Child Delayed vaccination : বাচ্চার রুটিন ভ্যাকসিনেশন মিস করেছেন? কোনটি কতদিন পর নেওয়া যাবে ?
শিশুদের সার্বিক টিকাকরণে ঘাটতিতে কী কী সমস্যা হতে পারে, সমাধানই বা কী, এই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলেন, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অগ্নিমিতা গিরি সরকার।
দেশে করোনার তৃতীয় ঢেউ আসছেই। এই পূর্বাভাস দিয়ে রেখেছে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্বাস্থ্য সংস্থা। প্রেস বিবৃতি দিয়ে ইতিমধ্যেই একথা জানিয়েছে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন। থার্ড ওয়েভে শিশুরা সত্যিই কতটা আক্রান্ত হবে না হবে, তা সময়ই বলবে। তবে তার আগে আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে আরও একটি সম্ভাবনা। স্বাভাবিকভাবে একটি শিশু বয়সের ভিত্তিতে যেসব আবশ্যিক টিকাগুলি পেয়ে থাকে, তার সিংহভাগই নেওয়া হয়নি কোভিড পরিস্থিতিতে। সমস্যার সূত্রপাত ২০২০ তে। হঠাত্ করেই বিশ্বজুড়ে অতিমারী ছড়িয়ে পড়া, তার উপর তড়িঘড়ি লকডাউন নাড়া দিয়েছে সারা বিশ্বকে। এর জেরে স্বাভাবিক টিকাকরণ প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়েছে। বেরতে না পারার কারণে ঠিক সময়ে শিশুকে প্রতিষেধক দিতে নিয়ে যেতে পারেননি অনেক অভিভাবকই। এর জেরে তৈরি হয়েছে এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি। শুধু আমাদের দেশেই নয়, বিশ্বজুড়েই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা WHO-র হিসেব বলছে, ২০২০ সালে ভারতে DTP-1 অর্থাৎ ডিপথেরিয়া, টিটেনাস এবং পার্টুসিস প্রতিষেধকের প্রথম ডোজ পায়নি ৩০ লক্ষেরও বেশি শিশু। গোটা বিশ্বের নিরিখে যা সর্বোচ্চ! আন্তর্জাতিক মেডিক্যাল জার্নাল ল্যানসেটের ১৪ জুলাইয়ের প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত বছর বিশ্বে ৩ কোটি শিশু DTP-3 এবং ২ কোটি ৭০ লক্ষ শিশু MCV-1 প্রতিষেধক পায়নি।
চিকিত্সকদের আশঙ্কা, করোনা তো বিপদ বটেই, কিন্তু তার থেকেও ভয়াবহ হতে পারে প্রতিষেধক না দেওয়ার জন্য শিশুদের মধ্যে অন্যান্য রোগের প্রাদুর্ভাব লক্ষিত হলে। শিশুদের সার্বিক টিকাকরণে ঘাটতিতে কী কী সমস্যা হতে পারে, সমাধানই বা কী, এই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলেন, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অগ্নিমিতা গিরি সরকার।
ঠিক সময়ে টিকা নিতে পারলে কোন কোন রোগ ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে ?
সদ্যজাতকে হাসপাতালেই কয়েকটি টিকা দিয়ে দেওয়া হয়। যেমন ওরাল পোলিও। হেপাটাইটিস বি। বিসিজি। তাই করোনা পরিস্থিতিতেও এই টিকাগুলি মিস হয়নি শিশুদের। কিন্তু সমস্যা শুরু হয়েছে তারপর থেকেই। শিশুকে বাড়ি নিয়ে চলে যাওয়ার পর করোনা পরিস্থিতিতে বের করেননি অনেকেই। প্রত্যন্ত জায়গা থেকে ডাক্তারখানায় নিয়ে গিয়ে টিকাকরণ করাতে যেতে পারেননি অনেকেই। কিছুটা ভীতি, আবার কিছুটা অজ্ঞতাও কাজ করেছে এর পিছনে। এক মাস, দু মাস, এরপর হয়ত সেই টিকাই আর দেওয়া হয়নি। জন্মের পর ৬, ১০ ও ১৪ তম সপ্তাহে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ টিকা থাকে, যাকে বলে পেন্টাভ্যালেন্ট ভ্যাকসিন (diphtheria, pertussis, tetanus, and hepatitis B and Haemophilus influenzae type b). এগুলি মিস করে যাওয়ার অর্থ করোনার থেকেও ভয়ঙ্কর রোগের কবলে পড়তে পারে শিশুরা। ল্যানসেটের ১৪ জুলাইয়ের প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে কোভিড-১৯ এর প্রকোপে সারা বিশ্বজুড়েই স্বাভাবিক টিকাকরণ প্রক্রিয়াতে একটি বড়সড় ফাঁক তৈরি হয়েছে। এখনও বিশ্বজুড়ে যেখানে যেখানে অতিমারীর প্রভাব রয়েছে সেখানে বেশ কিছু প্রাণঘাতী রোগের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা শিশুরা। এছাড়াও ১২ থেকে ১৫ মাসের মধ্যে দেওয়া হয় MMR vaccine. এর মধ্যে আছে , হাম, রুবেলা, মামপস ( measles, mumps, and rubella) - এর প্রতিষেধক। তাই এইসব টিকা না দেওয়া মানে শিশু উন্মুক্ত হয়ে পড়ছে আরও কিছু প্রাণঘাতী রোগের থাবার সামনে। যেমন -
