(Source: ECI/ABP News/ABP Majha)
Jammu And Kashmir: বয়স মাত্র চার বছর, তাতেই লাগাতার নাশকতা-হামলা, কাশ্মীরে গজিয়ে ওঠা দেশীয় জঙ্গি সংগঠনই এখন মাথাব্যথার কারণ
TRF: ২০১৯ সালে প্রতিরোধ সংগঠন হিসেবে গড়ে ওঠে TRF. তার পর থেকে গত চার বছরেই একাধিক হামলার নেপথ্যে তাদের সংযোগ উঠে এসেছে।
নয়াদিল্লি: ফের রক্তাক্ত হল উপত্যকা। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযানে গিয়ে শহিদ হলেন সেনা ও পুলিশের তিন আধিকারিক। (Jammu And Kashmir) তবে জইশ-ই-মহম্মদ, লস্কর-ই-তৈবা বা হিজবুল মুজাহিদিনের মতো কুখ্যাত জঙ্গি সংগঠন নয়, এই হামলার নেপথ্যে রয়েছে মাত্র চার বছর আগে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা দ্য রেসিসট্যান্স ফোর্স (TRF). সংগঠনটি গড়ে ওঠার পর থেকে এতদিন মূলত কাশ্মীরি পণ্ডিতদেরই নিশানা করে এসেছে তারা। এবার সরাসরি নিরাপত্তাবাহিনী এবং পুলিশের সঙ্গে সশস্ত্র সংঘর্ষে জড়াল। আর তাতেই ফের রক্তাক্ত হল উপত্যকা। (The Resistance Front )
২০১৯ সালে প্রতিরোধ সংগঠন হিসেবে গড়ে ওঠে TRF. তার পর থেকে গত চার বছরেই একাধিক হামলার নেপথ্যে তাদের সংযোগ উঠে এসেছে, বিশেষ করে উপত্যকার সংখ্যালঘু কাশ্মীরি পণ্ডিতদের বেছে বেছে নিশানা করতে দেখা গিয়েছে। চলতি বছরে বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইনে (UAPA) TRF-কে নিষিদ্ধ করে কেন্দ্র। বর্তমানে জম্মু ও কাশ্মীরে সেনা এবং পুলিশের মাথাব্যথার প্রধান কারণ এই TRF.
মাত্র চার বছর আগে গড়ে ওঠে, TRF এখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে উপত্যকায়
বুধবার কাশ্মীরের অনন্তনাগে সেনা এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে জঙ্গিদের, তাতে মেজর আশিস ধোনাক, ১৯ রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের কর্নেল মনপ্রীত সিংহ এবং উপত্যকার পুলিশের ডিএসপি হুমায়ুন ভাট শহিদ হন। এই সংঘর্ষের নেপথ্যেও TRF সংযোগ উঠে এসেছে। TRF জঙ্গিরা এলাকায় লুকিয়ে রয়েছে বলে খবর পেয়েই যৌথ অভিযানে বেরিয়েছিল সেনা এবং পুলিশ।
নিজেদের প্রতিরোধ সংগঠন বলে দাবি করলেও, গোয়েন্দাদের মতে, TRF স্বাধীন সংগঠন হিসেবে সামনে থেকে নাশকতা চালালেও, আসলে পিছন থেকে তাদের মদত দিচ্ছে পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈবা। পাকিস্তান সরকারের মদতে বছরের পর বছর ধরে উপত্যকায় নাশকতা চালিয়ে আসছে লস্কর। ২০১৯ সালে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা খর্ব হওয়ার পর, নিরাপত্তা আরও আঁটোসাটো করা হয়। তাতে লস্করের সক্রিয়তা কমেছে উপত্যকায়। তাই বলে মোটেই হাত তুলে নেয়নি তারা। বরং নিজেরা পিছিয়ে গিয়ে, এগিয়ে দিয়েছে TRF-কে। টাকা-পয়সা, অস্ত্রশস্ত্র জুগিয়ে সবরকম ভাবে সহযোগিতা করছে।
