ওয়াশিংটন ডিসি : করোনা অতিমারিতে পাল্টে গিয়েছে অনেক কিছুই। সেই তালিকায় রয়েছে কাজের ধরন। সংক্রমণ এড়াতে বড় বড় কর্পোরেট হাউস থেকে অনেক বেসরকারি সংস্থাই ওয়ার্ক ফ্রম হোম বা রিমোট ওয়ার্কের পথে হাঁটা শুরু করে। বছরের বেশি সময় অতিবাহিত এভাবে। কিন্তু, এখন কোথায় দাঁড়িয়ে এই সুযোগ-সুবিধা ? বড় বড় হাউসগুলি কী বলছে ? কর্মীরা রিমোট ওয়ার্কে কতটা স্বাচ্ছন্দ বোধ করছেন? তাঁরা কি এভাবেই কাজ চালিয়ে যেতে চাইছেন ? নাকি অফিসের সেই পুরানো পরিবেশে ফিরতে মরিয়া ? এনিয়ে চলছে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা, সমীক্ষা। 'নিউ নর্মাল'-এর যুগে একাংশ নিয়োগকর্তা চাইছেন, এবার অফিসে আসুক কর্মীরা। অন্যদিকে একটা বড় অংশের কর্মীই বলছেন, এই তো ভাল চলছে। রিমোট ওয়ার্ক-ই চলুক না।


এক্ষেত্রে Google থেকে Ford Motor Co. বা Citigroup Inc.-এর মতো সংস্থা নমনীয়তার পথে হাঁটতে চাইছে। আবার অনেক চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসে আসার গুরুত্ব নিয়ে প্রকাশ্যে সওয়াল করেছেন। কেউ কেউ রিমোট ওয়ার্কের সমূহ বিপদের কথা তুলে ধরেছেন। তাঁদের মতে, এভাবে কাজ চললে কোম্পানি কালচার নষ্ট হয়ে যাবে। 


যদিও একটা বিরাট অংশের কর্মী এই মতের পক্ষপাতী নন। তাঁদের বক্তব্য, গত এক বছরে এটা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে যে, এমন অনেক কাজ রয়েছে যা যে কোনও জায়গা থেকে করা যায়। তাছাড়া ভিড় ট্রেনে বা হাইওয়ে ধরে যাতায়াতও এড়ানো যাবে। এই পরিস্থিতিতে কেউ কেউ অফিস যাচ্ছেন। আবার অনেকের এখনও ভাইরাস নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। শুধু ভাইরাস নিয়েই নয়, ভ্যাকসিন নিতে দ্বিধাগ্রস্ত এমন সহকর্মীদের নিয়েও তাঁরা চিন্তিত। 


কেউ কেউ এই মত প্রকাশ করেছেন, এমন অনেক বস রয়েছেন যাঁরা নিচুতলার কর্মীদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান। তাঁদের ধারণা, কর্মীদের সবসময় চোখের সামনে না রাখা গেলে তাঁরা ফাঁকি মারবেন।


এই অবস্থায় অতিমারি-পরবর্তী কাজের ধরন কেমন হবে তা এখনই বলা সম্ভব নয় বলে মনে করা হচ্ছে। আমেরিকায় এখনও পর্যন্ত ২৮ শতাংশ মানুষ অফিসে কাজে ফিরেছেন। ক্যাসেল সিস্টেমস নামে একটি সংস্থার তরফে ১০ মেট্রো এলাকায় করা সমীক্ষায় এমনই তথ্য উঠে এসেছে। যেহেতু ভাইরাসের সংক্রমণ এখনও লেগে রয়েছে, তাই অনেকেই এখনও অফিসে ফিরতে অনিচ্ছুক। তাছাড়া টিকাকরণের প্রক্রিয়া এখনও চলছে।


অফিসে-প্রত্যাবর্তনের ইচ্ছা নিয়ে মে মাসে আমেরিকায় একটি সমীক্ষা চালানো হয়। ১০০০ জন প্রাপ্তকবয়স্কের মত নেওয়া হয়। এর মধ্যে ৩৯ শতাংশই জানিয়েছেন, রিমোর্ট ওয়ার্ক নিয়ে কর্তৃপক্ষ নমনীয় মনোভাব না দেখালে তাঁরা কাজ ছেড়ে দেবেন। 


রিমোট ওয়ার্কের অপর একটি সুবিধাও রয়েছে। যাতায়াতের সমস্যা এবং যাতায়াত-খরচ বাঁচানোর মতো বিষয়। এনিয়ে  FlexJobs নামে একটি সংস্থা ২১০০ জনের উপর গত এপ্রিল মাসে একটি সমীক্ষা চালায়। তাতে এক তৃতীয়াংশ মানুষ জানিয়েছেন, রিমোট ওয়ার্কের ফলে তাঁরা প্রতি বছর অন্তত ৫ হাজার ডলার সঞ্চয় করতে সক্ষম। 


জিম্মি হেনড্রিক্স। নেদারল্যান্ডের ৩০ বছর বয়সি সফটওয়্যার ডেভেলপার। তিনি যে ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন সংস্থার হয়ে কাজ করতেন, তারা গত ফেব্রুয়ারি মাসে কর্মীদের অফিসে ফেরানোর উদ্যোগ নেয়। কিন্তু, তার আগেই ডিসেম্বর মাসে কাজ ছেড়ে দেন হেনড্রিক্স। তিনি বলেন, কোভিড চলাকালীন আমি বুঝতে পারলাম, বাড়ি থেকে কাজের বিষয়টি আমি কি না উপভোগ করছি।


এখন হেনড্রিক্স ফ্রিল্যান্স কাজ করছেন। এর পাশাপাশি বান্ধবীকে তাঁর আর্ট বিজনেস-এর কাজে সাহায্য করছেন। তাঁদের প্রতিদিন ২ ঘণ্টা যাতায়াতে ব্যয় হয়। এই যুগল এখন নিজেদের গাড়িটি বিক্রি করে দিয়ে বাইকে যাতায়াতের চিন্তাভাবনা করছেন। হেনড্রিক্সের মতে, এতে নিজের সময়ের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকবে। এর ফলে আমি বাড়িতে যা চাই তা-ই করতে পারব। একবার বাইরে থেকে হেঁটেও আসতে পারি।


যদিও সবার এভাবে বেছে নেওয়ার সুযোগ নেই। লক্ষ লক্ষ ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার রয়েছেন- যাঁরা হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে রোগীর যত্ন নেন, গৃহস্থের বাড়ির সামনে প্যাকেট নামিয়ে আসেন, মুদির দোকানে সামগ্রী মজুত রাখেন-এমন অনেকে। এইসব পেশার সঙ্গে জড়িতদের বেছে নেওয়ার মতো সুযোগ সেঅর্থে নেই।