এক্সপ্লোর
Advertisement
বইয়ের প্রচ্ছদ থেকে রূপোলি পর্দায়, সত্যজিতের চিত্রনাট্যে কালজয়ী সৃষ্টি
বাস্তব জীবনের কল্পনাকে রূপোলি পর্দায় কবিতার আকারে ফুটিয়ে তুলতে সিদ্ধহস্ত ছিলেন তিনি। পথের পাঁচালি-র চিত্রনাট্য লেখার সঙ্গে সঙ্গে শিল্পী ও কলাকুশলীদের বাছাই করেন। সোমবার থেকে শুক্রবার কোম্পানির অফিসে কাজ করতেন। আর শ্যুটিং করতেন শনি ও রবিবার।
কলকাতা: ১৯২১-র ২ মে জন্ম সত্যজিত্ রায়ের। তাঁর শততম জন্মবার্ষিকীর সূচনা হল। এক প্রকাশনা সংস্থায় প্রচ্ছদ আঁকার কাজ করতেন তিনি। লন্ডনেও কিছুদিন কাজ করেছিলেন সত্যজিত। পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর ডিসকভারি অফ ইন্ডিয়া-র বাংলা সংস্করণের প্রচ্ছদও এঁকেছিলেন তিনি। এঁকেছিলেন আম আঁটির ভেঁপু বইয়েরও প্রচ্ছদ। এই বই ছিল কিশোর সংস্করণ। প্রচ্ছদ আঁকতে আঁকতেই ভেবেছিলেন যে মূল উপন্যাস পড়বেন। আর এই ভাবনা থেকেই উন্মুক্ত হয়েছিল ভারতীয় সিনেমার নতুন এক দিগন্তের। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অমর উপন্যাস পথের পাঁচালি ফুটে উঠেছিল সাদা-কালো আলেখ্যে-রূপোলি পর্দায়। তৈরি হয়েছিল কালজয়ী সিনেমা।
কলকাতায় ১৯৪৯ সালে ফরাসি চলচ্চিত্র পরিচালক জঁ রনোয়ার কলকাতায় দ্য রিভার ছবির শ্যুটিং করতে এলে, তার সঙ্গে সত্যজিতের সাক্ষাৎ ঘটে। এই সিনেমার শ্যুটিং দেখে সিনেমা সম্পর্কে আগ্রহী হন সত্যজিত। সিনেমা সম্পর্কে লেখা প্রচুর বইপত্র পড়েন তিনি। শেষপর্যন্ত পথের পাঁচালি-র চিত্রনাট্য লিখে ফেলেন তিনি। বিশ্ববরেণ্য পরিচালকের চিত্রনাট্যে শব্দের থেকে স্কেচের আধিক্য বেশি। বাস্তব জীবনের কল্পনাকে রূপোলি পর্দায় কবিতার আকারে ফুটিয়ে তুলতে সিদ্ধহস্ত ছিলেন তিনি। পথের পাঁচালি-র চিত্রনাট্য লেখার সঙ্গে সঙ্গে শিল্পী ও কলাকুশলীদের বাছাই করেন। সোমবার থেকে শুক্রবার কোম্পানির অফিসে কাজ করতেন। আর শ্যুটিং করতেন শনি ও রবিবার। এজন্য তাঁকে কেউ কেউ সপ্তাহান্তিক পরিচালকও বলতেন। সীমিত সাধ্যের মধ্যে সিনেমার তিন-চতুর্থাংশ কাজ সম্পূর্ণ হয়। কিন্তু এরপর আর্থিক সংকট দেখা দেয়। নিজের সঞ্চিত অর্থ, স্ত্রীর অলঙ্কার দিয়েও সমাধান হয় না অর্থসঙ্কটের। শেষে পাশে দাঁড়ালেন পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়।
প্রথাগত ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমে সত্যজিত রায়ের পথের পাঁচালি-র কোনও জায়গা ছিল না। তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর সুপারিশে সিনেমা পাঠানো হল কান চলচ্চিত্র উতসবে। সেখানে সমালোচকদের মন জয় করে নেয় এই সিনেমা।
পথের পাঁচালি সিনেমা তৈরির সময় সত্যজিত্ যখন আর্থিক সংকটে পড়েছিলেন, তখন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন কিশোর কুমারও। তিনি পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। কিশোর কুমারের প্রথম স্ত্রী রুমা গুহ ঠাকুরতার পরিবার সত্যজিতের দূর সম্পর্কের আত্মীয় ছিল। পরবর্তী কালে সত্যজিত্ যখনই ওই অর্থ ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, ততবারই তা নিতে অস্বীকার করেছিলেন কিশোর কুমার। আসলে এভাবেই বোধহয়, এই অসাধারণ সিনেমার সঙ্গে নিজের সম্পর্ক যুক্ত করে রাখতে চেয়েছিলেন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় শিল্পী।
কিশোর কুমারের দূর গগন কে ছাঁও মে ছিল সত্যজিত দ্বারা প্রভাবিত সিনেমা। রাজ কপূর সত্যজিত্ রায়ের গুপি গায়েন বাঘা বায়েন সিনেমা হিন্দিতে তৈরি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সিনেমার শিল্পী নির্বাচন নিয়ে মতপার্থক্যের কারণেই সেই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হয়নি।
পরিচালক হিসেবে সিনে জগতের গতিধারায় ভিন্ন ইতিহাস তৈরি করেছিলেন সত্যজিত্। মৃত্যুর আগেও অস্কারের ইতিহাসেও বদল ঘটে সত্যজিত্ রায়ের জন্যই। অসুস্থতার জন্য পুরস্কার নিতে যেতে পারেননি তিনি। তাঁকে অস্কার দিতে অস্কার কমিটিই এসেছিল কলকাতায়।
বিনোদন (Entertainment) লেটেস্ট খবর এবং আপডেট জানার জন্য দেখুন এবিপি লাইভ। ব্রেকিং নিউজ এবং ডেলি শিরোনাম দেখতে চোখ রাখুন এবিপি আনন্দ লাইভ টিভিতে
আরও দেখুন
Advertisement
ট্রেন্ডিং
Advertisement
Advertisement
সেরা শিরোনাম
জেলার খবর
পুজো পরব
ক্রিকেট
জেলার খবর
Advertisement