Subrata Mukherjee Death: 'এমন কড়া রাজনীতিক, মিষ্টি মানুষ পাওয়া দুষ্কর,' সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের স্মৃতিচারণায় সুদীপ্তা চক্রবর্তী
Sudipta Chakraborty on Subrata Mukherjee: 'এমন কড়া রাজনীতিক, মিষ্টি মানুষ, ভোজনরসিক বাঙালি, সঙ্গীতপ্রেমী, শ্রমিক নেতা ও তুখোড় বাগ্মী; এমন দারুণ কম্বিনেশন খুঁজে পাওয়া দুষ্কর', বক্তব্য অভিনেত্রীর।
কলকাতা: বঙ্গ রাজনীতিতে নক্ষত্র পতন। গতকাল কালীপুজোর রাতে চলে গেলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায় (Subrata Mukherjee)। ৭৫ বছর বয়সে এসএসকেএম হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। রাত ৯টা ২২মিনিটে ম্যাসিভ কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের পর মৃত্যু হয় তাঁর। হাসপাতাল সূত্রে খবর এদিন সন্ধে নাগাদ হাসপাতালের উডবার্ন ওয়ার্ডের শৌচাগারে যান তিনি। এরপরই হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পঞ্চায়েতমন্ত্রী (Panchayet Minister) সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের অবস্থার অবনতি হওয়ায় তড়িঘড়ি তাঁকে দেখতে এসএসকেএমে (SSKM) গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee)।
সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের স্মৃতিচারণা করেছেন একাধিক রাজনীতিক ও ক্রিড়াবিদ। তাঁকে স্মরণ করে ফেসবুকে লম্বা পোস্ট লিখলেন অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তী। ফেসবুকে নিজের অ্যাকাউন্টে তাঁর উদ্দেশে অভিনেত্রী লেখেন, '২০০৪ সাল, জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারি মাস। দুজন যুবক আমার সঙ্গে কথা বলতে এলো একটা নাটক নিয়ে। তাদেরই একজনের লেখা নাটক টা। নাটকে তিন টে চরিত্র। ওদের আবদার, তিনটে তেই আমাকে অভিনয় করতে হবে। ওদের সঙ্গে ছিল দক্ষিণেশ্বর অঞ্চলের আরো কিছু তরতাজা ছেলেমেয়ে। তারা মিলে দল বেঁধেছে।
মঞ্চ আমাকে বরাবর ই টানে। তায় একসঙ্গে তিন চরিত্রে অভিনয় করার লোভ। সামলাতে পারলাম না। রাজি হয়ে গেলাম। শুরু হল মহলা। কিন্তু অভিনয় কোথায় করবো? হল্ এর date পাবে কি করে ওরা?
শুরু হল মঞ্চ খোঁজা।
স্টার থিয়েটার তখন ভয়ংকর অগ্নিকাণ্ডের ধাক্কা সামলে সবে নতুন করে সেজে উঠছে। দর্শক নিয়ে অভিনয় শুরু হবার মত অবস্থা তখনও হয়নি। কাজ চলছে। নাট্যকার/পরিচালক যুবকের র মাথায় আইডিয়া এলো, ওখানে আমাদের প্রথম অভিনয় হলে কেমন হয়? নববর্ষের সন্ধ্যেয় যদি করা যায় প্রিমিয়ার? হয় তো ভালই। কিন্তু হবে কি করে? হল্ তো খোলে নি। ওখানকার date ই বা পাওয়া যাবে কি করে? তাও আবার আমাদের পছন্দমত date?
সাহস করে ফোন করলাম সুব্রত দা কে। তিনি তখন কলকাতার মহানাগরিক / মেয়র। সব শুনে বললেন, "হল্ তো রেডি হতে সময় লাগবে সুদীপ্তা। পেশাদার ভাবে অভিনয় হবার যোগ্য এখনও হয়নি। টেকনিক্যাল বেশ কিছু সমস্যা এখনও আছে। make up room গুলো ও রেডি নয়।.."
আমি নাছোড়বান্দা।।।
"নটি বিনোদিনী যে মঞ্চে লাগাতার অভিনয় করে গিয়েছেন, সেই মঞ্চ নতুন সাজে সেজে ওঠার পর আমি যদি প্রথম অভিনয় করার সুযোগ পাই? সে তো ইতিহাস হবে। এ সুযোগ কি হাতছাড়া করা যায়?.."
