এক্সপ্লোর
মসুলে পাহাড়ের নিচে পোঁতা ছিল ৩৯ ভারতীয়র মৃতদেহ, ডিএনএ পরীক্ষায় শনাক্তকরণ, বিস্তারিত জানালেন সুষমা স্বরাজ
![মসুলে পাহাড়ের নিচে পোঁতা ছিল ৩৯ ভারতীয়র মৃতদেহ, ডিএনএ পরীক্ষায় শনাক্তকরণ, বিস্তারিত জানালেন সুষমা স্বরাজ sushma swaraj tells in rajya sabha how 39 indians abducted by isis in iraqs mosul were killed মসুলে পাহাড়ের নিচে পোঁতা ছিল ৩৯ ভারতীয়র মৃতদেহ, ডিএনএ পরীক্ষায় শনাক্তকরণ, বিস্তারিত জানালেন সুষমা স্বরাজ](https://static.abplive.com/wp-content/uploads/sites/3/2018/03/20171600/index.php_36.jpg?impolicy=abp_cdn&imwidth=1200&height=675)
নয়াদিল্লি: ২০১৪-তে ইরাকের মসুল থেকে নিখোঁজ ৩৯ ভারতীয়কে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে জঙ্গি সংগঠন আইএসআইএস। বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ আজ রাজ্যসভায় জানিয়েছেন, ডিএনএ পরীক্ষায় এই হত্যাকাণ্ডের প্রমাণ মিলিছে। মৃত ৩৯ ভারতীয়র মধ্যে ৩১ জন পঞ্জাবের, ৪ জন হিমাচল প্রদেশের এবং বিহার ও পশ্চিমবঙ্গে দুইজন করে বাসিন্দা রয়েছেন। বিদেশমন্ত্রী জানিয়ছেন, শীঘ্রই মৃত ভারতীয়দের দেহ দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।
বিদেশমন্ত্রীর বয়ানের পর কংগ্রেস সাড়ে তিন বছর ধরে সরকারের বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের অভিযোগ করেছে।
স্বরাজ এদিন ৩৯ ভারতীয়র হত্যার কথা জানাতে গিয়ে বলেন, এই ঘটনায় হরজিত মাসিহ যে কাহিনী শুনিয়েছিলেন তা সত্য ছিল না। মাসিহ দাবি করেছিলেন, তাঁর সামনেই অপহৃত সব ভারতীয়কে হত্যা করা হয়েছিল। এই দাবি যে সত্য নয়, তার প্রমাণ রয়েছে।
স্বরাজ বলেছেন, তিনি বিদেশ প্রতিমন্ত্রী ভিকে সিংহকে মসুলের সংশ্লিষ্ট কোম্পানির সঙ্গে কথা বলতে বলেছিলেন। ওই কোম্পানিতেই নিহত ভারতীয়রা কাজ করতেন। মসুলে গিয়ে সিংহ কোম্পানির সঙ্গে কথা বলেন। কোম্পানি জানায়, তাদের কাছে ৪০ জন ভারতীয় কাজ করতেন। বাংলাদেশিরাও কাজ করতেন। আইএস যখন মসুল দখল করতে শুরু করে তখন কোম্পানি সবাইকে সেখান থেকে চলে যেতে বলে। এরপর ইরাক ও অন্য দেশগুলির সমস্ত নারগিকরাই কোম্পানি ছেড়ে চলে যায়। কিন্তু ভারতীয় ও বাংলাদেশি শ্রমিকরা কাজ ছাড়েননি।
ভি কে সিংহকে হোটেলের এক কর্মচারী জানান, একদিন যখন ভারতীয় ও বাংলাদেশি নাগরিকরা এখানে খেতে আসছিলেন, তখন তাঁদের দেখে আইএসের লোকেরা পরিচয় জানতে চায়। এরপর আইএসের লোকেরা জানায়, তাঁরা আর এখানে থাকবে না এবং তাঁদের কাপড়ের কারখানায় নিয়ে যেতে বলা হয়। সবাইকে সেখানেই নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ভারতীয় ও বাংলাদেশিদের আলাদা আলাদা রাখার কথা বলে আইএস।
একদিন আইএসের লোকের বাংলাদেশিদের হরবিলে পাঠাতে বলে। হোটেলের ওই কর্মচারীকে সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়। ওই কর্মীরা দাবি, তিনি হরজিত মাসিহকে বাংলাদেশিদের সঙ্গেই মুসলিম নাম দিয়ে হরবিলে ছেড়ে আসেন।
স্বরাজ জানিয়েছেন, হরবিল থেকে হরজিতের সঙ্গে যখন তাঁর কথা হয়, তখন হরজিত কীভাবে সেখানো পৌঁছলেন, তা জানাননি। তিনি শুধু তাঁকে এখান থেকে বাইরে নিয়ে যাওয়ার আর্জি জানাচ্ছিলেন।
