পায়েল মজুমদার, কলকাতা: শীত প্রায় চলে যাওয়ার মুখে, এখন বসন্তের গুঞ্জন চার দিকে। কিন্তু শীতের মরসুমে যে একটার পর একটা নেমন্তন্ন (invitation) বা পিকনিকে (picnic) হুল্লোড় করেছেন, তার জেরও কি চলে গেল? জিন্সটা কোমরে আঁটসাঁট (sudden weight gain) হচ্ছে কি? গালে একটু বেশি ফোলাভাব? নেমন্তন্নের আনন্দে হয়তো সাঁটিয়ে খাওয়াদাওয়া সেরেছেন, এবার বাড়তি মেদের কী হবে? উদ্বেগটা হয়তো কম-বেশি অনেকেরই চেনা। বিশেষজ্ঞদের অবশ্য পরামর্শ, বাড়তি মেদ নিয়ে এই চিন্তা শুরু হোক কব্জি ডুবিয়ে খাওয়াদাওয়ার পর্ব শুরুর আগে থেকেই।


উপসর্গ?
বাঙালি বিয়েবাড়ি মানেই বিরিয়ানি, পোলাও, ফিশ ফ্রাই থেকে মাটন রোগন জোশের মতো জিভে জল আনা হাই ক্যালোরি খাবার। দেখে লোভ সামলানো বেশ কঠিন। এহেন পরিস্থিতিতে কী করণীয়? ডায়েট ভুলে বেশিরভাগই হয়তো জম্পেশ খাওয়াদাওয়ায় নজর দিই। ফল? 



  • মেদবৃদ্ধি যার অন্যতম প্রতিফলন কোমরের মাপ বেড়ে যাওয়া

  • দেখা দিতে পারে উচ্চ রক্তচাপও

  • কোমর ও হাঁটুতে ব্যথা

  • শ্বাসকষ্ট

  • যে কোনও ধরনের শারীরিক কসরতে অনীহা

  • ঘুমোনোর সময় নাক ডাকার তীব্রতা বেড়ে যাওয়া


বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ...
হাওড়া নারায়ণা হাসপাতালের সিনিয়র ডায়াটিশিয়ান রাখী চট্টোপাধ্যায় বললেন, 'প্রথমেই মনে রাখা দরকার যে কোনও ধরনের হাই-ক্যালোরি খাবারই মেদবৃদ্ধির অন্যতম কারণ। এবং হাই-ক্যালোরি মানে শুধু হাই-ফ্যাট নয়, হাই-কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধও খাবারও বটে।' কিন্তু সকলের আগে পেট ও কোমরের কাছেই কেন মেদবাহুল্য বেশি দেখা যায়? রাখীর ব্যাখ্যা, 'শরীরের সবচেয়ে বেশি পরিমাণ অ্যাডিপোজ টিস্যু রয়েছে এই অঞ্চলেই। তাই মেদ জমলে সাধারণত সকলের আগে এখানেই ধরা পড়ে।' তবে দুজন সম পরিমাণ হাই-ক্যালোরি খাওয়াদাওয়া করলেই যে তাঁদের যে একইভাবে মেদবৃদ্ধি হবে, তা নয়। ব্যক্তিভেদে এই তারতম্য মূলত বেসাল মেটাবলিক রেট বা 'বিএমআর'  এবং 'বডি ফ্যাট পারসেন্টেজ'-র উপর নির্ভর করে, মনে করেন রাখী। সুতরাং সকলের ক্ষেত্রে 'ওভারইটিং'-র সংজ্ঞা ও মাত্রা এক নয়, ফলাফলও এক নয়। 


কী করণীয়?
বিশেষজ্ঞদের মতে, কোনও দিন হাই ক্যালোরি খাবার পরিমাণে বেশি খাওয়া হয়ে গেলেও উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। এই থেকে যে বাড়তি মেদ আসবে, তা ঝরিয়ে ফেলার উপায় রয়েছে। কিন্তু মেদ জমার আগেই তা নিয়ে সচেতন হলে পরিস্থিতি আরও সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।  হাওড়া নারায়ণা হাসপাতালের সিনিয়র ডায়াটিশিয়ান রাখী চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, 'যদি কোনও নিমন্ত্রণ থাকে, তা হলে সেই বুঝে আগে থেকে খাওয়াদাওয়া নিয়ে সচেতন হতে হবে। নিমন্ত্রণ যদি রাতের বেলা হয়, তা হলে সকাল ও দুপুরের খাবারে যেন লো-ক্যালোরি পদ থাকে। উদ্দেশ্য একটাই। সারা দিনে খাবার থেকে যে ক্যালোরি আসছে, তার মোট পরিমাণের যেন হেরফের না হয়।' তা ছাড়া, খালি পেটে কখনওই কোনও অনুষ্ঠান বাড়ি যাওয়া উচিত নয়। এতে অনুষ্ঠান বাড়ির জিভে জল আনা খাবার পরিমাণে অনেকটা খেয়ে নেওয়ার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। তবে কোন পদ খাবেন সেটি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ভাবনাচিন্তার উপর অনেকটাই নির্ভরশীল। অনুষ্ঠানবাড়ির মেনুতেও  এমন পদ থাকে যা তুলনামূলক ভাবে কম ক্যালোরিসম্পন্ন। সেগুলি খেলে সমস্যা অনেকটাই হতে পারে, মনে করেন রাখী। এসবের পাশাপাশি আরও একটি বিষয়ে জোর দিচ্ছেন তিনি। ওয়ার্কআউট। প্রত্যেক দিন, ১০-১৫ মিনিটের ঘাম ঝরানো যে কোনও ওয়ার্কআউট মেদবৃদ্ধির বিষয়টি কমাতে পারে। 
সহজ কথায়, বাড়তি মেদের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে আনতে উৎসব-অনুষ্ঠানের বাহারি খাবার থেকে নিজেকে বঞ্চিত করার দরকার নেই। তবে সংযম জরুরি। 


আরও পড়ুন:অরিজিনাল অ্যাডমিট কার্ড ও রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক, কড়া নজরদারিতে আজ শুরু মাধ্যমিক