Kerala News: চরম দারিদ্র থেকে মুক্ত, দেশের প্রথম রাজ্য হতে চলেছে কেরল, চিনের পর পৃথিবীতে এই দ্বিতীয় বার
Kerala Extreme Poverty Free State: প্রথম বার ভারতের কোনও রাজ্য এই উচ্চতায় পৌঁছতে চলেছে।

তিরুঅনন্তপুরম: দারিদ্র দূরীকরণের ইতিহাস রচনা করতে চলেছে কেরল। দেশের প্রথম ‘চরম দারিদ্রমুক্ত রাজ্য’ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে ‘গডস ওন কান্ট্রি’। আগামী ১ নভেম্বর কেরল রাজ্যের ৬৯তম প্রতিষ্ঠা দিবস। আর ওই দিনই কেরলকে ‘চরম দারিদ্রমুক্ত রাজ্য’ ঘোষণা করতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। (Kerala Extreme Poverty Free State)
প্রথম বার ভারতের কোনও রাজ্য এই উচ্চতায় পৌঁছতে চলেছে। পৃথিবীর মধ্যেও এই নিয়ে দ্বিতীয় বার ঘটছে এমনটি। এর আগে , ২০২০ সালে দেশের প্রত্যেকটি রাজ্যকে দারিদ্রমুক্ত ঘোষণা করে চিন। তিরুঅনন্তপুরমের সেন্ট্রাল স্টেডিয়ামে কমল হাসন, মামুট্টি, মোহনলালের মতো অতিথিদের উপস্থিতিতে এই কৃতিত্বের কথা গোটা পৃথিবীর সামনে তুলে ধরবেন বিজয়ন। বিধানসভার বিরোধী দলনেতা ভিডি সতীশনকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে অনুষ্ঠানে। (Kerala News)
কেরলের মন্ত্রী এমবি রাজেশ এবং ভি শিবকুট্টি এ নিয়ে সাংবাদিক বৈঠকও করেন। তাঁদের বক্তব্য, “এটি একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। ভারতের প্রথম রাজ্য কেরল, যারা চরম দারিদ্র ঘোচাতে সফল হয়েছে।”
চরম দারিদ্র বলতে এমন পরিস্থিতিকে বোঝানো হয়, যেখানে নিত্য প্রয়োজন মেটাতেও অক্ষম হন নাগরিকরা। না জোটাতে পারেন খাবার, না থাকে মাথার উপর ছাদ। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কাপড় কিছুই জোটানোর ক্ষমতা থাকে না।
On this Kerala Piravi, #Kerala will be declared as the first state in India without extreme poverty. This fulfills the very first decision the GoK made in 2021. Instead of a one-size-fits-all policy, the govt identified 64,006 vulnerable families and created specific micro-plans… pic.twitter.com/f3TqzhSta5
— Pinarayi Vijayan (@pinarayivijayan) October 25, 2025
বিশ্ব ব্য়াঙ্কের মাপকাঠি অনুযায়ী, দৈনিক ২.১৫ ডলার অর্থাৎ ১৮০ টাকার কমে যদি জীবন চলে, সেক্ষেত্রে ওই অবস্থা চরম দারিদ্র হিসেবে গণ্য হয়। ভারতের বহুমাত্রিক দারিদ্র সূচকের হিসেব যদিও আলাদা। NITI Aayog-এর মাপকাঠির মধ্যে পড়ে পুষ্টি, বাড়ি, পরিচ্ছন্নতা, শিক্ষা এবং প্রাথমিক পরিষেবা প্রাপ্তি।
২০২৩ সালে NITI Aayog যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করে, সেখানেই কেরলে দারিদ্রের হার ছিল তলানিতে। নাগরিকদের মাত্র ০.৫৫ শতাংশ দরিদ্র বলে গণ্য হন সেবার। এর পরই ছিল গোয়া ০.৮৪ শতাংশ, পুদুচ্চেরী ০.৮৫ শতাংশ।
কী করে এই অসাধ্য সাধন হল, তাও খোলসা করেছে বিজয়ন সরকার। ২০২১ সালে দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর তাদের তরফে চরম দারিদ্র দূরীকরণ প্রকল্পের সূচনা হয়, যার আওতায় তিন থেকে চার মাস ধরে ‘কদম্বশ্রী’ কর্মী, ASHA কর্মী এবং স্থানীয়দের দিয়ে সমীক্ষা চালানো হয়। ১৪টি জেলায় সমীক্ষা চালিয়ে ‘চরম দরিদ্র’ ৬৪ হাজার ৬টি পরিবার ও তার অংশ ১ লক্ষ ৩০ হাজার ৯ ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয় প্রথমে।
On August 7, 332 families will step into safe, dignified homes at Prathyasha in Muttathara, built under Punargaeham project, Kerala’s largest coastal rehabilitation effort. Just 500 metres from the sea, these homes offer security and hope. pic.twitter.com/TaqvJ0uRCb
— CMO Kerala (@CMOKerala) August 6, 2025
প্রত্যেক পরিবার ও ব্যক্তির প্রয়োজন বুঝে এর পর বাড়িঘর, স্বাস্থ্, জীবিকা এবং সমাজকল্যাণমূলক প্রকল্পের ব্যবস্থা করা হয়। রাজ্যস্তরের পরিবর্তে একেবারে তৃণমূল স্তরে সেই প্রকল্প যাতে পৌঁছে দেওয়া যায়, স্থানীয় প্রশাসনকে দায়িত্ব দেওয়া হয় তার। সরাসরি মুখ্য়মন্ত্রীর দফতরে কাজের রিপোর্ট জমা পড়ত। সহযোগিতা করত বাকি দফতর। বাড়িঘর, স্বাস্থ্য, জীবিকা খাতে ২০২৩-’২৪ অর্থবর্ষে ৮০ কোটি, ২০২৪-’২৫ অর্থবর্ষে খরচ হয় ৫০ কোটি টাকা।
কেরল সরকার জানিয়েছে, চরম দরিদ্র নাগরিকদের জন্য ৩ হাজার ৯১৩টি বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। জমি দেওয়া হয়েছে ১ হাজার ৩৩৮টি পরিবারকে। বাড়ি মেরামতের জন্য ৫ হাজার ৬৫১ পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। ২১ হাজার ২৬৩ জনকে রেশন কার্ডের মতো অন্যান্য নথি তৈরি করে দিয়েছে সরকার। যাযাবর শ্রেণি, ভূমিহীন মানুষকেও এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া হয়। আবারও যাতে দারিদ্রে পর্যবসিত না হন তাঁরা, সেই ব্যবস্থাও করা হয়েছে। আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগে চরম দারিদ্র দূরীকরণ সত্যিই সম্ভব হয়েছে কি না, দফায় দফায় তা যাচাই করেছে রাজ্য সরকার।
কেরল সরকার জানিয়েছে, ‘চরম’ দরিদ্র বলে চিহ্নিত নাগরিকদের মধ্যে ৪ হাজার ৪২১ জন মারা গিয়েছেন এবং ২৬১টি যাযাবর পরিবারের সন্ধান মেলেনি। ৪৭টি ডুপ্লিকেট এন্ট্রি পাওয়া যায়, অর্থাৎ একই নামের দু’বার অন্তর্ভুক্তি। চূড়ান্ত তালিকায় ৫৯ হাজার ২৭৭ পরিবার ছিল, যাঁদের চরম দারিদ্র থেকে তুলে আনা হয়েছে।


















