Murshidabad PC: বাম-কংগ্রেসের তাস সেলিম! ২০১৪ ফেরাতে পারবে CPIM? না কি ফের ফুটবে ঘাসফুল?
Lok Sabha Election 2024: এবার মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ তৃতীয় দফায়- অর্থাৎ ৭ জুন। শেষ হাসি কে হাসবে?
কলকাতা: বাংলার ইতিহাস থেকে শুরু করে ভারতে ব্রিটিশদের আধিপত্য বিস্তারের ইতিহাস- সবেতেই বাংলার যে জেলার নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত সেটা হল মুর্শিদাবাদ। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট হোক কিংবা সামাজিক-অর্থনৈতিক কিংবা রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট- আলোচনায় বারবার উঠে আসে পশ্চিমবঙ্গের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী জেলা মুর্শিদাবাদ (Murshidabad District)। এই জেলায় তিনটি লোকসভা আসন রয়েছে। যার মধ্যে একটি মুশির্দাবাদ (যার PC Code 11)। অন্যদুটি জঙ্গিপুর ও বহরমপুর। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট অনুযায়ী- এই তিনটি আসনেই বাম ও কংগ্রেসের জোট এখনও পর্যন্ত বেশ ভালভাবেই কাজ করেছে।
মুর্শিদাবাদে এবারের সিপিএম প্রার্থী যথেষ্ট হেভিওয়েট। রাজ্য সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ সেলিম (Md Selim) এখানে কংগ্রেস সমর্থিত বামফ্রন্ট প্রার্থী। মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী আগেরবারের জয়ী সাংসদ আবু তাহের খান (Abu taher Khan)। জেলার রাজনীতিতে অন্যতম বড় নাম আবু তাহের। এই কেন্দ্রে এবারের লোকসভা ভোটে বিজেপি প্রার্থী মুর্শিদাবাদ বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক গৌরিশঙ্কর ঘোষ। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এই লোকসভা কেন্দ্রে এবার আলাদা প্রার্থী দিয়েছে ISF. ৭ মে এই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ।
মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের পরিচয়:
সাতটি বিধানসভা নিয়ে গঠিত এই লোকসভা কেন্দ্র। যার মধ্যে ছয়টি রয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলায়- ভগবানগোলা, রানিনগর, মুর্শিদাবাদ, হরিহরপাড়া, ডোমকল, জলঙ্গি। আর নদিয়া জেলায় থাকা করিমপুর বিধানসভা কেন্দ্র মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে।
Chanakyya.com-এর তথ্য অনুযায়ী এই লোকসভা কেন্দ্র (Murshidabad parliament constituency) সংখ্যালঘু অধ্যুষিত। মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬১ শতাংশ মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত। বাকিদের মধ্যে তফসিলি জাতিভুক্ত ১৫ শতাংশের মতো, তফসিলি জনজাতিভুক্ত দেড় শতাংশের মতো। এই লোকসভা কেন্দ্র এলাকায় সাক্ষরতার হার ৬০ শতাংশের সামান্য কম।
মুর্শিদাবাদ কেন্দ্র একসময় শক্ত বামঘাঁটি ছিল। পঞ্চাশের দশকের একেবারে প্রথমে তৈরি হয় এই লোকসভা কেন্দ্র। আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে নব্বইয়ের দশকের একেবারে শেষ পর্যন্ত এই লোকসভা কেন্দ্র টানা দখলে রেখেছিল বামেরা। তৃণমূল এই রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরেও দীর্ঘদিন এই আসন নিজেদেরর দখলে আনতে পারেনি। প্রথমবার এই আসনে তৃণমূল জয় পায় গত লোকসভা নির্বাচনে।
