Durga Puja 2021 Exclusive: পুজো নিয়ে আমার প্রেক্ষাপটটা অনেক বড়: কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়
Durga Puja 2021 Exclusive: 'ছেলেবেলায় তো সারা বছর পড়াশোনাটাই করতে হত, তাই মনে হত কেন সারাবছরই পুজো হয় না। তাহলে পড়ার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যেত,' হাসতে হাসতে বলেন কনীনিকা।
কলকাতা: বর্ধমানে নিজেদের গ্রামের বাড়ি থাকায় ছেলেবেলায় কলকাতা এবং গ্রাম, উভয় জায়গারই দুর্গাপুজো উপভোগ করার সুযোগ পেয়েছিলেন অভিনেত্রী কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও বেশিরভাগ সময়টাই কাটিয়েছেন দক্ষিণ কলকাতার বকুল বাগানে। এবিপি লাইভকে একান্ত সাক্ষাৎকারে জানালেন, তাঁর কাছে পুজো মানেই জীবনের সমস্ত না পাওয়া, একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা, সবকিছু ভুলে প্রবলভাবে আনন্দে মেতে ওঠা। অভিনেত্রীর কথায়, 'পুজো মানে ওই চারদিনে আনন্দ করে যথেষ্ট এনার্জি সঞ্চয় করে নেওয়া যাতে বাকি বছরটা লড়াই করা যায়। এটা আমি ছোটবেলাতেই বুঝে নিয়েছি।'
'ছেলেবেলায় তো সারা বছর পড়াশোনাটাই করতে হত, তাই মনে হত কেন সারাবছরই পুজো হয় না। তাহলে পড়ার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যেত,' হাসতে হাসতে বলেন কনীনিকা। 'এখন চারিদিকে এত থিম পুজোর রমরমা। কিন্তু বকুল বাগানে আমি ছোট থেকেই দেখে আসছি আর্টের পুজো হয়। এক এক বছর এক একজন শিল্পী ঠাকুর তৈরি করেছেন। আমি থিয়েটার, গান, নাচ শিখে বড় হয়েছি, শিল্পী সত্ত্বা চিরকালই ছিল আমার মধ্যে। আর প্রত্যেক বছরের ভিন্ন শিল্পীদের কাজ দেখতে দেখতে সেটাই যেন ভিতরে একটা ভিত তৈরি করেছিল। একটা জিনিস উপলব্ধি করেছিলাম এটাই আমার শিক্ষার জায়গা।'
কনীনিকার কথায়, 'আমার মনে আছে একবার আমাদের বকুল বাগানে ঠাকুর হয়েছিল একটি বাচ্চা মেয়ের আদলে। তাঁর দশ হাতে দশটি ভেষজ অর্থাৎ পাতা ধরা ছিল। মনে পড়ে, আর একবার ঠাকুর হয়েছিল যেখানে প্রতিমার সারা দেহে অসংখ্য ছিদ্র ছিল। আমি বেলতলা গার্লসে পড়াশোনা করেছি। সব বন্ধুরা সাবেকী ঠাকুরের বদলে এমন আর্টের ঠাকুর দেখে খুব হাসিঠাট্টা করত। আমি যদিও কোনওদিন তাতে কান দিইনি। আমরা পুজোতে আনন্দ করার সঙ্গে শিখতামও প্রচুর। আমাদের প্রত্যেকটি বাচ্চাকে দাঁড় করিয়ে বলে দেওয়া হত ঠাকুরকে কোন বছর কী অর্থে এমন বানানো হচ্ছে। আমাদের কাজই ছিল দর্শনার্থীদের বুঝিয়ে দেওয়া আমাদের ঠাকুরের মানে কী।'
আরও পড়ুন: বন্ধুদের সঙ্গে বেরিয়ে দেদার খাওয়া-দাওয়া, বাড়ি ফেরার টাকাও ছিল না প্রিয়ঙ্কার
বর্ধমানের পুজো ঠিক কেমন কাটাতেন অভিনেত্রী? গ্রামের স্মৃতিও একেবারে তাজা কনীনিকার। 'বর্ধমানের পুজোয় একেবারে একচালার ঠাকুর হত। প্রচুর চাষি ভাইবোনেদের মাঝে শহর থেকে যাওয়া আমরা, মিলেমিশে একটা অদ্ভুত বাঙালিয়ানা তৈরি হত। সেখানে কোনও অভাবের জায়গা ছিল না।'
গ্রাম-শহর, দুই তরফেরই পুজো দেখেছেন কনীনিকা। তাই তিনি অনায়াসেই বলেন, 'পুজো নিয়ে প্রেক্ষাপটটা আমার অনেক বড়।' সেই পুজোর স্বাদ খানিকটা মেয়ে কিয়াকেও দিতে চেষ্টা করেন তিনি।
'পুজোটা আমি কলকাতা ছাড়া কিছু ভাবতেই পারতাম না। তবে ক্লাস সিক্সে নাটকের দলের সঙ্গে শো করতে গিয়েছিলাম বম্বে, পুণে। আমি চাঁদ ভীষণ অনুসরণ করি। তখন মনে আছে ট্রেনে যেতে যেতে চাঁদটা দেখে ভাবছিলাম একই চাঁদ আমিও দেখছি মা-ও দেখছেন। কিন্তু মা-কে আমি কাছে পাচ্ছি না। আসলে মা-কে ভীষণ মিস করতাম। তখন ওই চাঁদ দেখে প্রমিস করেছিলাম আর কখনও দুর্গাপুজোয় কলকাতা ছেড়ে কোথাও যাব না,' স্মৃতি রোমন্থন করতে করতে বলেন অভিনেত্রী।
সেই শো করতে গিয়েই আরও একটা গল্প মনে পড়ে তাঁর। 'আমাদের শোয়ের আগে লিস্ট দেওয়া হয়েছিল। তাতে লেখাই ছিল শুধুমাত্র তিনটে জামা নিয়ে যাওয়া যাবে। আমার বাবা সেই কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে ঠিক তিনটেই জামা প্যাক করে দিয়েছিলেন। তারপর ওখানে গিয়ে দেখি সব বাচ্চারা অজস্র নতুন নতুন জামা, জুতো, হেয়ারব্যান্ড নিয়ে এসেছে, রোজ সেজেগুজে বেরোচ্ছে। আর আমি সেই তিনটেই জামা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পরছি। তখন খুব অভিমান হয়েছিল বাবা ওপর, রাগ হয়েছিল। কিন্তু ভয়ে কিছু বলতেও পারিনি। সেইবার পুজোয় একটাও আর নতুন জামা পরিনি রাগ করে। যদিও এই বয়সে এসে মনে হয়, বাবা ঠিকই করেছিলেন। বাবা নিয়ম মেনেছিলেন। সেটাই আমিও শিখেছি।'
যদিও ছোটবেলায় নিজেকে করা প্রমিস এখন আর বিশেষ রাখতে পারেন না অভিনেত্রী। তাঁর কথায়, 'বিয়ের পর জীবন বদলেছে। পুজোয় আর কলকাতায় থাকা হয় না।' তবে একইসঙ্গে কনীনিকার মত, পরিবারের সঙ্গেই তো আসল পুজো। তাই এই পুজোর ছুটিতেই একসঙ্গে সময় কাটাতে ঘুরতে চলে যান পরিবারের সঙ্গে। এবছরেও যাচ্ছেন ছুটি কাটাতে, তবে কোথায় তা খোলসা করেননি অভিনেত্রী।