Dada Boudi Biriyani: ৩ কিলো চাল দিয়ে বিরিয়ানি করলেন, বিক্রি হল মাত্র ৩ প্লেট! কীভাবে শুরু হয়েছিল ব্যারাকপুরের দাদা-বৌদির হোটেল?
Dada Boudi Biriyani : দাদা-বৌদি হোটেলের নির্মাতা সেই সন্ধ্যা সাহাকে এবিপি আনন্দ সম্মানিত করেছে বাণিজ্যে সেরা বাঙালি হিসেবে
কলকাতা: বিভূতিভূষণের হাজারি ঠাকুরের যেমন ছিল আদর্শ হিন্দু হোটেল, তেমনই তাঁর ছিল জনতা হিন্দু হোটেল। হাজারি ঠাকুরের মতোই সততা আর পরিশ্রমের ফল আজ তাঁর হাতের মুঠোয়। লখনউ, হায়দরাবাদের পরে যেন বিরিয়ানির নতুন এক ঘরানার জন্ম তাঁর সংস্থার হাত ধরে। কেউ বলেন ব্যারাকপুর ঘরানা, আবার কেউ রসিকতা করে বলেন, বিরিয়ানিতে বিপ্লব। তিনি সন্ধ্যা সাহা। ব্যারাকপুরের দাদা বৌদির হোটেল শুরু হয়েছিল যাঁদের হাত ধরে, সেই বৌদিই হলেন এই সন্ধ্যা সাহা।
স্বামী বাজার করতেন আর স্ত্রী রান্না। প্রথম প্রথম পাওয়া যেন শুধু রুটি, ডাল আর সবজি। কিন্তু বৌদির রান্না একবার যাঁরা খেতেন, তাঁরা আর অন্য হোটেলমুখো হতেন না। এ যেন সাক্ষাৎ অন্নপূর্ণা। আপ্যায়ন আর হাতযশে, অল্প কিছুদিনের মধ্যে জনতা হিন্দু হোটেল হয়ে উঠল দাদা-বৌদির হোটেল। সন্ধ্যা সাহা বলছেন, 'আমি নিজে রান্না করতাম। এ বলত বৌদি রেখে দেবেন, ও বলত বৌদি করে দেবেন। সেই থেকেই দাদা দাদা, বৌদি বৌদি। অনেক কষ্ট করেছি। টালির হোটেলে জল পড়ত। ওখানেই আমরা দুজন থেকেছি দুটো বাচ্চা নিয়ে। একটা বস্তা আর বেডকভার পেতে ঘুমিয়েছি।'
শুরুটা যদি হয় টেস্ট ম্যাচ, তার পরেরটা টি-টোয়েন্টি। কলকাতা পেরিয়ে ব্যারাকপুরের একটা ছোট্ট হোটেলের, একটা পদের টানে যে দেশ-বিদেশ থেকে মানুষ ছুটে আসবে, তা কেউ কল্পনাই করতে পারেননি। তার বিরিয়ানি প্রেমের হাত ধরে আজ সিপাহী বিদ্রোহের শহর হয়ে উঠেছে সকালের গন্তব্য। তবে শুরুর দিকের সেই লড়াইয়ের দিনগুলি আজও ভোলেননি তিনি। সন্ধ্যা সাহা বলছেন, '৩ কিলো চাল দিয়ে বিরিয়ানি তৈরি শুরু করি। সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে নামিয়ে দিতাম। সেই বিরিয়ানিই রাত ১১টা পর্যন্ত হয়তো ৩ থেকে ৪ প্লেট বিক্রি হত।' পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে যে ব্যবসার শুরু তার নাম এখন লোকের মুখে মুখে। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন পরিশ্রম ও দক্ষতায় বাঙালি ব্যবসাতেও আকাশ ছুঁতে পারেন।
দাদা-বৌদি হোটেলের নির্মাতা সেই সন্ধ্যা সাহাকে এবিপি আনন্দ সম্মানিত করেছে বাণিজ্যে সেরা বাঙালি হিসেবে। এই পুরস্কার পেয়ে তিনি বলছেন, 'ছোট ছোট ছেলেদের নিয়ে কাজ করেছি। এই কাজ করে যে এই জায়গায় আসতে পেরেছি, ভীষণ ভাল লাগছে। খুব খুশি। যখন দোকানদারি শুরু করি, তখন ডাল, মাছ, ভাত এগুলোই করতাম। তারপরে বড় ছেলে বলে, মা বলো না বিরিয়ানি করব। ওর বাবা একেবারেই রাজি ছিলেন না। তখন ওর মামা অফিস আসত কলকাতায়। ছেলে মামাকে বলল, একটা হাঁড়ি এনে দিলে বিরিয়ানি রান্না হবে। খুব জোর করে একটা হাঁড়ি আনিয়ে শুরু হল বিরিয়ানি রান্না। আর এখন তো ব্যারাকপুরের অলিতে গলিতে বিরিয়ানির দোকান। সবাই দাদা-বৌদির সঙ্গে পাল্লা দিতে চায়। একসময়ে টালির চালের হোটেল ছিল এখন সাত তলা বিল্ডিং হয়েছে। ভীষণ খুশি। আমায় জনতাই দাদা-বৌদি বানিয়েছে।