স্মরণীয় বিচার সংগ্রহালয় সংস্কারের শিলান্যাস, এখানেই চলেছিল ঋষি অরবিন্দর বিরুদ্ধে আলিপুর বোমা মামলা
পাশাপাশি, আদালত চত্বরেই নতুন একটি সংগ্রহালয় ভবনের শিলান্যাসও করেন তিনি।
সৌভিক মজুমদার, কলকাতা: আলিপুর জেলা আদালতে স্মরণীয় বিচার সংগ্রহালয় সংস্কারের শিলান্যাস হল। সেইসঙ্গে নতুন একটি সংগ্রহালয় ভবনের শিলান্যাসও করলেন কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি।
আলিপুর জেলা আদালত। এখানেই ঋষি অরবিন্দর বিরুদ্ধে আলিপুর বোমা মামলা চলেছিল। সেই মামলা তো বটেই, আরও অনেক স্বাধীনতা সংগ্রামীর মামলা হয়েছিল এই আদালতে। আর সেইসব মামলারই নথি সংরক্ষিত রয়েছে এই স্মরণীয় বিচার সংগ্রহালয়ে।
এবার এই গ্যালারিরই সংস্কার হতে চলেছে। স্বাধীনতা দিবসে তারই শিলান্যাস করলেন কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দল। পাশাপাশি, আদালত চত্বরেই নতুন একটি সংগ্রহালয় ভবনের শিলান্যাসও করেন তিনি।
এ দিনের অনুষ্ঠানে ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়, বিচারপতি সৌমেন সেন, বিচারপতি সুব্রত তালুকদার, বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু, বিচারপতি শিবকান্ত প্রসাদ ও বিচাপরতি সৌগত ভট্টাচার্য। ছিলেন আলিপুর জেলা আদালতের বিচারকরাও।
ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা অরবিন্দ ঘোষ। দার্জিলিংয়ের ইংরেজি স্কুলে লেখাপড়ার সূত্রপাত তাঁর। এর পর পড়াশোনা ইংল্যান্ডে। সেখানে থাকার সময়ই ইতালি ও আয়ারল্যান্ডের ভাবধারার সঙ্গে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন তিনি। তবে দেশে স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন ভারতে ফেরার পর। ১৮৯০-তে কংগ্রেসের নরমপন্থী আন্দোলের কট্টর সমালোচনার মধ্য দিয়ে। সংগ্রামশীল জাতীয়তাবাদী মতবাদের অন্যতম নেতা ছিলেন তিনি।
ভারতীয় যুব সমাজকে নিজের লেখা, বক্তব্যের মাধ্যমে বিপ্লবী মতাদর্শে দীক্ষিত করার কাজ করেছেন তিনি। বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে স্বদেশি আন্দোলনে উজ্জ্বল ভূমিকার জন্য তিনি দেশের প্রথম সারির নেতা হিসেবে পরিচিত পেয়েছিলেন তিনি। দেশমাতৃকার মুক্তিই ছিল তাঁর একমাত্র লক্ষ্য। অরবিন্দ জাতীয়তাবাদকে ধর্মের আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। দেশের স্বাধীনতার জন্য তিনি ততদিনে বিপ্লবী গুপ্ত সংগঠনগুলির নেতৃত্ব দিতে শুরু করেন। গীতার নিষ্কাম কর্মের ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি তরুণ সমাজকে দেশের স্বাধীনতার সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান।
১৯০৮-এ আলিপুর বোমা ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেফতার হন তিনি। ১৯০৯ সালে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পান অরবিন্দ। কিন্তু জেলে থাকার সময়ই তাঁর রাজনৈতিক ভাবাদর্শে আধ্যাত্মিকার সংস্পর্শ ঘটে। তাঁর জীবনে পরিবর্তন শুরু হয়। আধ্যাত্মিকতার টানেই তিনি ১৯১০-এ রাজনীতি ত্যাগ করে পুদুচেরি চলে যান এবং সেখানে ধর্ম প্রচার আশ্রম প্রতিষ্ঠার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন। বিপ্লবী অরবিন্দ পরিণত হন ‘ঋষি অরবিন্দে’। ১৯৫০ সালের ৫ ডিসেম্বর মৃত্যু হয় তাঁর।