Fake IAS case:স্কুলে পড়ার সময় থেকেই অনর্গল মিথ্যে গল্প ফাঁদত দেবাঞ্জন, জানালেন ক্লাসফ্রেন্ড
পরে সে জানিয়েছিল, এবার সে চলচ্চিত্র পরিচালনার দিকে ঝুঁকেছে। নানান সময়ে বিভিন্ন পরিচালকের নাম করত সে। উল্লেখ্য, ওই বন্ধুর সঙ্গে দেবাঞ্জন একই কলেজে পড়াশোনা করত।
কলকাতা: ছাত্রাবস্থাতেই মিথ্যে কথা ও প্রতারণায় সিদ্ধহস্ত ছিল ভুয়ো ভ্যাকসিনকাণ্ডে ধৃত দেবাঞ্জন দেব। নিজেকে নামী পরিচালকদের সহকারী হিসেবে বন্ধুদের কাছে দাবি করত।এমনকী, তৈরি করেছিল কান চলচ্চিত্র উত্সবের পুরস্কারের নকলও। এমনই দাবি করেছেন ভুয়ো আইএএসের স্কুলের বন্ধু।
ওই বন্ধুর দাবি, পড়াশোনার সময় থেকেই বন্ধুদের মনোযোগ চাইত দেবাঞ্জন। বন্ধুমহলে মধ্যমণি হয়ে থাকার চেষ্টা করত সে। বন্ধুদের মনোযোগ টানতে নানান ধরনের মনগড়া গল্প ফাঁদত সে। তিনি জানিয়েছেন, দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়ার সময়ই তাঁর সঙ্গে দেবাঞ্জনের আলাপ হয়। তখন এক বিশিষ্ট সঙ্গীত পরিচালকের সহকারী হিসেবে কাজ করছে বলে দাবি করেছিল। পরে সে জানিয়েছিল, এবার সে চলচ্চিত্র পরিচালনার দিকে ঝুঁকেছে। নানান সময়ে বিভিন্ন পরিচালকের নাম করত সে। উল্লেখ্য, ওই বন্ধুর সঙ্গে দেবাঞ্জন একই কলেজে পড়াশোনা করত।
একটা সময় দেবাঞ্জন তাঁকে বলেছিল, তার চলচ্চিত্র কান চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কার পেয়েছে। আর এই তথাকথিত সাফল্য উদযাপনের জন্য বন্ধুদের বাড়িতেও ডেকেছিল দেবাঞ্জন। সেখানে পুরস্কারের নকল দেখিয়েছিল দেবাঞ্জন। কিন্তু এতে সন্দেহ যায়নি দেবাঞ্জনের বন্ধুদের।
কলেজের পড়াশোনা শেষ করারপর একটি জিনিস দিতে গিয়ে নীলবাতি লাগানো গাড়ি থেকে দেবাঞ্জনকে নামতে দেখেছিলেন ওই বন্ধু। কিন্তু সেভাবে সরকারি চাকরির জন্য পড়াশোনার জন্য তিনি কখনওই দেবাঞ্জনকে আগ্রহী দেখেননি। এভাবেই দেবাঞ্জনের আচার-আচরণ যথেষ্ট সন্দেহজনক মনে হত তাঁর। তিনি বলেছেন, তাঁদের বন্ধুমহলে জানা ছিল যে, দেবাঞ্জন মিথ্যে বলত। কিন্তু এখন দেবাঞ্জনের যে গুরুতর প্রতারনার ঘটনা সামনে এসেছে, তাতে রীতিমতো হতবাক দেবাঞ্জনের ওই বন্ধু।
উল্লেখ্য, প্রতারক, জালিয়াত, দুর্নীতিগ্রস্ত --- শব্দগুলো যেন সমার্থক হয়ে গেছে দেবাঞ্জন দেবের সঙ্গে।আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব থেকে গৃহশিক্ষক - কেউ তার প্রতারণার জাল থেকে মুক্তি পায়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। একে একে মুখ খুলছেন পরিচিতরা।
যেমন রঞ্জিৎ মল্লিক।একদা অ্যান্ড্রুজ কলেজের ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্টই ছিলেন দেবাঞ্জনের প্রাইভেট টিউটর।ওই প্রাইভেট টিউটরের দাবি, ২০১৩-তে কলেজে পড়ার সময়ই দেবাঞ্জনের প্রতারণার শিকার হন তিনি।
কী ভাবে প্রতারণা? রঞ্জিতের দাবি, প্রথমে একটি ডকুমেন্টারি বানিয়ে প্রথম তাঁর আস্থা অর্জন করেন দেবাঞ্জন। মাস্টারমশাইয়ের অভিনয়ের শখ।অভিযোগ, অভিনয়ের জন্য টালিগঞ্জে পরিচয়পত্র করিয়ে দেওয়ার নামে টিউটরের থেকে টাকা নেয় দেবাঞ্জন। ফাঁদে পা দেন রঞ্জিতের কয়েকজন সহকর্মীও।শিক্ষাগুরুর থেকে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে কার্যত ছাত্রাবস্থায় প্রতারণার হাতেখড়ি হয় দেবাঞ্জনের।
শুধু তাই নয়, তার জালিয়াতির হাত থেকে রেহাই পাননি কাছের লোকজনও। দেবাঞ্জনের বোনের ঘনিষ্ঠ বান্ধবীও প্রতারিত হয়েছেন।তাঁর বাবা-সহ দেবাঞ্জনের বোনের আরও কয়েকজন বান্ধবীর মা-বাবাকে কসবার ভুয়ো ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে ভুয়ো ভ্যাকসিন দেওয়ানো হয়। সবাই দেবাঞ্জনকে পুরসভার যুগ্ম কমিশনার বলে জানতেন। তাই অবিশ্বাসের কিছুই ছিল না।
অভিযোগ, শুধু বোনের বান্ধবী নন, দীর্ঘদিনের কর্মীর সঙ্গেও প্রতারণা করে দেবাঞ্জন।অপরিচিত কেউ নন। খুড়তুতো দাদা, বোনের বান্ধবী থেকে মাস্টারমশাই - কেউ পার পাননি দেবাঞ্জনের হাত থেকে।