Lopamudra Sinha: 'নিজেরাই নিজেদের কবর খুঁড়েছি', খবর পড়তে পড়তে অজ্ঞান, গরমে 'আক্রান্ত' লোপামুদ্রা কেমন আছেন?
Lopamudra Sinha Health Update: খবর পড়তে গিয়ে গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েন অভিনেত্রী সঞ্চালিকা লোপামুদ্রা সিনহা। জানিয়েছেন, তাঁর এমনিতেই নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা আছে। কীভাবে সুস্থ থাকা যায় এখন, জানাচ্ছেন?
কলকাতা: একদিকে লোকসভা নির্বাচনের (Lok Sabha Election 2024) আবহে চড়ছে রাজনীতির পারদ, অন্যদিকে আবহাওয়াও একেবারেই শীতল হওয়ার নাম নিচ্ছে না। ক্রমেই বাড়ছে তাপমাত্রা। কলকাতাতেই তাপমাত্রা ৪০-এর কোঠা সেই যে পেরিয়েছে সেখান থেকে নিম্নমুখী হওয়ার কোনও লক্ষণ নজরে পড়ছে না। এমন অবস্থায় শরীরকে ঠান্ডা রাখা ও সুস্থ রাখা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। বজায় রাখা উচিত সুস্থ জীবন, বলছেন অভিনেত্রী ও সঞ্চালিকা লোপামুদ্রা সিন্হা (Lopamudra Sinha)। হঠাৎ কেন? দিন কয়েক আগের কথা। গত বৃহস্পতিবার, নিয়মমাফিক খবর পড়তে বসেছিলেন স্টুডিওয়। অভিনয় জগতের জনপ্রিয় মুখ লোপামুদ্রা বহুদিন ধরেই দূরদর্শনের (Doordarshan) সঞ্চালিকা। কিন্তু সেদিন খবর পড়তে পড়তে আচমকাই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি, অজ্ঞান হয়ে লুটিয়ে পড়েন চেয়ারেই। তারপর? এখন কেমন আছেন তিনি? এবিপি লাইভকে (ABP Live) কী জানালেন লোপামুদ্রা?
এমন অস্বাভাবিক গরমেও সুস্থ থাকতেই হবে! কী টিপস দিলেন লোপামুদ্রা?
অন্যান্য দিনের মতো গত বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিলও দূরদর্শনে চলছিল লাইভ নিউজ বুলেটিন। খবর পড়ছিলেন সঞ্চালিকা লোপামুদ্রা সিন্হা। ঠিক কী হয়েছিল? লোপামুদ্রা জানান, দূরদর্শনের অফিস সেন্ট্রালি এয়ারকন্ডিশনড। তাঁর কথায়, 'তার আগেরদিন এসি প্লান্টে কোনও সমস্যা হয়। ফলে সেদিনও তাপমাত্রা ২৯ ডিগ্রির নিচে নামানো সম্ভব হয়নি। ফলে পর্যাপ্ত ঠান্ডা ছিল না স্টুডিওয়। আর আমার এমনিতেই লো প্রেশার (নিম্ন রক্তচাপ) আছে। তার ওপর এই মাসের ৪-৫ তারিখ নাগাদ একটি কাজ শেষ হয়েছে। ফলে হাতেও এখন অনেকটা সময়। সকালে জিম আর সন্ধ্যায় হাঁটছিলাম রোজ। সবমিলিয়েই শরীরে চাপ পড়েছে বেশি হয়তো এই গরমে। এমনিতে সকালে বুলেটিন থাকলে ঘুমটা একটু আবছাই হয়। তারওপর সোশ্যাল মিডিয়া আসার পর রাতে ঘুমোতেও দেরিই হয়েছে। সেদিন খবর পড়তে শুরু করার ২০ মিনিট পর থেকে হঠাৎই খুব ঘামতে শুরু করি। জল নিয়ে খবর পড়তে বসার অভ্যাস কোনওদিনই নেই আমার, অনেকেরই জল রাখার অভ্যাস আছে, এবং সেটা খুব ভাল অভ্যাস। সেদিন আর তখন চারটে স্টোরি পড়া বাকি। দুটো উতরে দিই। তৃতীয় খবরটাও ছিল তাপপ্রবাহ নিয়ে। চতুর্থটা ছিল গরমে সতর্কীকরণ। তৃতীয় খবর পড়তে গিয়েই ধীরে ধীরে কথা জড়াতে শুরু করে, ঘামতে থাকি। চতুর্থ খবরের একটা অ্যানিমেশন সূচনা ভিডিও ছিল, সেটা চলতে শুরু করে যখন ততক্ষণে সব ঝাপসা। টেলিপ্রম্পটারেও কিছু আর দেখতে পাচ্ছিলাম না। এরপরেই চেয়ারেই উল্টে এলিয়ে পড়ি আমি। তড়িঘড়ি আমার প্রোডিউসার, ফ্লোর ম্যানেজার সক্কলে ছুটে আসেন। প্রায় মিনিট ২ মতো অজ্ঞান ছিলাম।' হালকা সেন্স