অপরিচিত যুবকের জন্য বেড ছেড়ে বাড়িতে মৃত্যু অশীতিপর আরএসএস সদস্যের!
সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ঘটনা আলোড়ন তৈরি করেছে।সকলেই ৮৫ বছরের আরএসএস সদস্যের আত্মত্যাগের ঘটনায় আপ্লুত।করোনার এই কঠিন সময়ে যখন অসুস্থদের অনেকেই হাসপাতালের বেড তো বটেই, পরীক্ষা রিপোর্ট পেতে চাতকের অপেক্ষায় রয়েছেন, তখন ওই বৃদ্ধের চরম আত্মত্যাগের ঘটনা সামনে এসেছে।
নাগপুর: দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়েছে। চতুর্দিকে হাসপাতালে বেড, অক্সিজেন ও ওষুধপত্র নিয়ে হাহাকার চলছে। এরইমধ্যে মহারাষ্ট্রের নাগপুরের একটি ঘটনা সবার নজর কেড়ে নিয়েছে। এক অশীতিপর করোনা আক্রান্ত বৃদ্ধ বছর চল্লিশের এক যুবকের জীবন বাঁচাতে হাসপাতালের বেড ছেড়ে দেন। এর তিনদিন পর বাড়িতেই অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যু হয় ওই বৃদ্ধের। তিনি রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ (আরএসএস)-এর সদস্য বলে জানা গেছে। তাঁর নাম নারায়ণ দাভাদকর।
সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ঘটনা আলোড়ন তৈরি করেছে।সকলেই ৮৫ বছরের আরএসএস সদস্যের আত্মত্যাগের ঘটনায় আপ্লুত।
করোনার এই কঠিন সময়ে যখন অসুস্থদের অনেকেই হাসপাতালের বেড তো বটেই, পরীক্ষা রিপোর্ট পেতে চাতকের অপেক্ষায় রয়েছেন, তখন ওই বৃদ্ধের চরম আত্মত্যাগের ঘটনা সামনে এসেছে। জানা গেছে, দাভাদকরের শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা খুবই কমে যায়। তাঁর মেয়ের চেষ্টায় হাসপাতালের একটা বেড কোনওক্রমে যোগাড় হয়েছিল। হাসপাতালে এসে ভর্তির কাগজপত্রের কাজ সম্পূর্ণ করার পর তিনি দেখলেন, এক যুবতী ফুঁপিয়ে কেঁদে চলেছেন। করোনা আক্রান্ত তাঁর স্বামী। অবস্থা আশঙ্কাজনক। একটা বেডের জন্য অসহায় আর্তি জানাচ্ছেন ওই মহিলা। আর তা দেখে নিজে আর হাসপাতালে ভর্তি হলেন না দাভাদকর। নিজের বেড ওই মহিলার স্বামীর জন্য ছেড়ে দিলেন।
এক্ষেত্রে দাভাদকর যুক্তি দেন, এখন আমার বয়স ৮৫, অনেকদিন তো বেঁচেছি। আপনাদের ওই ব্যক্তিকে বেড দেওয়া উচিত। ওঁকে ওঁনার সন্তানদের জন্য বাঁচতে হবে।
এরপর আর হাসপাতালে থাকেননি দাভাদকর। বাড়ি ফিরে আসেন। ঘটনার তিন দিন পর প্রয়াত হন তিনি।হাসপাতালে বেডের আকাল রয়েছে যেখানে, সেখানে অন্যের জন্য বেড পেয়েও ছেড়ে দিলেন দাভাদকর।
অতিমারীর সময়ে মানুষের দয়ার্দ্র চিত্তের অনেক ঘটনাই সামনে এসেছে। এবার অশীতিপর বৃদ্ধের এই আত্মত্যাগের ঘটনা অনেকের চোখেই জল এনে দিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর উচ্ছ্বসিত প্রশংসায় সরব হয়েছেন নেটিজেনরা।
জানা গেছে, দাভাদকরের মেয়ে ও জামাতা তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে, তাঁর চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে। আর এভাবে বেড ছেড়ে দিলে আর বেড পাওয়া যাবে, এমন কোনও নিশ্চয়তা নেই। কিন্তু দাভাদকর মেয়েকে ফোন করে জানান, তিনি বাড়ি ফিরছেন।আর এটাই তাঁর পক্ষে ঠিক কাজ হবে। দাভাদকরের মেয়ে বাবার মনের কথা জানতে পেরে আর কথা বাড়াননি। দাভাদকর সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর করে বাড়িতে ফিরে আসেন।
এদিকে, এই দাবি ঘিরে ধোঁয়াশাও তৈরি হয়েছে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুসারে, সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মেডিক্যাল পরামর্শ উপেক্ষা করেই দাভাদকর হাসপাতাল থেকে ছুটি নিয়েছিলেন। কিন্তু অন্য কোনও রোগীর জন্য তিনি তাঁর বেড ছেড়েছিলেন কিনা, সে বিষয়ে তাঁরা স্পষ্টভাবে কিছু জানাতে পারেননি।
শিলু চিমুকর নাগপুর পুরসভা পরিচালিত ওই হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক শীলু চিমুরকার জানিয়েছেন, গত ২২ এপ্রিল সন্ধে ছয়টা নাগাদ দাভাদকর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডে অক্সিজেনযুক্ত বেডে তাঁকে ভর্তি করা হয়। তাঁর সঙ্গে থাকা পরিজনদের তাঁরা জানান যে, অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে অন্য কোনও হাসপাতালে নিয়ে যেতে হতে পারে।তাঁরা রাত আটটা নাগাদ ফিরে এসে দাভাদকরকে ছেড়ে দিতে বলেন। তাঁর জামাতা সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর করার পর দাভাদকরকে ছেড়ে দেওয়া হয়। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে যে, চিকিৎসকদের কাছে সোশ্যাল মিডিয়ায় যে ঘটনার কথা ঘোরাফেরা করছে, সে ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয়েছিল। এর জবাবে চিমুরকর বলেছেন, ওই দিন কর্তব্যরত কর্মীরা এমন কিছু দেখেননি।