Bengal Food Specials: রেসিপিতেই লুকিয়ে ট্যুইস্ট, শক্তিগড়ের ল্যাংচার জনপ্রিয়তা এই কারণেই আকাশছোঁয়া?
Shaktigarh Langcha: শক্তিগড়ের উপর দিয়ে গেলে ল্যাংচা খান না বা ল্যাংচা কেনেন না এরকম মানুষ খুব কমই আছেন। এমনকি অনেকেই উপহার হিসেবেও নিয়ে যান এই ল্যাংচা।
কমলকৃষ্ণ দে, পূর্ব বর্ধমান: ল্যাংচা (Lancha) বলতেই যে জায়গার নাম মনে পড়ে তা শক্তিগড়। যেন একে অপরের পরিপূরক। মিষ্টির রসনাতৃপ্তির অন্যতম পীঠস্থানও বলা যেতে পারে শক্তিগড়কে। শক্তিগড়ের (Shaktigarh Lancha) উপর দিয়ে গেলে ল্যাংচা খান না বা ল্যাংচা কেনেন না এরকম মানুষ খুব কমই আছেন। এমনকি অনেকেই উপহার হিসেবেও নিয়ে যান এই ল্যাংচা। (sweets)
ল্যাংচার ইতিহাস
শোনা যায়, কৃষ্ণনগরের রাজকন্যা সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল বর্ধমানের রাজপুত্রের। বিয়ের কিছুদিন পর রাজকুমারী অন্তঃসত্ত্বা হলে কৃষ্ণনগররাজ তার কন্যাকে নিয়ে আসেন আপন গৃহে। সবার মনে আনন্দ নতুন অতিথির আগমন ঘিরে কিন্তু এমন খুশির সময়েই রাজবাড়ীতে তৈরি হয় এক নতুন বিপত্তি। ক’দিন পর থেকেই রুচি হারিয়ে ফেলে রাজকন্যা। রাজবাড়ীর রাজভোগও তার বিস্বাদ মনে হয়। মেয়ের এই অবস্থা দেখে রাজা পড়লেন মহা দুশ্চিন্তায়। ডাক পড়ে রাজ্যের তাবড় তাবড় হাকিম কবিরাজের । একদিন রাজকন্যা নিজেই তাঁর বাবাকে ডেকে বললেন, তিনি বর্ধমানে শ্বশুরবাড়িতে থাকতে এক ময়রার হাতে তৈরি কালো রঙের ভাজা মিষ্টি রসে ডুবিয়ে খেয়েছিলেন। সেই মিষ্টি খেলেই নাকি তাঁর মুখের রুচি ফিরবে। কিন্তু তাঁর কন্যা সেই ময়রার নাম বলতে পারে না। শুধু বলেছিলেন,ময়রাটির একটি পা ছিল খোঁড়া।রাজা তাঁর দলবল পাঠালেন সেই ময়রাকে খুঁজে আনতে বর্ধমানে।অবশেষে তাকে খুঁজে নিয়ে আসা হল কৃষ্ণনগরের রাজবাড়িতে এবং তিনি আবার রাজকন্যার জন্য বানালেন এক ভাজা মিষ্টি এবং রসে দিয়ে নরম করে পরিবেশন করলেন রাজকন্যার জন্য।শুধু রাজকন্যাই না এই মিষ্টির স্বাদে মজে গেলেন স্বয়ং রাজাও। রাজকন্যা মিষ্টি খেয়েই সুস্থ এমন খবর ছড়িয়ে পড়লো সর্বত্র। তবে মিষ্টির নাম কী সেটা কেউই জানতেন না। অবশেষে সেই ময়রা,যিনি মিষ্টি বানিয়েছিলেন তিনি যেহেতু ল্যাংচিয়ে হাটেন তাই তার নামেই এই মিষ্টির নাম হল ল্যাংচা। রাজা খুশি হয়ে ময়রাকে দেন প্রচুর উপহার দেন। কৃষ্ণনগর থেকে বর্ধমানের ফিরে শক্তিগড়ের ল্যাংচা দোকান শুরু করে তিনি । শুধু ল্যাংচা মিষ্টিই বিক্রি হতে থাকলেন,আর মনে করা হয় সেখান থেকেই আজ শক্তিগড় হয়ে উঠেছে 'ল্যাংচার আতুড়ঘর'।
কীভাবে তৈরি হয় এই জনপ্রিয় ল্যাংচা? ছানার সঙ্গে প্রথমে ময়দা ও চালগুঁড়ি ভালো করে মিশিয়ে মেখে গুণগত মান ও স্বাদ বাড়াতে দেওয়া হয় খোয়া ক্ষীর। মিশ্রণটিকে ল্যাংচার আকার দিয়ে প্রথমে ভেজে নেওয়া হয় এবং তারপর রসে ভিজিয়ে রাখা হয়। এই মিষ্টি বানাতে গেলে ধৈর্যর পাশাপাশি দরকার মুন্সিয়ানারও। সঠিক মাপে, সঠিক উপাদান দিয়েই এই মিষ্টি তৈরি সম্ভব।
ল্যাংচা রেসিপি
গুঁড়ো দুধ, সুজি, ময়দা, বেকিং পাউডার থাকলেই চলবে। ১ কাপ গুঁড়ো দুধ, ২ চামচ সুজি, ২ চামচ ময়দা, হাফ চামচ বেকিং পাউডার একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। এবার তা দুধ দিয়ে খুব ভাল করে মেখে নিন। এই মাখা খুব বেশি টাইট হবে না। এবার এখান থেকে লেচির আকারে ল্যাংচা গড়ে নিন। সাদা তেলে ল্যাংচা ভেজে নিন। এবার অন্য একটা পাত্রে জল আর চিনি দিয়ে ফুটতে দিন। এর মধ্যে এলাচ গুঁড়ো মিশিয়ে নিন। এবার মিডিয়াম ফ্লেমে জ্বাল দিতে দিতে যখন তা ফুটবে তখন ল্যাংচাগুলো ছেড়ে দিন। এভাবে ১০ মিনিট ঢেকে রাখলেই ল্যাংচার মধ্যে রস প্রবেশ করে যাবে। গ্যাস বন্ধ করে ৫ মিনিট রেখে দিলেই তৈরি ল্যাংচা এবার খাওয়ার পালা।
কবে থেকে জনপ্রিয় হল এই মিষ্টি?
এর নেপথ্যেও রয়েছে এক ইতিহাস। লর্ড কার্জনও না কি এই মিষ্টির সুখ্যাতি করেছিলেন। ল্যাংচার জন্ম লগ্ন থেকে এখনো পর্যন্ত একইভাবে সকলের মন জয় করে আসছে শক্তিগড়ের ল্যাংচা। এখনও শক্তিগড় থেকে ফেরার সময় ল্যাংচা না খেয়ে বাড়ি ফেরার কথা ভাবতেই পারেন না অনেক বাঙালি। কর্মসূত্রে ধানবাদে থাকা এক ক্রেতা জানালেন ল্যাংচার প্রতি তার ভাললাগার কথা।
আজ শক্তিগড় হয়ে উঠেছে 'ল্যাংচার আঁতুড়ঘর'। চারপাশের বদল হলেও জনপ্রিয়তায় আজও ভাঁটা পড়েনি। জন্মলগ্ন থেকে এখনও পর্যন্ত একইভাবে সকলের মন জয় করে আসছে শক্তিগড়ের ল্যাংচা।