মানসিক চাপ বসছে জাঁকিয়ে, মন খারাপ কাটছে না কিছুতেই, কোন বড় অসুখের ইঙ্গিত?
ভারতে ব্রেন ফগের সমস্যা ক্রমেই বাড়ছে। কোভিড-১৯ অতিমারীর পরবর্তী সময়ে এর প্রভাব বেড়েছে। এর কারণগুলি ঠিক কী।

মানসিক অবসাদ। দীর্ঘদিন ধরে প্রচণ্ড মানসিক চাপে থাকা। সব সময় মন খারাপ থাকা। এগুলিকে এখনও অনেক সময়ই গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয় না। মানসিক স্বাস্থ্য এখনও বহুক্ষেত্রেই উপেক্ষিত। মন খারাপ হওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু মানসিক চাপ যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে তা অবহেলা করার বিষয় নয়। চিকিৎসকরা বলছেন, মানসিক চাপ এবং একাকীত্ব দীর্ঘস্থায়ী হলে উপেক্ষা করবেন না। আসলে মস্তিষ্ক সম্ভবত তাঁকে কোনও বড় সতর্কবার্তা দিচ্ছে। এই অনুভূতিগুলিকে সাধারণ 'মুড সুইং' ভাবা ভুল হবে।
মানসিক অবসাদ অনেক ক্ষেত্রেই গভীর সমস্যার ফল। লাগাতার মানসিক চাপ এবং একাকীত্বের অনুভূতি সার্বিক স্বাস্থ্যের পক্ষেই ক্ষতিকর। নয়ডার নিও হাসপাতালের নিউরোলজিস্ট ড. রাজীব মোতিয়ানি বলেন, গত কয়েক বছরে অবসাদের প্রকোপ বেড়েছে। আর তার জন্য অনেকটাই দায়ী, জীবনযাত্রার খারাপ মান, কাজের চাপ, ডিজিটাল মাধ্যমে বেশি মনোনিবেশ ইত্যাদি। এই বিষয়গুলি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে মানুষকে মানসিকভাবে ক্লান্ত করে দিচ্ছে । এই পরিস্থিতিকে চিকিৎসার পরিভাষায় 'ব্রেন ফগ' বলে। ড. মোতিয়ানি জানান, ভারতে ব্রেন ফগের সমস্যা ক্রমেই বাড়ছে। কোভিড-১৯ অতিমারীর পরবর্তী সময়ে এর প্রভাব বেড়েছে। এর কারণগুলি ঠিক কী।
ডিজিটাল ওভারলোড এবং স্ক্রিনের উপর নির্ভরতা
ইদানীং মানুষের মুখোমুখি যোগাযোগের থেকে ইন্টারনেট মাধ্যমে যোগাযোগে বেশি আগ্রহী। বেশি স্ক্রিনটাইম, কমিয়ে দিচ্ছে মুখোমুখি যোগাযোগ। এর ফলে মানসিক ক্লান্তি বাড়ছে। এছাড়া ডিজিট্যাল মাধ্যনে বিভিন্ন অ্যাপের নোটিফিকেশন, বিভিন্ন আকর্ষণ, মনকে আরও অস্থির করে রাখছে। এই ধরনের পরিস্থিতিকে ডিজিটাল ওভারলোড সিন্ড্রোম বলছে।
কোভিডের পরের নিউরোলজিক্যাল প্রভাব
কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠা অধিকাংশ মানুষের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী নিউরোলজিক্যাল প্রভাব দেখা গিয়েছে, যা ব্রেন ফগ হিসাবে পরিচিত। এই সমস্যার হল উপসর্গগুলি স্মৃতিশক্তি হ্রাস, মনোযোগের অভাব এবং মানসিক অবসাদে। অনুমান করা হয় যে প্রায় ২৫-৩০% কোভিড রোগীর মধ্যে এই নিউরোলজিক্যাল উপসর্গগুলি পাওয়া যায়।
দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপের কারণে মানসিক স্বাস্থ্যে চাপ
মানসিক চাপকে বাড়িয়ে তুলতে অন্যতম ভূমিকা পালন করে, চাকরির অনিশ্চয়তা এবং সামাজিক চাপ। লাগাতার মানসিক চাপ মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে, যার ফলে স্মৃতি দুর্বল হয় এবং মানসিক দিক থেকে সজাগ থাকা যায় না।
পুষ্টির অভাব
ইদানিং প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। এছাড়া খাবারের সময়ও ঠিকঠাক নয়। এখন যে ধরনের খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত মানুষ, তাতে মস্তিষ্ক প্রয়োজনীয় পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ভিটামিন বি১২ এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের অভাব, মস্তিষ্কের দুর্বলতা এবং মানসিক ধোঁয়াশার সঙ্গে সম্পর্কিত।
পরিবেশগত কারণ এবং জলবায়ু চাপ
ভারতে ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতাও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অতিরিক্ত গরমের ফলে বিষণ্ণতা এবং অন্যান্য মানসিক রোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে বলে মনে করেন একদল গবেষক ।
ঘুমের ব্যাঘাত
অপূর্ণ বা বিঘ্নিত ঘুম মস্তিষ্ককে স্মৃতি দুর্বল করে। ঘুমানোর আগে মোবাইলে মনোনিবেশ ঘুমের কোয়ালিটি খারাপ করে।
এই চিকিৎসা বিকল্পগুলি আপনি চেষ্টা করতে পারেন
ব্রেন ফগ-এর সঙ্গে লড়াই করার কিছু সহজ উপায় আছে। এর মধ্যে ডিজিটাল ডিটক্স গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া প্রতি রাতে ৭-৮ ঘণ্টা পর্যাপ্ত ঘুম খুবই জরুরি। প্রয়োজনীয় পুষ্টির জন্য সুষম খাদ্যও গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপও মানসিক চাপ কমায়। বাড়তি প্রশান্তি দিতে পারে ধ্যান বা যোগ।
ডিসক্লেমার: লেখায় উল্লেখিত দাবি বা পদ্ধতি পরামর্শস্বরূপ। এটি মেনে চলার আগে অবশ্যই সরাসরি বিশেষজ্ঞ/চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
Check out below Health Tools-
Calculate Your Body Mass Index ( BMI )


