লোকসভা নির্বাচন ২০০৯:
এই নির্বাচনে এই কেন্দ্র দখলে এনেছিল কংগ্রেস। সেইবার রাজ্যে তৃণমূল ও কংগ্রেস জোট বেঁধে লড়াই করেছিল। কংগ্রেসের আব্দুল মান্নান হোসেন জয়ী হয়েছিলেন। তাঁর দখলে ছিল ৪৭ শতাংশ মতো ভোট। সিপিএমের প্রার্থী আনিসুর রহমান দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন- তাঁর ঝুলিতে ভোট ছিল ৪৩.৮ শতাংশের আশেপাশে।
লোকসভা নির্বাচন ২০১৪:
২০১১ সালে এই রাজ্যের রাজনৈতিক পালাবদল হয়েছিল। তারপর থেকে ক্রমশ ক্ষয়িষ্ণু হয়েছে বামেরা। কিন্তু মুর্শিবাদের ফলাফল বয়েছিল উল্টোখাতে। এই বারের লোকসভা নির্বাচনে সারা রাজ্যে মাত্র দুটি আসন জিতেছিল বামেরা- একটি রায়গঞ্জ, অন্য়টি মুর্শিদাবাদ। বামেদের প্রার্থী বদরুদ্দোজা খানের কাছে হেরে গিয়েছিলেন বিদায়ী সাংসদ কংগ্রেসের আব্দুল মান্নান হোসেন। বামপ্রার্থীর ঝুলিতে ছিল ৩৩.২ শতাংশ ভোট। কংগ্রেস প্রার্থীর ঝুলিতে ছিল ৩.৭ শতাংশ ভোট। এই ভোটে আলাদা প্রার্থী দিয়েছিল তৃণমূল। ঘাসফুল প্রতীকে আলি মহম্মদ পেয়েছিলেন ২২ শতাংশ মতো ভোট।
লোকসভা নির্বাচন ২০১৯:
এই বারের ভোটেই প্রথম মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রটি তৃণমূলের দখলে আসে। তৃণমূলের আবু তাহের খান ৪২ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছিলেন। কংগ্রেসের প্রার্থী ২৬.৩ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। সিপিএমের প্রার্থী বিদায়ী সাংসদ বদরুদ্দোজা খান ১২.৬ শতাংশ ভোট পেয়ে নেমে এসেছিলেন চতুর্থ স্থানে। অন্য়দিকে ১৭ শতাংশ ভোট পেয়ে চমকে দিয়েছিলেন বিজেপির প্রার্থী হুমায়ুন কবীর। এর আগে এই কেন্দ্রে এত ভোট কখনও পায়নি বিজেপি।
বিধানসভা নির্বাচন ২০২১:
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের তথ্য অনুযায়ী। মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সাতটি বিধানসভার মধ্যে ছয়টিতেই জয়ী হয়েছিল তৃণমূল। মাত্র একটি- মুর্শিদাবাদ বিধানসভা কেন্দ্রে জিতেছিল বিজেপি। বিধানসভার ভোটের ফল নিয়ে লোকসভাওয়ারি ভাবে সামগ্রিক ভাবে বিচার করলে ৫০ শতাংশেরও বেশি ভোট ছিল তৃণমূলের দখলে। ২০১৯এর তুলনায়য় সামান্য ভোট বাড়িয়ে প্রায় ১৯ শতাংশ ভোট ছিল বিজেপির দখলে। কংগ্রেস ও সিপিএম-এর কাছে আলাদা আলাদা করে ছিল ১২ থেকে ১৩ শতাংশ ভোট।
এই বার মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে দিকে নজর গোটা রাজ্যের। মহম্মদ সেলিমের হয়ে প্রচারে গিয়েছেন অধীর চৌধুরী। ডোমকলে অধীর ও সেলিম একসঙ্গে প্রচার সেরেছেন। জোটধর্মের সব ছবিই দেখা গিয়েছে। উল্টোদিকে এই আসন নিয়ে আত্মবিশ্বাসের ছবি দেখা গিয়েছে তৃণমূলের শিবিরে। পাশাপাশি জোরদার প্রচার চালাচ্ছে বিজেপিও। শেষ হাসি কে হাসবে তার জন্য অপেক্ষা ৪ জুনের।
তথ্যসূত্র:
elections24.eci.gov.in
old.eci.gov.in
chanakyya.com
indiavotes.com
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।
আরও পড়ুন: প্রতিবার পাল্টে যায় সাংসদ! এবার এই কেন্দ্রে দিলীপ-ম্যাজিক? নাকি ছক্কা হাঁকাবেন কীর্তি?