ফিরতে শুনতে পান তাঁর এক সহকর্মী কপালের মাঝে দুই আঙুল দিয়ে চেপে ধরে জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করে চলেছেন, বলে চলেছেন, 'লোপা শুনতে পাচ্ছিস? কিছু হয়নি, কিছু হয়নি। ঠিক হয়ে যাবি।' লোপামুদ্রা একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন, সেখানেও দেখা যায় এই গোটা প্রক্রিয়া। চোখে মুখে জল দিয়ে তাঁর জ্ঞান ফিরিয়ে ধাতস্ত করে বিশ্রাম করতে দেওয়া হয়। এরপর তাঁর বাড়িতে খবর দেওয়া হয়, খাওয়া দাওয়া করে, স্যালাইন জল খেয়ে ডাক্তারের কাছে প্রেশার মাপালে তা আসে, ১০০/৬৫, নিজেই জানালেন অভিনেত্রী। অর্থাৎ এই ঘটনার সময়ে আনুমানিক রক্তচাপ ৮০/৫০-এ নেমে গিয়েছিল।
লোপামুদ্রা সিন্হার কথায়, তাঁর এমনিতেই রক্তচাপ স্বাভাবিকের থেকে কম থাকে, '৯০/৬০ প্রেশারেও আমার খবর পড়তে কোনও অসুবিধা হয়নি। এমন ঘটনা এই প্রথম। এর আগেও দু'বার আমি অজ্ঞান হয়েছি কিন্তু তা রক্তদানের পর, কিন্তু অন এয়ার এমন ঘটনা প্রথম।' প্রসঙ্গত, ২০০৪ সাল থেকে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তদের জন্য রক্তদান করেন লোপামুদ্রা।
স্বাস্থ্যকর ও নিয়মমাফিক জীবনযাপনেই বিশ্বাসী অভিনেত্রী। তা মেনে চলারও চেষ্টা করেন, তাতেও এমন কাণ্ড ঘটায় খানিক উদ্বিগ্নই অভিনেত্রী। তাঁর কথায়, 'আমি একদম ঘরের খাবার খাই। হালকা খাবার। ডিসিপ্লিনড লাইফ আমার। একটু ঘুমটা কম হয় আজকাল। কিন্তু তা সত্ত্বেও এমন ঘটল। যাঁরা প্রতিনিয়ত রাস্তায় বেরিয়ে কাজ করেন, তাঁদের সতর্ক হওয়া খুবই জরুরি। অনেক সাংবাদিকই রাস্তায় ঘুরে খবর সংগ্রহ করেন, তাঁরা তো মানুষের অন্যতম যোগাযোগের মাধ্যম, আবার অনেকেই এই অবস্থায় আউটডোর শ্যুট করেন, তাঁদের সুবিধার কথা ভেবে চ্যানেল বা প্রোডাকশন যদি আরও একটু উদ্যোগী হতে পারে, তাহলে ভাল। তবে কাজ তো সকলকেই করতে হবে। যে মানুষটি রোদে রিক্সা টানছেন, তাঁরও তো সেটা জীবিকা। এড়ানো তো যাবে না।'
এই গরমে সুস্থ থাকতে কী টোটকা দেবেন তিনি? লোপামুদ্রা বলছেন, 'নিজেদের প্রচণ্ডভাবে হাইড্রেটেড থাকতে হবে। হালকা খাবার খেতে পারলে ভাল। সানস্ক্রিন বা এসব আমি বিশেষ ব্যবহার করি না তাই খুব একটা জানি না। তবে ব্যবহার করলে ভাল। সঙ্গে রোদচশমা বা হালকা জামাকাপড় ব্যবহার করা উচিত।' তিনি বলে চলেন, 'এছাড়া আমরা যদি খানিক অন্যভাবেও সচেতন থাকতে পারি সেটাও দেখা উচিত। একটু যদি গাছ লাগানোর চেষ্টা করতে পারি। থাকি আমরা শহরে পায়রার খোপের মতো ফ্ল্যাটে ঠিকই কিন্তু সবুজ ধ্বংস কেন করব এত। সারাক্ষণ আমরা প্রকৃতির থেকে নিয়েই যাব, কিছুই ফেরাব না, তা বললে তো হয় না। আমরা তো নিজেদের কবর নিজেরাই খুঁড়েছি। ফ্ল্যাটবাড়িতে থেকেও গাছপালা করা যায়। আমিও ফ্ল্যাটে থাকি, কিন্তু বাড়ির পিছনে বাগান করেছি, সামনেও গাছ লাগিয়েছি।' তিনি জানাচ্ছেন একাধিক বড় প্রোডাকশনের সেটেই এখন বাতানুকূল যন্ত্রের ব্যবস্থা থাকে, কিন্তু যন্ত্রেরও তো যন্ত্রণা আছে।
আপাতত সুস্থ আছেন লোপামুদ্রা সিন্হা। স্বাভাবিক রুটিনে ফিরেছেন। তবে রক্তচাপ এখনও নিয়মিত মনিটরিং চলছে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিচ্ছেন তিনি।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।