এক্সপ্লোর
Advertisement
জোট করে ভুল করিনি: রাহুল
কলকাতা: ভোটের ফল প্রকাশের দিনই জোট নিয়ে কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেছিলেন, সিপিএমের সঙ্গে জোট করে জাতীয় রাজনীতিতে ‘বড় ভুল’ করল কংগ্রেস! কিন্তু দিদি এ কথা বললে কী হবে, রাহুল গাঁধী তা মানতে নারাজ। বরং দলের রাজ্য নেতৃত্বকে রাহুল জানিয়ে দিলেন, জোট গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে আক্ষেপের কোনও প্রশ্ন নেই। দল ঠিক পথেই হেঁটেছিল। হয়তো আরও আগে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বামেদের সঙ্গে সমন্বয় করে চললে আরও ভাল ফল করতে পারত জোট। তাই আগামী দিনে বামেদের সঙ্গে শুধু পশ্চিমবঙ্গে নয়, সংসদীয় রাজনীতিতেও সমঝোতা বজায় রেখে চলবে কংগ্রেস।
পশ্চিমবঙ্গে ‘শাসক দলের সন্ত্রাস মোকাবিলায়’ বাম-কংগ্রেস জোট জিইয়ে রাখার প্রস্তাবে দু’দিন আগেই সায় দিয়েছে সিপিএম পলিটব্যুরো। দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির কথায়, ‘‘সব বিরোধী দলের উপরেই যে হামলা চলছে, তা পলিটব্যুরো বুঝেছে। তাই বিরোধী সব শক্তিকেই একসঙ্গে লড়াই করতে হবে। যৌথ ভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে।’’ ইয়েচুরির ওই মন্তব্যের পর রাহুলের এ দিনের বক্তব্য রাজ্য ও জাতীয় রাজনীতির জন্য তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। বিধানসভার ভিতরে ও বাইরে জোটকে শক্তিশালী করার জন্য ইতিমধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অধীর চৌধুরী, সূর্যকান্ত মিশ্ররা। প্রদেশ নেতাদের মতে, অধীর, আব্দুল মান্নানদের সেই সিদ্ধান্তেই সিলমোহর দিলেন রাহুল তথা কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। দলের নিচুতলার কর্মীদের কাছে এই বার্তা দেওয়া জরুরিও ছিল। কারণ, বামেদের সঙ্গে জোট ধরে রাখার ব্যাপারে দলের অধিকাংশ নেতা-কর্মী আগ্রহী হলেও, কিছু মানুষের মধ্যে এখনও ধন্দ রয়েছে। রাহুলের বার্তার পর সেই ধোঁয়াশা আর থাকার কথা নয়।
কংগ্রেসের এক নেতার মতে, জাতীয় রাজনীতির জন্য রাহুলের এই মন্তব্য প্রাসঙ্গিক। কারণ, তিনি ভাল মতোই বুঝতে পারছেন পশ্চিমবঙ্গে সরকার চালানোর জন্য তৃণমূল এখন বিজেপির সঙ্গে সমন্বয় করেই চলবে। সংসদেও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে মোদী সরকারের পাশে থাকবে তৃণমূল। তাই জাতীয় স্তরে বামেদের সঙ্গে নিয়ে চলতে
হবে কংগ্রেসকে।
বামেদের সঙ্গে জোট গড়ার প্রস্তাব যে রাহুল নিজেই দিয়েছিলেন, এমনটা নয়। দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি অংশ বরং বামেদের হাত না ধরে তৃণমূলের সঙ্গেই সমঝোতার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। রাহুল নিজেও রাজ্য নেতাদের জানিয়েছিলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাঁকে বামেদের সঙ্গে জোট না করার পরামর্শ দিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত রাজ্যের নিচুতলার কর্মীদের থেকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে জোট গড়ার দাবি জোরালো হয়ে ওঠে। সেই দাবিকেই স্বীকৃতি দেন কংগ্রেসের সহ-সভাপতি। ভোট চলাকালীনও রাজ্যের নেতারা তাঁকে বারবার
আশ্বস্ত করেছিলেন যে, উত্তরোত্তর পরিস্থিতি যে দিকে এগোচ্ছে, তাতে জোট ক্ষমতায় এলেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।
কিন্তু দেখা গেল, যতটা তাঁরা আশা করেছিলেন, টেনেটুনে তার অর্ধেক আসনে জিতেছে জোট। এই অবস্থায় বুধবার ১২ নম্বর তুঘলক লেনে রাহুলের বাসভবনে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতা ওমপ্রকাশ মিশ্র। রাহুলকে তিনি বলেন, জোটের সম্ভাব্য ফল হিসেবে যে ধারণা আপনাকে দেওয়া হয়েছিল, সেই মতো ফল হয়নি। এ জন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী। দলীয় সূত্রের খবর, রাহুল তাঁকে বলেন, ক্ষমা চাওয়ার মতো কিছু হয়নি। এটা ঠিকই যে আশানুরূপ ফল হয়নি। কিন্তু কংগ্রেস কয়েকটি হলেও আগের থেকে আসন বাড়াতে পেরেছে। দীর্ঘদিন বাদে দক্ষিণবঙ্গেও বেশ কিছু আসন পেয়েছে কংগ্রেস। তা ছাড়া বিরোধী দলগুলির উপরে রাজ্যে শাসক শিবিরের যে হামলা চলছে, তার মোকাবিলার জন্যও জোট ধরে রাখা জরুরি।
সূত্রের মতে, শুধু নিজ-নিজ দলের নেতাদের বার্তা দেওয়া নয়, জোট অটুট রাখার ব্যাপারে রাহুল-ইয়েচুরি সবিস্তার আলোচনাও হয়েছে। বাম-কংগ্রেস শীর্ষ নেতাদের সেই আলোচনার প্রভাবও এখন ভাল মতোই দেখা যাচ্ছে জমিতে। যেমন, নদিয়ার শান্তিপুরে বুধবার বিজয় উৎসব করেন জোটের নেতারা। সেখানে তৃণমূল প্রার্থী অজয় দে-কে হারিয়েছেন জোটের তথা কংগ্রেসের প্রার্থী অরিন্দম ভট্টাচার্য। সেই সাফল্য উদ্যাপনের মাধ্যমে জোটের বার্তা দিতেই এ দিন শান্তিপুরে এক সভার আয়োজন করা হয়। আব্দুল মান্নান, শঙ্কর সিংহ, অরিন্দম ভট্টাচার্যদের সঙ্গে ওই অনুষ্ঠানে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হাজির ছিলেন সিপিএমের রাজ্যসভা-সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় ও দলের জেলা সম্পাদক সুমিত দে।
খবর (News) লেটেস্ট খবর এবং আপডেট জানার জন্য দেখুন এবিপি লাইভ। ব্রেকিং নিউজ এবং ডেলি শিরোনাম দেখতে চোখ রাখুন এবিপি আনন্দ লাইভ টিভিতে
আরও দেখুন
Advertisement
ট্রেন্ডিং
Advertisement
Advertisement
সেরা শিরোনাম
কলকাতা
খবর
খবর
জেলার
Advertisement