চলতি বছরেরই মার্চ মাসে এ নিয়ে রাজ্যসভায় বিবৃতি দেয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। সেখানে বলা হয়, "TRF আসলে একটি প্রক্সি সংগঠন। লস্কর-ই-তৈবার মদতপুষ্ট। ২০১৯ সালে এই সংগঠনটি গড়ে ওঠে। সেনাকর্মী থেকে নিরীহ সাধারণ নাগরিকের হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত তারা। সীমান্তের ওপার থেকে অস্ত্রশস্ত্র আমদানি করে এই সংগঠন। সংগঠনে নতুন জঙ্গি নিয়োগ থেকে অনুপ্রবেশ, মাদক পাচারেও সীমান্তের ওপারের জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলে।"
কেন্দ্রীয় সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পর দিনই একটি 'হিটলিস্ট' প্রকাশ করে TRF. উপত্যকার শিখদেরও হুমকি দেয় তারা। শিখ সম্প্রদায় থেকে যাঁরা স্পেশাল পুলিশ অফিসার হিসেবে কর্মরত, তাঁরা রাষ্ট্রীয় স্বয়ম সেবক সঙ্ঘের সদস্য বলে গন্য হবেন এবং নিস্তার পাবেন না বলে হুঁশিয়ারি দেয়। সংগনের লোকবল বাড়াতে সোশ্যাল মিডিয়াতেও তারা জোর প্রচার চালাচ্ছে বলে খবর। মগজধোলাই করে অল্পবয়সি ছেলেমেয়েদের সংগঠনে শামিল করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
পাকিস্তান থেকেই অর্থ, অস্ত্রশস্ত্র পাচ্ছে TRF, দাবি গোয়েন্দাদের
২০১৯ সালের অগাস্ট মাসে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার জম্মু ও কাশ্মীরের জন্য সংরক্ষিত বিশেষ মর্যাদা খর্ব করে। জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখকে ভেঙে দু'টি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করা হয়। এর প্রতিবাদস্বরূপই গড়ে ওঠে TRF. শুধু লস্কর নয়, সীমান্তের ওপার থেকে পাকিস্তান সেনা, দেশের গুপ্তচর সংস্থা ISI-ও TRF-কে মদত জোগাচ্ছে বলে দাবি ভারতীয় গোয়েন্দাদের।
গোয়েন্দাদের দাবি, সীমান্তের ওপার থেকে ভারতের বুকে নাশকতামূলক কাজকর্মে মদত জোগানোয় বরাবরই পাকিস্তানকে কাঠগড়ায় তুলেছে দিল্লি। তার জন্য আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার খাঁড়াও ঝুলছে পাকিস্তানের উপর। সন্ত্রাসী কাজকর্মে অর্থের জোগানে নজরদারি চালানো সংস্থা ফাইনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (FATF) পাকিস্তানকে ধূসর তালিকায় রেখেছে। তাই লস্করের মতো কুখ্যাত জঙ্গি সংগঠন এবং হাফিজ সইদের মতো জঙ্গিনেতাদের সঙ্গে নিজেদের সম্পর্কের কথা অস্বীকার করতে চাইছে। তাদের সঙ্গে কোনও সংযোগ উঠে আসুক, তা চাইছে না ইসলামাবাদ। তাই কাশ্মীরের যাবতীয় নাশকতা আসলে ভারতের অন্দরে গড়ে ওঠা সংগঠনের দ্বারাই ঘটানো বলে তুলে ধরতে চাইছে তারা। যে কারণে TRF-এর এত বাড়বাড়ন্ত এবং প্রত্যেক হামলার দায়ই ওই সংঘটন দাবি করছে বলে মত গোয়েন্দাদের।
জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ ২০২২ সালের যে বার্ষিক রিপোর্ট জমা দেয়, সেই অনুযায়ী, ওই বছরই শুধুমাত্র উপত্যকায় ৯০টি অভিযানে ১৭২ জন জঙ্গিকে নিকেশ করা হয়। এর মধ্যে ৪২ ছিল বিদেশি নাগরিক। তবে উদ্বেগের বিষয় হল যে, নিহত জঙ্গিদের মধ্যে ১০৮ জনই TRF-এর সদস্য ছিল। উপত্যকায় ২০২২ সালে যে ১০০ জন জঙ্গিদলে যোগদান করে, তার মধ্যে ৭৪ জনই TRF-এ যোগ দিয়েছে বলে জানিয়েছে উপত্যকার পুলিশ।