Assam Woman on Covid19: করোনা আক্রান্ত শ্বশুর, কাঁধে তুলে জীবন রক্ষার লড়াই বৌমার
২৪ বছর বয়সী অসমের বাসিন্দা নীহারিকা দাস। গত ২ জুন তাঁর শ্বশুরের করোনার উপসর্গ দেখা যায়। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য অটোর ব্যবস্থা করেন। কিন্তু ৭৫ বছর বয়সী শ্বশুর থুলেশ্বর দাস এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন যে অটোতে ওঠার মতো ক্ষমতাও ছিল না তাঁর।
নয়াদিল্লি: করোনা আক্রান্ত শ্বশুর। ক্রমেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন তিনি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শ্বশুরকে কাঁধে তুলে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে গেলেন অসমের তরুণী। ইতিমধ্যে ঘটনা ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
২৪ বছর বয়সী অসমের বাসিন্দা নীহারিকা দাস। গত ২ জুন তাঁর শ্বশুরের করোনার উপসর্গ দেখা যায়। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য অটোর ব্যবস্থা করেন। কিন্তু ৭৫ বছর বয়সী শ্বশুর থুলেশ্বর দাস এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন যে অটোতে ওঠার মতো ক্ষমতাও ছিল না তাঁর। নীহারিকা বলেন, বাবা এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন যে উঠে দাঁড়াতেই পারছিলেন না। এদিকে বাড়ি পর্যন্ত যেতে পারবে না অটো। শরীর এতটাই দুর্বল যে রাস্তায় অটোকে গিয়ে ওঠার প্রশ্নই আসে না। এদিকে নীহারিকার স্বামী কর্মসূত্রে থাকেন শিলিগুড়িতে। অসুস্থ শ্বশুরের পাশে মুসকিল আসান হয়ে দাঁড়ালেন তরুণী। কাঁধে তুলে অটো পর্যন্ত নিয়ে গেলেন শ্বশুরকে।
পরনে গোলাপি রঙা মেখলা। এলোমেলো চুল। একটাই লক্ষ্য করোনা আক্রান্ত শ্বশুরের দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। তবে এখানেই শেষ নয়। প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে গেলে নমুনা পরীক্ষা করা হয় থুলেশ্বর দাসের। দেখা যায়, করোনা আক্রান্ত তিনি। দ্রুত শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। তাঁকে কোভিড হাসপাতালে স্থানান্তর করার ব্যবস্থা করা হয়। তবে কোনও স্ট্রেচার বা অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যায়নি। নীহারিকা বলেন, ওই অবস্থায় কোনও অ্য়াম্বুলেন্স ছিল না। এমনকী কোনও স্ট্রেচারও পাইনি। একটি গাড়ি ভাড়া করি। ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে গাড়ি পর্যন্ত আবার কাঁধে তুলে নিই বাবাকে।
এই পরিস্থিতিতে একাধিক প্রতিকূলতার মুখে পড়েছেন নীহারিকা। তিনি জানান, চারপাশের সবাই তাঁদের দেখে দূরে চলে যাচ্ছিল। কেউ সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেনি। শারীরিক শক্তির পাশাপাশি এই কাজের জন্য মানসিক জোরও দরকার ছিল বলে জানিয়েছেন নীহারিকা। নাগাওনের যে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় থুলেশ্বরকে। কিন্তু সেখানে পরিকাঠামো ছিল না বলে অভিযোগ। পরে স্থানান্তর করা হয় নাগাওন সিভিল হাসপাতালে । নীহারিকা জানিয়েছেন, সব মিলিয়ে প্রায় ২ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেছেন তিনি।
কিন্তু এত কিছুর পরেও বাঁচানো যায়নি ওই ব্যক্তিকে। চলতি সপ্তাহের সোমবার গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রয়াত হন তিনি। নীহারিকার এই ভূমিকায় প্রশংসা করেছেন নেটিজেনরা। এক নেটিজেন লিখেছেন, নারী শক্তি অন্যতম উদাহরণ এটা। রাহার বাসিন্দা নীহারিকা দাস নামে এক তরুণী করোনা আক্রান্ত শ্বশুরথুলেশ্বর দাসকে পিঠে তুলে নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছেন। পরে তিনিও করোনা আক্রান্ত হন। একজন মহিলাকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করি। এ প্রসঙ্গে নীহারিকা বলেন, অনুপ্রেরণা হতে পেরে অবশ্যই ভাল লাগছে।
করোনাকালে দিকে দিকে অমানবিকতার ছবি সামনে এসেছে। করোনা আক্রান্ত হয়ে মা বাবার মৃত্যু হলেও এগিয়ে আসছেন না ছেলে মেয়েরা। আবার প্রিয়জন করোনা আক্রান্ত হলেও দূরে সরে যাচ্ছেন অনেকেই। এই পরিস্থিতিতে জীবনেরব ঝুঁকি নিয়ে নীহারিকার এই কাজে মুগ্ধ দেশবাসী। তাঁর কথায়, আমি একটাই কথা বলতে চাই এই কঠিন সময়ে বাবা মা, প্রিয়জন বা অপরিচিত কোনও ব্যক্তির পাশে দাঁড়ান। ছবিতে আমাকে দেখে যতটা ভাল লাগছে আসলে মোটেই তেমনটা নয়। সেই সময় মারাত্মক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম। একইসঙ্গে তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন গ্রামীণ ভারতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এখও কতটা অনুন্নত।