সব শুনে আমাকে অফিসে আসতে বললেন সুব্রত দা। চলে গেলাম Esplanade এ, Corporatin অফিসে। সেই বড় ঘর টায় বসে অনেক কথা হল। চা বিস্কুট সহযোগে নাটকের গল্প, আমার বাবার কথা, বাবার সঙ্গে বিধানসভায় ওঁর আড্ডার কথা (বাবা তখন বিধানসভার Assistant Secretary ছিলেন), ওঁর নিজের অভিনয়ের অভিজ্ঞতার গল্প, শুটিংয়ের গল্প (সুব্রত দা বাংলা টেলিভিশনে এবং মঞ্চে অভিনয় করেছিলেন যুবক বয়সে), আরো কত কি !!!
আড্ডার ফলাফল দাঁড়ালো এই যে.... হল্ তো খুলতেই হবে, উনি চেষ্টা করবেন আমার তাড়ায় যদি সেটা তাড়াতাড়ি করে ফেলা যায়। তাতে সবারই উপকার।
উনি চেষ্টা করলেন।
তাড়া লাগলো।
স্টার থিয়েটার খুললো।
আমার স্বপ্নপূরণ হলো।
১৭ই এপ্রিল,২০০৪
অগ্নিকাণ্ড পরবর্তী স্টারের মঞ্চে আমি প্রথম অভিনয় করলাম।
নাটকের নাম - ইনা মিনা ডিকা
দলের নাম - Addiction
নাটক কার ও পরিচালক - Raajhorshee De
সেই দুই যুবকের একজন রাজর্ষি নিজে, আরেকজন Ommit Ganguly ।
ইতিহাসের অংশ হয়ে রইলাম আমরা সবাই, সুব্রত দার ব্যক্তিগত উদ্যোগে এবং কিছু টা প্রাতিষ্ঠানিক তৎপরতায়।
পরবর্তীকালে Kolkata Film Festival এর আয়োজনে Dinner party তে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর মুখে শুনেছি তাঁর 'সুব্রত দা'র যুবক বয়সের মজার মজার ঘটনার গল্প ও। সুব্রত দা নিজে ও সেই আড্ডায় বসে হাসিমুখে তারিয়ে তারিয়ে শুনেছেন সেই গল্প। আমরা হেসে গড়িয়ে পড়েছি। উনি বিব্রত না হয়ে নিজেই কিছু anecdotes যোগ করেছেন সেই সব গল্পে।
কাল রাত থেকে বারবার মনে পড়ছে ঘটনাগুলো।তাই লিখে ফেললাম। সক্রিয় রাজনীতি আমি করি না। সক্রিয় রাজনীতিক দের সঙ্গে খুব বেশি যোগাযোগ ও নেই। কিন্তু একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে মনে হয়, কিছু মানুষের রাজনীতি তে থাকা ভারতীয় সংসদীয় রাজনীতির জন্য ভাল। সুব্রত মুখোপাধ্যায় তাঁদের মধ্যে একজন।
এমন কড়া রাজনীতিক, এমন মিষ্টি মানুষ,এমন ভোজনরসিক বাঙালি, সঙ্গীতপ্রেমী, শ্রমিক নেতা ও তুখোড় বাগ্মী ….... এমন দারুণ combination খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
বাঙালি ও বাংলা তথা ভারতের রাজনীতি আপনার অভাব অনুভব করবে সুব্রত দা।
আপনি শান্তি পান।' (অপরিবর্তিত)
সকাল ১০টা থেকে চার ঘণ্টা রবীন্দ্রসদনে শায়িত রাখার পর প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিধানসভা ভবনে। সকাল থেকে প্রয়াত পঞ্চায়েতমন্ত্রীকে দেখতে উপচে পড়ে ভিড়। ভিড়ে সামিল ছিলেন রাজনীতিক থেকে সাধারণ মানুষ। ঘুরে যান সুব্রত ভট্টাচার্যর মতো প্রাক্তন ক্রীড়াবিদরাও। এসেছিলেন সুব্রতর সঙ্গে অভিনয় করা চিত্রতারকা মুনমুন সেনও। প্রয়াত নেতার মরদেহ বিধানসভা থেকে নিয়ে যাওয়া হবে বালিগঞ্জের বাড়িতে। এরপর কেওড়াতলা শ্মশানে হবে শেষকৃত্য।