পরে হরজিত মনগড়া কাহিনী শোনান। তিনি দাবি করেন, সমস্ত ভারতীয়কে তাঁর সঙ্গে জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে গুলি করা খুন করা হয়। তাঁর পায়ে গুলি লাগায় কোনওক্রমে বেঁচে যান।
আসলে হরজিত আলি নামে পরিচয় দিয়ে হরবিলের বাইরে আসেন। জঙ্গিরা সবদিন বন্দী ভারতীয় শ্রমিকদের মাথা গুণত। হরজিত যাওয়ার পর সেখানে ৪০ জনের মধ্যে ৩৯ জন ছিলেন। আইএস এই ৩৯ ভারতীয়দের অন্য একটি জায়গায় নিয়ে যায়। কোম্পানির মালিক জানিয়েছেন, ওই ভারতীয়দের বদুশে নিয়ে যাওয়া হয়।তারপর থেকে ওই ভারতীয়দের কোনও হদিশ কোম্পানির কাছে ছিল না।
হরজিত কোনওভাবে ইরাক থেকে পালিয়ে ভারতে ফিরে আসেন। তিনি জানান, কীভাবে ৫০ বাংলাদেশি ও ৪০ ভারতীয়কে কোম্পানির বাসে উঠিয়ে একটি পাহাড়ি এলাকায় নিয়ে গিয়ে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়।
কোম্পানির সঙ্গে কথাবার্তার পর ইরাকের সরকারি আধিকারিকদের সঙ্গে ভারত সরকারের কথা হয়। সেখানে বেশ কিছুদিন ধরে ভারতীয়দের সন্ধানে তল্লাশি চলে। সেখানে এক ব্যক্তি জানান যে, একটি পাহাড়ে অনেক লোককে পুঁতে দেওয়া হয়েছে। সেই কথার ভিত্তিতে এই পাহাড়ি এলাকায় রেডার দিয়ে তল্লাশি চালিয়ে মৃতদেহের সন্ধান পাওয়া যায়। এরপর পাহাড়ে খনন করা হয়। এতে প্রাথমিকভাবে দুটি মৃতদেহ পাওয়া যায়। লম্বা চুল, কড়া ও জুতো পাওয়া যায়। এরপর অন্য মৃতদেহগুলিও খুঁড়ে বের করা হয়। সব কটি মৃতদেহকে বাগদাদে নিয়ে আসা হয়। সেখানে মৃতদেহের পরীক্ষা শুরু হয়।একটি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তারা ডিএনএ নমুনা চেয়ে পাঠায়। সেই মতো পঞ্জাব, হিমাচল, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছ থেকে ডিএনএ নমুনা চাওয়া হয় এবং তা বাগদাদে পাঠানো হয়।
সন্দীপ নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে ডিএনএ-র মিল প্রথমে পাওয়া যায়।এরপর বাকি মৃতদেহগুলির ডিএনএ-ও মিলে যায়। ৩৯ মৃতদের ডিএনএ ৭০ শতাংশ মিল পাওয়া যায়। ডিএনএ-র মিলের সঙ্গে বড় প্রমাণ আর হয় না।
এ ব্যাপারে ভি কে সিংহ প্রচুর পরিশ্রম করেছেন বলেও জানিয়েছেন স্বরাজ। মৃতদেহগুলি ভারতে নিয়ে আসার ব্যাপারে তিনি ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী। বিশেষ বিমানে ভিকে সিংহ ইরাক যাবেন এবং মৃতদেহগুলি দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।
নিহত ৩৯ ভারতীয়র মধ্যে একজন মনজিন্দর সিংহর বোন গুরপিন্দর কউর বলেছেন, এ ব্যাপারে তাঁকে আগে কোনও তথ্য দেওয়া হয়নি। তিনি বলেছে, চার বছর আগে বিদেশমন্ত্রী বলেছিলেন যে, নিখোঁজরা বেঁচে আছেন। অন্য কোনও খবরে বিশ্বাস করার প্রয়োজন নেই। সেই কথামতো ভরসায় ছিলেন তাঁরা। কিন্তু এরপর তাঁদের আর কোনও খবর দেওয়া হয়নি। সংসদে বিদেশমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে সব কথা তাঁরা জানতে পেরেছেন। কউর নিখোঁজদের মৃত্যু সম্পর্কে তথ্যপ্রমাণ দেওয়ার দাবি করেছেন।
খবর (News) লেটেস্ট খবর এবং আপডেট জানার জন্য দেখুন এবিপি লাইভ। ব্রেকিং নিউজ এবং ডেলি শিরোনাম দেখতে চোখ রাখুন এবিপি আনন্দ লাইভ টিভিতে
আরও দেখুন
Advertisement
ট্রেন্ডিং
Advertisement
Advertisement
সেরা শিরোনাম
ব্যবসা-বাণিজ্যের
ব্যবসা-বাণিজ্যের
ব্যবসা-বাণিজ্যের
ব্যবসা-বাণিজ্যের
Advertisement
![ABP Premium](https://cdn.abplive.com/imagebank/metaverse-mid.png)