- হাম
-রুবেলা
-মাম্পস
- ডিপথেরিয়া
-পারটুসসিস
-টিটেনাস
-হেপাটাইটিস বি
-রোটা ডায়ারিয়া
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অগ্নিমিতা গিরি সরকার জানালেন, কোনওভাবে এর যে কোনও একটি টিকা মিস হয়ে গেলেও দেরি না করে নিয়ে নিতে হবে টিকাগুলি। একেবারে না নিলে যে ভয়ঙ্কর বিপদ, তার থেকে ঝুঁকি কিছুটা কমবে। তবে এখন সব সরকারি হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই টিকাকরণ শুরু হয়েছে। তাই কয়েক সপ্তাহ দেরি হলেও টিকা দিতে হবে শিশুকে। কারণ পরিসংখ্যান বলছে, করোনায় শিশুরা যতটা আক্রান্ত হয়েছে, বা শিশুমৃত্যু হয়েছে, তার থেকে কয়েকগুণ বেশ শিশুমৃত্যুঘটতে পারে উপরের যে কোনও একটি অসুখ বড় আকারে ছড়িয়ে পড়লে।
বিলম্বিত টিকাগ্রহণ বা একেবারেই না নেওয়ার বিষয়টি সামলাতে কী কী পদক্ষেপ করছে সরকার ?
শিশুর জন্মের পর থেকেই কম্পালসরি টিকাগুলি যাতে সব শিশুরা পায়, তার জন্য ২০১৪ সালে ভরত সরকার চালু করে মিশন ইন্দ্রধনুস । এই প্রকল্পকে আরও দুবার নতুন রূপ দেওয়া হয়। বর্তমানে মিশন ইন্দ্রধনুস ৩- এর লক্ষ্য যাতে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘরে ঘরে ভ্যাকসিন নিয়ে পৌঁছাতে পারে স্বাস্থ্যকর্মীরা। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে তা কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। তবুও সরকারি করোনা টিকাকরণ কেন্দ্রে প্রাপ্তবয়স্কদের ফোনেও এসএমএস পাঠানো হচ্ছে, বাড়ির বাচ্চাকে ঠিক সময়ে টিকা দিতে নিয়ে আসার জন্য ।
২০২০ সালে পোলিও টিকাকরণ কর্মসূচির স্বাভাবিক পদ্ধতি বাধাপ্রাপ্ত হয়, বহু শিশুই পোলিও টিকা নিতে পারেনি বেস কয়েক মাস। সেক্ষেত্রে কী করণীয় ?
ডা, অগ্নিমিতা জানালেন, আমাদের দেশ পোলিও-মুকেত হিসেবে ঘোষিত। কিন্তু টিকাকরণে গতি কমে যাওয়ায়, কয়েকটি পোলিও কেস যো আবার নতুন করে দেখা যাবে না, এমনটা কেই বা বলতে পারে !! তবে কারও ডোজ বাদ পড়ে থাকলে, অবিলম্বে তা শুরু করা আবশ্যক।
৫ বছর বয়স হয়ে গেলেও কী নিতে হবে না-নেওয়া পোলিও ডোজ ?
ডা. সরকার জানালেন, না। ৫ বছর বয়স হয়ে গেলে পোলিও হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। আর টিকা নিয়ে লাভও নেই।
শিশু করোনা আক্রান্ত হলে কতদিন পরে ভ্যাকসিন?
শিশু করোনা মুক্ত হওয়ার পর ২ সম্পাহ পেরিয়ে গেলেই ভ্যাকসিন নিতে পারে। স্টেরয়েড বা প্লাজমা থেরাপি হলে যদিও আরও একটু বেশি সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু সেটা কতটা , তা জানতে হবে শিশিরোগ বিশেষজ্ঞের থেকেই।
ল্যানসেটের দেওয়া পরিসংখ্যান বলছে, ২০২০ থেকে এখনও অবধি সারা বিশ্বে প্রায় ২ কোটে বাচ্চা রেগুলার ভ্যাকসিন মিস করেছে। ভারতে এই সংখ্যাটা ২১ লাখের কম নয়! এর ফলে ভয়ঙ্কর রোগের কবলে পড়লে শিশুমৃত্যু বাড়তে পারে। ইতিহাস বলছে, যখন ইবোলা মহামারী দেখা দিয়েছিল, তখন ইবোলায় আক্রানত হয়ে যত না মৃত্যু ঘটেছে, তার থেকেও বেশি শিশু মারা গিয়েছিল ভ্যাকসিনেশনে ঘাটতির জেরে। তাই কোনও মনেই করোনা আবহের অজুহাতে বাচ্চাকে নিয়মিত ভ্যাকসিনগুলি থেকে বঞ্চিত রাখা চলবে না।
Check out below Health Tools-
Calculate Your Body Mass Index ( BMI )