সংখ্য়ালঘু ভোট ব্য়াঙ্ক ফেরাতে পারে, তাহলে কি তৃণমূলর কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়তে পারে ? অধীর চৌধুরী বলছেন, দিদিও যাবেন, মোদিও যাবেন। ভাইপো রাস্তায় নেমে সকলকে বোকা বানাচ্ছে।
কিন্তু, এই প্রেক্ষাপটেই অনেকেই মনে করাচ্ছেন, ২০১১ সালে তো বামেদের বিরুদ্ধে জোট করে ভোটে লড়ে ক্ষমতায় এসেছিল তৃণমূল ও কংগ্রেস! এখন কংগ্রেস তৃণমূলকে প্রতিপক্ষ করে, বামেদের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছে ! পঞ্চায়েত নির্বাচনে নিচুতলার কর্মীদের মনোভাবকে গুরুত্ব দেন রাজ্যস্তরের নেতারা। ফলে, আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে জোটের অঙ্ক কীভাবে এগোয়, সেটাই দেখার বিষয়।