কসাইয়ের জন্য বাজার থেকে গরু কেনাবেচা নিষিদ্ধ, ঘোষণা কেন্দ্রের
নয়াদিল্লি: কসাইয়ের উদ্দেশ্যে খোলা বাজার থেকে গরু কেনাবেচার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করল কেন্দ্র। এর ফলে মাংস ও চামড়ার ব্যবসায় জোর ধাক্কা লাগার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি, গরুর শিং রং করা বা তা সাজানোও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
শুক্রবার, কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রী হর্ষবর্ধন জানান, নতুন নিয়ম ‘যথাযথ ও নির্দিষ্ট’। তা গবাদি পশু কেনাবেচার বাজারে গরু বিক্রির ওপর নিয়ন্ত্রণ আনতে সক্ষম হবে। তিনি জানান, এই নিয়ম কেবলমাত্র পশু বাজার, বাজেয়াপ্ত করা গরুর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। মন্ত্রকের এক শীর্ষ আধিকারিক জানান, পশুকল্যাণের হিতেই এই নতুন নিয়ম জারি করা হয়েছে। কেন্দ্রের নির্দেশিকা অনুযায়ী, নতুন নিয়ম গরু-প্রজাতি (গাভী, ষাঁড়, মোষ, বকনা-বাছুর) ও উটের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
শুধু তাই নয়, কেন্দ্রের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, রাজ্য সীমান্ত থেকে ২৫ কিলোমিটার ও দেশের সীমান্ত থেকে ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনও জায়গায় পশু-বাজার চালু করা যাবে না। নির্দেশিকা অনুযায়ী, এখন থেকে পোল্ট্রি ছাড়া কোনও পশুকে ওজন করার জন্য মাটি থেকে উঁচু জায়গায় তোলা যাবে না, টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া যাবে না অথবা উঁচুতে বেঁধে বা ঝুলিয়ে রাখা যাবে না।
নির্দেশিকায় এ-ও বলা হয়েছে, পশু বাজার কমিটির একজন সদস্য সচিবকে নিশ্চিত করতে হবে যে, কোনও অবস্থাতেই বাছুরকে যেন বাজারে নিয়ে আসা না হয়। পাশাপাশি, মালিকের স্বাক্ষরিত অনুমতি ছাড়া কেউ গরুকে পশু বাজারে নিয়ে আসতে পারবে না। বাজারে ঢোকার মুহূর্তে তাকে সেই অনুমতিপত্র দেখাতে হবে। অনুমতিপত্রের সঙ্গে পশুর আসল মালিকের নাম, ঠিকানা, ছবিও আনতে হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে সরকারি নির্দেশিকায়।
অতীতে, গো-হত্যা ও গো-মাংস বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে হিংসা দেখা দিয়েছে। তাই এবারে কেন্দ্র আরও সতর্ক। সরকার চায় না, গরুদের চিহ্নিতকরণের জন্য কোনওপ্রকার নির্মম ও ক্ষতিকারক পন্থা অবলম্বন করা যাবে না। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, গরুর শিং রং করা বা মোষের কান কাটা অথবা গায়ে ছেঁকা দিয়ে চিহ্ন আঁকা চলবে না। একইভাবে, গরুকে অবাঞ্ছিত সজ্জা পরানোর ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
কেন্দ্রের এই নির্দেশিকাকে তীব্র আক্রমণ করেছে কেরলের শাসক ও বিরোধী দল। প্রসঙ্গত, কেরলে গো-মাংসের বড় চাহিদা রয়েছে। সিপিএম সরকারের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন জানান, এটা ঠিক নয়, সরকার ঠিক করে দেবে কে কী খাবে। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে কেন্দ্র হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান বিপন্ন করছে। তাদের দাবি, সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কেন্দ্র রাজ্যগুলির সঙ্গে আলোচনা করতেই পারত। বিরোধী দলনেতা রমেশ চেন্নিথালা জানান, এইভাবে মোদী সরকার সাংবিধানিক অধিকার খর্ব করার চেষ্টা করছে। তাঁর দাবি, এধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে মোদী সরকার নিজেদের ফ্যাসিস্ত পরিচয় দিচ্ছে।
অবশ্য, এই নিয়মের জাঁতাকলে কৃষকদের যাতে না কোনও অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়, তার জন্য বিশেষ সংস্থান রয়েছে কেন্দ্রের নির্দেশিকায়। সেখানে বলা হয়েছে, যিনি গরু কিনছেন, তিনি যদি কৃষিজীবী হন, অঙ্গীকার করেন যে ছ’মাস সেই পশু বিক্রি করবেন না এবং তার (পশুর) পরিবহণের যথাযথ নিয়ম মানবেন, তাহলে কোনও সমস্যা নেই। যদিও, তা খতিয়ে দেখবে কমিটি।