মিশন মুর্শিদাবাদ, কৌশলের রাজনীতিতেই অধীর নিয়ে চুপ দিলীপ
সরকার গড়ার ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছতে গেলে ২২টি আসনের মুর্শিদাবাদ জেলাকে একেবারে ছেড়ে রাখলে হবে না। কিছু আসনে পদ্ম ফোটাতেই হবে। তাই বিজেপির এখন টার্গেট ‘মিশন মুর্শিদাবাদ’৷

উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, বহরমপুর: সে এক ভয়ঙ্কর ঝড়। আমফানের থেকে কোনও অংশে কম না। গোটা উত্তরবঙ্গ নাড়িয়ে দিয়েছিল সেই ঝড়। লোকসভা নির্বাচনে দার্জিলিং থেকে মালদা, গেরুয়া ঝড়ে কার্যত লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছিল তৃণমূল, কংগ্রেস আর বামেরা। অধিকাংশ আসনেই প্রায় অধিকাংশ আসনেই ছিনিয়ে নিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু সেই ঝড় এসে থমকে যায় মুর্শিদাবাদে। বহরমপুর আসনটি ধরে রাখেন অধীর চৌধুরী। মুর্শিদাবাদ লোকসভা আসনও কংগ্রেসের হাত থেকে ছিনিয়ে নেয় তৃণমূল কংগ্রেস। জঙ্গিপুর যায় তৃণমূলের দখলে।
বিধানসভা নির্বাচনের আগে তাই মুর্শিদাবাদে কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেসের ঘর ভাঙতে রীতিমত মরিয়া বিজেপি। কারণ অঙ্কের হিসেব বলছে, যদি ধরেও নেওয়া যায় উত্তরবঙ্গে এবারও ভাল করবে বিজেপি, দক্ষিণবঙ্গে কতটা ভাল হবে তা নিয়ে এখনও দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে আছে দল। ফলে সরকার গড়ার ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছতে গেলে ২২টি আসনের মুর্শিদাবাদ জেলাকে একেবারে ছেড়ে রাখলে হবে না। কিছু আসনে পদ্ম ফোটাতেই হবে। তাই বিজেপির এখন টার্গেট ‘মিশন মুর্শিদাবাদ’। গত দু’দিন মুর্শিদাবাদে কাটালেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। প্রথমদিন বহরমপুরে সভা। সাম্প্রতিককালে বিজেপির সভাতে লোক হচ্ছে সেই তুলনায় কম, তবে অতীতের তুলনায় ভাল। আশপাশের গ্রাম থেকে বেশ কিছু মানুষকে সভায় এনেছিলেন বিজেপি নেতারা। সভা শেষ করেই জেলার নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসে পড়লেন দিলীপ ঘোষ। কার্যত হাতে ধরে বুঝিয়ে দিলেন কী ভাবে জনসংযোগ বাড়াতে হবে। রাত ১১টা পর্যন্ত চলল সেই মিটিং।

সোমবার সকাল সাতটা। হাড় কাঁপুনি ঠান্ডা। সঙ্গে ঘন কুয়াশা। তারই মধ্যে সাত সকালে বেড়িয়ে পড়লেন তিনি। প্রায় আট কিলোমিটার রাস্তা পায়ে হেঁটে ঘুরে বেড়ালেন। ঘুম থেকে উঠে অবাক চোখে গ্রামবাসীরা দেখলেন দিলীপ ঘোষের মতো নেতা দাঁড়িয়ে রয়েছেন ঘরের সামনে। কুশল বিনিময় । কেমন আছেন , কেমন চলছে দিন-কাল। অল্প-স্বল্প-গল্প। তারপর আবার এগিয়ে যাওয়া । সঙ্গে বিজেপি কর্মীদের জয় শ্রীরাম স্লোগান। জয় শ্রীরাম স্লোগানে এদিন ঘুম ভাঙলো গ্রামবাসীদের। গ্রামের এক প্রান্তে ছোট্ট একটা মন্দির। তবে গ্রামবাসীরা মনে করেন খুব জাগ্রত। সেখানে প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে পুজো দিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। ততক্ষণে লোক জমতে শুরু করেছে। মন্দিরের সামনেই এবার বসলেন চায়ের কাপ হাতে জমাটি আড্ডায়। কেন বিজেপিকে ভোট দিতে হবে, কেন তৃণমূলকে হারানো প্রয়োজন ,কেন গ্রামের গরিব মানুষদের বন্ধু বিজেপি, আলোচনায় উঠে এলো সেসব কথা । কখনও রসিকতা, কখনও বা নতুন দিনের স্বপ্ন দেখানো । গ্রামের মানুষরা যে কথা শুনতে ভালোবাসেন ঠিক সেই ভাষাতেই তাদের সঙ্গে আলাপচারিতা। এরপর সেখান থেকে চললেন আরও একটা মন্দিরে পুজো দিতে। গ্রামের এক কৃষকের বাড়িতে দুপুরের খাবার খেয়ে নবগ্রামে জনসভা । সেখানেও মানুষের ভিড়। তৃণমূলকে আক্রমণ কিন্তু অধীর চৌধুরী আর কংগ্রেস সম্পর্কে মুখে কুলুপ। একটা কথা বললেন না কৌশলী দিলীপ ঘোষ। ‘শত্রুর শত্রু আমার মিত্র।’ কংগ্রেসকে দুর্বল করে তৃণমূলকে সুবিধা করে দেওয়ার কোন মানেই হয়না মুর্শিদাবাদের বুকে। তাই কংগ্রেস সম্পর্কে স্পিকটি নট।
রাজনৈতিক মহলের সকলেই জানেন যে অঙ্কে বরাবরই ভাল বিজেপির নেতারা। তারা যা করেন, তারা যা বলেন, তার পিছনে অবশ্যই একটা অঙ্ক থাকে। অঙ্ক ছাড়া এগোন না দিলীপ ঘোষরা। বিধানসভা ভোটের আগে অঙ্ক কষে তৃণমূলের ঘর ভাঙানো, অঙ্ক কষে তৃণমূলের নেতাদের টার্গেট করা, অঙ্ক কষে বাম এবং কংগ্রেস সম্পর্কে চুপ থাকা। অঙ্ক কষে রাজ্যে নেতারা পাঠিয়ে দিচ্ছেন দিল্লিতে হেডমাস্টারের কাছে। সেখান থেকে খাতা দেখে আসার পর সেই মতন ভাবে পথ চলা। তবে অন্য রাজ্যগুলোতে অংক মিললেও পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক অঙ্ক কতটা মিলবে তা অবশ্য ভবিষ্যতে বলবে।






















